ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনের মধ্যেই রাশিয়া গত ২০শে এপ্রিল নতুন প্রজন্মের এক অত্যন্ত ভয়ঙ্কর আরএস-২৮ সারমাট ইন্টার কন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করে। মুলত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজেই গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করেছিলেন। রাশিয়া বিরোধী শক্তি আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের সকল দেশকে সতর্ক বার্তা দিয়ে তিনি বলেছেন, “নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহণে সক্ষম আরএস-২৮ সারমাট (সার্টান-২) ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলটি ক্রেমলিনের শত্রুদের কিছু করার আগে অবশ্যই দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে”। তার ভাষায় এটি রাশিয়ার একটি ‘অপারেজয়’ অস্ত্র।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো জোটকে কৌশলগতভাবে মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে নতুন প্রজন্মের আরএস-২৮ সারমাট (সার্টান-২) ইন্টার কন্টিন্যানটাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) বা নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল মিসাইল চলতি ২০২২ সালের শেষের দিকে সার্ভিসে আনতে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে রাশিয়া। বর্তমানে রাশিয়ার স্ট্র্যাটিজিক রকেট ফোর্সেস ইউনিটের হাতে থাকা সভিয়েত আমলের পুরনো কথিত ১৬ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের আরএস-৩৬ ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) এর রিপ্লেস হিসেবে আরো আধুনিক এবং অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ১৮ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের ২০টি আরএস-২৮ সারমাট (আইসিবিএম) সার্ভিসে আনতে চূড়ান্তভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে রাশিয়া। যদিও রাশিয়া ২০০৯ সাল থেকে এই মিসাইল নিয়ে গবেষণা ও ডেভলপমেন্ট শুরু করে।

২০২০ সালের দিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন কোন এক সামরিক মহড়া চলাকালে জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার অস্ত্র ভাণ্ডারে থাকা কৌশলগত আরএস-২৮ সারমাট (আইসিবিএম) মিসাইল কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমেরিকার টেক্সাস রাজ্য, ফ্রান্স কিংবা জার্মানীর মতো বড় একটি দেশকে পুরোপু্রি ধ্বংস বা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে সক্ষম হবে। যদিও পুতিন কিন্তু প্রায়ই অন্য দেশে নিউক্লিয়ার অস্ত্র হামলার পরোক্ষ হুমকী দেয়া এবং তার পাশাপাশি অযৌক্তিক বা বারাবাড়ি রকমের বক্তব্য দিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে ভয় দেখিয়ে থাকেন। তাছাড়া মাঝে মধ্যের রাশিয়া ছাড়াও আরো দুটি দেশ পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া তার শত্রু দেশের উপর নিউক্লিয়ার মিসাইল হামলার ফাঁকা হুমকী দিয়ে থাকে।

১০৮.১ টন ওজন বিশিষ্ট রাশিয়ার আরএস-২৮ বা (শয়তান) খ্যাত ইন্টার কন্টিন্যানট্যাল ব্যালেস্টিক মিসাইলটিকে ১০টি বড় আকারের কিংবা ১৫টি ছোট আকারের নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড (এমআইআরভি) বহন করার উপযোগী করে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এর সর্বোচ্চ পেলোড ক্যাপাসিটি ১০ টনের কাছাকাছি। এর দৈর্ঘ্য ৩৫.৫ মিটার এবং ডায়ামিটার ৩ মিটার। তাছাড়া এই মিসাইলটি এভেনগার্ড হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকেল বহন করতে পারে। যা কিনা এটিকে একেবারে আরো ভয়ঙ্কর এবং অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে।

আর এটিকে মনে করা হচ্ছে সারা বিশ্বের দেশগুলোর হাতে থাকা এ পর্যন্ত যত পরমাণু অস্ত্রবাহী মিসাইল তৈরি করা হয়েছে আরএস-২৮ সারমাট (আইসিবিএম) মিসাইল হচ্ছে তাদের মধ্যে আকারে সবচেয়ে বড়। তিন স্তরের আরএস-২৮ (আইসিবিএম) মিসাইলটিকে সাইলো বেসড লঞ্চিং প্লটফর্ম থেকে অপারেট করা হয়। তিন স্তরের এই মিসাইলটিতে লিকুইড ফুয়েল হেভী রকেট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। রাশিয়ার মিডিয়ার এই মিসাইলের ওয়ারহেডের ধ্বংসক্ষমতা হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকিতে ফেলা বোমার থেকে ২ হাজার গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্নন বলে প্রচার করা হলেও বাস্তবে এটি রাশিয়ার নব্য প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়।

রাশিয়ার সামরিক বিশেষজ্ঞ এবং প্রযুক্তিবিদদের মতে, আরএস-২৮ সারমাট (আইসিবিএম) মিসাইলটিকে সম্পূর্ণ স্টেলথ প্রযুক্তিতে  তৈরি করা হয়েছে। এটি বিশ্বের যে কোন রাডার সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে টার্মিনাল ফেজে ২০.৭ ম্যাক গতিতে তার লক্ষ্যবস্তুকে একেবারে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারবে। তবে বাস্তবে রাশিয়ার এই অতি ভয়ঙ্কর আরএস-২৮ সারমাট ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল কতটুকু কার্যকর হবে তা কিন্তু শতভাগ নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত বাস্তব কোন যুদ্ধে এই জাতীয় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার সুযোগ পায়নি বিশ্বের কোন পরাশক্তি।

তবে যাই হোক, বিশ্বের বুকে আবারো নিউক্লিয়ার অস্ত্রের উত্তাপ ছড়িয়ে রাশিয়া এখন এক রকম প্রকাশ্যেই চলতি ২০২২ সালেই এই প্রাণঘাতী অস্ত্র সার্ভিসে আনার আগাম ঘোষণা দিয়ে নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করল মাত্র। আর এখন রাশিয়াকে কৌশলগতভাবে মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অস্ত্র ভান্ডারে থাকা পুরনো মিনিটম্যান ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল আধুনিকায়নে প্রায় শত বিলিয়ন ডলারের কাছকাছি ফান্ড বরাদ্দ দিয়েছে।  

Sherazur Rahman