গত ২ আগস্ট চীনের তীব্র বিরোধীতা এবং প্রবল আপত্তি উপেক্ষা করেই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি চীনের তাইওয়ান অঞ্চল সফর করেন। এটি আসলে ‘এক চীন নীতি’ এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার তিনটি ইশতেহারের গুরুতর লঙ্ঘন ছিল। যদিও রাশিয়া কিংবা আমেরিকার মতো সুপার পাওয়ার দেশগুলো নিজ স্বার্থে আন্তর্জাতিক আইন কতটুকু মেনে চলে তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ থেকেই যাচ্ছে।

তাইওয়ান থেকে ন্যান্সি পোলিসি চলে গেলে দেশটিকে ঘিরে চাইনিজ পিপলস লিবারেশন আর্মি ব্যাপক আকারের সামরিক মহড়া শুরু করেছে। অনেকে চীন তাইওয়ান যুদ্ধ শুরুর আকাঙ্খা প্রকাশ করলেও বাস্তবে চীন নিজের অর্থনৈতিক ক্ষতি করে এ মুহুর্তে কারো সাথেই যুদ্ধে জড়াবে না। এটাই হচ্ছে চীনের শি জিং পিং সরকারের বর্তমান মূল নীতি। তবে শত সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও চীনের বরাবর এই যুদ্ধ বর্জন নীতি এবং বৈশ্বিক কৌশলকে আমি সম্মান ও স্যালুট জানাচ্ছি।

তবে পেলোসি তাইওয়ান সফর শেষ করার কিছু পরেই দেশটির স্বঘোষিত আকাশ-প্রতিরক্ষা সীমার ভেতরে মিসাইল নিয়ে ঢুকে পড়েছিল চীনের ২৭টি জেট ফাইটার। অথচ চীন কিন্তু ইচ্ছে করলেই তীব্র প্রতিবাদের পাশাপাশি পোলসিকে বহনকারী বিমান বহরকে রাশিয়ার মতো ইন্টারসেপ্ট করার চেষ্টা করে দেখতে পারত। অবশ্য ৮টি মার্কিন এফ-১৫ জয়েন স্টাইক ঈগল জেট ফাইটার থাকায় চীনের বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো তার ২০০ মাইলের মধ্যে উড্ডয়ন করার সাহস দেখাতে পারেনি। আর এখন হাজার হাজার ব্যারেল তেল পুড়িয়ে লাইভ মিলিটারি এক্সেসাইজ বা মহড়া চালিয়ে লোক হাসানোর কোন মানেই হয় না।

এটা বুঝতে হবে যে চীন কিন্তু নিজের অর্থনৈতিক ক্ষতি করে কারো সাথেই সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না। আর আমেরিকার বিরুদ্ধে তো প্রশ্নই উঠে না। এ পর্যন্ত দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে যত সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে তা মুলত তীব্র মৌখিক প্রতিবাদ এবং বড় ধরণের সামরিক মহড়ার মধ্যেই সীমিত থেকেছে। যুদ্ধ শুরু করার মতো কোন ভয়াবহ পরিস্থিতি আজও সৃষ্টি হয়নি।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে কিন্তু অতি মাত্রায় ব্যবসায়ী জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তাই কোন দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসী বা সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ১০ বার ভেবে হিসাব নিকাশ করে চীন। তাছাড়া ১৯৭৯ সালে সংক্ষিপ্ত এক যুদ্ধে ভিয়েতনামের কাছে খুব করে পেদানি খাওয়ার পর পরবর্তী সময়ে আর কোন দিন সরাসরি কারো সাথেই যুদ্ধে জড়ায়নি রেড জায়ান্ট চীন। তবে অনেকটা অন্যায় করে হলেও ২০২০ সাল থেকে অতন্ত্য সুকৌশলে এবং এক রকম বিনা যুদ্ধেই কিন্তু ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন দূর্গম কিছু এলাকা দখল করে রেখেছে চীন।

বিগত চার দশকে আমেরিকা এবং রাশিয়া অন্যায় করে হলেও প্রায় অর্ধ শতাধিক যুদ্ধে জড়িয়েছে। এসব অনৈতিক যুদ্ধে সারা বিশ্বে প্রায় এক কোটির কাছাকাছি সাধারণ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি এখানে সেই বিষয়ের দিকে যাব না। মুলত দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতার বিচারে চীন কিন্তু অতি মাত্রায় যুদ্ধবাজ আমেরিকার কাছে কিছুই না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সুবিশাল আকারের সামরিক বাহিনী গড়ে তুললেও ভয়াবহ যুদ্ধ ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞাতার বিচারে রাশিয়া বা আমেরিকার তুলনায় কম করে হলেও পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আমার নিজ ধারণা বাস্তবের সাথে যৌক্তিকভাবে সঠিক নাও হতে পারে।

আমেরিকা বা রাশিয়ার মতো সামরিক সুপার পাওয়ার হতে না পারলেও চীন কিন্তু ঠিকই বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী চীনের নমিনাল জিডিপির আকার ১৯.৯ ট্রিলিয়ন ডলার এবং দেশটি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসে বৈদেশিক বানিজ্য বা আমদানি-রপ্তানি করে ২.৯৪ ট্রিলিয়ন ডলার বা ২,৯৪০ বিলিয়ন ডলার। আর এ থেকেই কিন্তু দেশটির সার্বিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং বৈশ্বিক গুরত্ব সুস্পষ্টভাবেই ফুঁটে উঠেছে। বর্তমানে সারা বিশ্বের আমদানি রপ্তানি বানিজ্যের ৪০-৫০% একাই নিয়ন্ত্রণ করছে রেড জায়ান্ট চায়না।

SSherazur Rahman