গত ১লা আগস্ট স্থানীয় সময় ৬টা ১৮ মিনিটে আল কায়দার শীর্ষ নেতা জাওয়াহিরি মার্কিন বিমান বাহিনীর এমকিউ-৯ রিপার কমব্যাট ড্রোন থেকে ছোড়া কুখ্যাত হেলফায়ার (এজিএম-১১৪ আর৯এক্স) মিসাইলের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে লক্ষ্য করে ২টি শর্ট রেঞ্জের হেলফায়ার মিসাইল ফায়ার করা হয় মার্কিন কমব্যাট ড্রোন থেকে।

তাছাড়া ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কাছে ইরানের আইআরজিসি বিপ্লবী বাহিনীর প্রধান কাসেমি সোলাইমানিকে মার্কিন বিমান বাহিনীর এমকিউ-৯ রিপার কমব্যাট ড্রোন থেকে সেই কুখ্যাত হেলফায়ার মিসাইল হীটের মাধ্যমে হত্যা করে। এই এমকিউ-৯ রিপার কমব্যাট ড্রোন কাতারে অবস্থিত কোন গোপন মার্কিন সামরিক ঘাটি থেকে অপারেট করা হয়।

ইরানের আইআরজিসি বাহিনী কাসেম সোলাইমানীর হত্যার বদলা হিসেবে বিগত দুই বছরে পর্যায়ক্রমে ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাটিতে প্রায় শতাধিক ব্যালেস্টিক মিসাইল ছুড়লেও আজ পর্যন্ত দুই একটি সামরিক যান ধ্বংস হওয়া তো দূরের কথা একজন সেনা হতাহত হওয়ার কোন নজির খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হেলফায়ার (এজিএম-১১৪) একেবারে স্বল্প পাল্লার ও হালকা ওজনের মিসাইল। যা কিনা বিশ্বের প্রথম কোন শতভাগ সফল একটি লেজার গাইডেড মিসাইল। এর উৎপাদন ১৯৭৪ সালে শুরু করা হলেও এটি প্রথম সার্ভিসে আসে ১৯৮৪ সালে। তখন থেকেই মার্কিন সামরিক বাহিনী এখন পর্যন্ত এই ভয়ংকর হেলফায়ার মিসাইল শতাধিক বার ব্যাবহার করেছে বিভিন্ন গোপন ও সামরিক মিশনে।

লকিহীড মার্টিন কর্পোরেশনের তৈরি মাত্র ৪৫ কেজি ওজনের প্রতিটি হেলফায়ার মিসাইলের ইউনিট কস্ট ১ লক্ষ ৬০ হাজার ডলার। সলিড ফুয়েল রকেট ইঞ্জিন চালিত এই সর্ট রেঞ্জের মিসাইলটিকে ড্রোন, হেলিকপ্টার কিংবা নেভাল প্লটফর্ম থেকেও ফায়ার করা যায়। এর গতি মাত্র ১.৩ ম্যাক।

১.৩ ম্যাক গতি সম্পন্ন হেলফায়ার মিসাইলের কার্যকর রেঞ্জ ০.৫ কিলোমিটার থেকে সর্বোচ্চ মাত্র ১১ কিলোমিটার (এক্সপোর্ট ভার্সন)। তবে খুব সম্ভবত মার্কিন সামরিক বাহিনী নিজেদের জন্য কাস্টমাইজড করা ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত রেঞ্জের এই মিসাইল অপারেট করে।

যুদ্ধক্ষেত্রে এটি এতটাই সফল যে একে মজা করে ফায়ার এণ্ড ফরগেট মিসাইল বলা হয়। বলা চলে সারা বিশ্বের একমাত্র শতভাগ সফল একটি মিসাইল হচ্ছে এয়ার লঞ্চড বেসড লাইট হেলফায়ার (এজিএম-১১৪) মিসাইল।

মার্কিন সামরিক বাহিনী কার্যত ল্যান্ড বেসড ট্যাংক ও সামরিক যান ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে হেলফায়ার (এজিএম-১১৪) মিসাইল ব্যবহার করলেও একেবারে সুনিদিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে এর আরো আপডেট ভার্সন হেলফায়ার (এজিএম-১১৪ আর৯এক্স) মিসাইল ব্যবহার করে। নতুন এই মিসাইলে প্রচলিত বিষ্ফোরক ওয়ারহেডের পরিবর্তে ধারালো ৬টি ব্লেড (kinetic warhead with pop-out blades) ব্যবহার করা হয়েছে।

Sherazur Rahman