Tag Archive অতিথি লেখক

BySherazur Rahman

ভারত খুব সম্ভবত রাশিয়ার কৌশলগত টিইউ-১৬০ হেভী সুপার বোম্বার পেতে যাচ্ছেঃ

ইউরেশিয়া টাইমস নিউজের দেয়া তথ্যমতে, রাশিয়া ভারতকে তাদের লং রেঞ্জের কৌশলগত টিইউ-১৬০ হেভী সুপার বোম্বার এয়ারক্রাফট অফার করেছে। রাশিয়া আপাতত ভারতকে ৬টি এই জাতীয় হেভী বোম্বার এয়ারক্রাফট লিজ দিতে চায়। এর ন্যাটো রিপোটেড কোড নেম হচ্ছে ‘ব্লাকজ্যাক’। বর্তমানে রাশিয়ার বিমান বাহিনীতে মোট ১৫টি টিইউ-১৬০ হেভী সুপার বোম্বার অপারেশনাল রয়েছে এবং এটিই হচ্ছে কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী ও বিশাল আকারের বোম্বার বা সামরিক বিমান।

রাশিয়া ইতোমধ্যেই তার বিমান বহরে থাকা ১৫টি পুরনো সুপারসনিক গতির টিইউ-১৬০ বোম্বারকে নতুন প্রযুক্তির সমন্বয়ে আপগ্রেড করে টিইউ-১৬০এম২ সিরিজে উন্নীত করেছে। তাছাড়া নতুন করে আরো ১০টি এই সিরিজের হেভী বোম্বার অর্ডার দিয়ে রেখেছে রাশিয়ার বিমান বাহিনী। এই হেভী বোম্বার এয়ার ক্রাফটের একমাত্র যোগ্য প্রতিদ্বন্দী হচ্ছে আমেরিকার বি-১বি ল্যান্সার সুপার বোম্বার।

সভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর চলতি ২০২২ সালের ১২ই জানুয়ারি রাশিয়ার কাজান এভিয়েশন এন্টারপ্রাইজের প্রডাকশন প্লান্টে তৈরি হওয়া প্রথম হাইলী আপগ্রেডেড এণ্ড লং রেঞ্জের স্ট্যাট্রিজিক টিইউ-১৬০ এম সিরিজের হেভি সুপার বোম্বার রাশিয়ার বিমান বাহিনীর হাতে হস্তান্তর করা হয়। আর রাশিয়ার পুতিন সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট ও তার ন্যাটো জোটকে আকাশ পথে কার্যকরভাবে প্রতিহত করার জন্য আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে এরুপ ৫০টি নতুন প্রজন্মের হেভী সুপার বোম্বার সার্ভিসে আনার মহা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

রাশিয়ার নতুন প্রজন্মের টিইউ-১৬০ এম বোম্বারকে স্বয়ংক্রিয় চালিত অত্যাধুনিকত প্রতিরক্ষামূলক এইড স্যুট, আপগ্রডেড জ্যামিং প্রতিরোধ সিস্টেমসহ এবং অনন্য অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। পাশাপাশি এটিতে একটি উন্নত এবং নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ইনস্টল করেছে রাশিয়া। যা স্ট্র্যাটিজিক বোম্বারটিকে যে কোন ধরণের প্রচলিত এবং নিউক্লিয়ার যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ১২,৩০০ কিলোমিটার রেঞ্জে সুপারসনিক গতিতে কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার সক্ষমতা প্রদান করে। তাছাড়া রাশিয়ার এতে সর্বাধুনিক এভিয়েশন, রেডার, কমিউনিকেশন এন্ড নেভিগিয়েশন প্রযুক্তি সংযুক্ত করেছে।

রাশিয়া বর্তমানে তাদের উচ্চ প্রযুক্তির টিইউ-১৬০ এম সিরিজের যে হেভী বোম্বারটির ম্যাসিভ প্রডাকশন লাইন চালু করেছে তা আসলে সভিয়েত আমলের কৌশলগত তুপলেভ টিইউ-১৬০ (ব্লাকজ্যাক) লং রেঞ্জ বোম্বারের উন্নত এবং আধুনিক ভার্সন। মুলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত বি-১বি ল্যান্সার এবং নেক্সড জেনারেশন বি-২১ এর যোগ্য কাউন্টার হিসেবে এই হেভী সুপার বোম্বার সার্ভিসে আনতে অত্যাধুনিক টিইউ-১৬০ এম সুপারসনিক গতির পারমাণবিক বোম্বারের প্রডাকসন লাইন চালু করেছে রাশিয়া। তবে কাজান এভিয়েশন প্লান্টে প্রতি বছর মাত্র ১টি থেকে ২টি এই জাতীয় হেভী সুপার বোম্বার উৎপাদন করা সম্ভব।

টিইউ-১৬০ এম রাশিয়ান বোম্বারে পূর্বের চারটি পুরোনো ইঞ্জিনের পরিবর্তে নতুন প্রজন্মের অত্যন্ত শক্তিশালি এনকে-৩২ (Kuznetsov NK-৩২ afterburning turbofan) সিরিজ-২ আফটার বার্নিং টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। আর টিইউ-১৬০ বোম্বারের ইন্জিন হচ্ছে বর্তমান বিশ্বে সার্ভিসে থাকা এয়ারক্রাফট গুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ইন্জিন। এনকে -৩২ এর প্রতিটি জেট ইঞ্জিন ৩ হাজার ৪শত কেজি ওজনে ৩০০ কেএন পর্যন্ত থ্রাষ্ট উৎপন্ন করতে সক্ষম। যা এফ-২২ র‍্যাপটারের এর দুই ইন্জিনের মিলিত থ্রাষ্টের চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ। আবার এ রকম ৪টি ইন্জিন টিইউ-১৬০ এম স্ট্যাটিজিক বোম্বারে ইন্সটল করা হয়েছে। চারটি এনকে-৩২ সুপার থ্রাস্ট ইঞ্জিনের বদৌলতে এটিই হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী বোম্বার এয়ারক্রাফট। টিইউ-১৬০ এম সিরিজের সুপার বোম্বার ম্যাক ২.০২ গাতিতে ৪০ টন ওজনের নিউক্লিয়ার এণ্ড নকভেনশোনাল যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে বিরতী না দিয়েই একটানা ১২,৩০০ কিলোমিটারের দীর্ঘ আকাশ পথ পাড়ি দিতে সক্ষম।

রাশিয়ার কাজান এভিয়েশন এন্টারপ্রাইজ এর প্রডাকশন প্লান্টে টিইউ-১৬০ এম সিরিজের প্রতিটি সুপার বোম্বারের ইউনিট কস্ট ধরা হয়ছে ১৬ বিলিয়ন রুবল বা ২৮০-৩০০ মিলিয়ন ডলার। তাছাড়া এর প্রজেক্ট কস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮০ বিলিয়ন রুবল বা তিন বিলিয়ন ডলার প্রায়। প্রাথমিকভাবে সংক্ষিপ্ত সময়ে রাশিয়ার স্টাটিজিক নিউক বিমান বাহিনীর জন্য আগামী ২০২৭-২৮ সালের মধ্যেই নুন্যতম ১০টি এই সিরিজের স্ট্যাটিজিক সুপার বোম্বার সরবরাহ করবে কাজান এভিয়েশন এন্টারপ্রাইজ।

এখানে আসলে নতুন প্রজন্মের টিইউ-১৬০ এম সুপার বোম্বার উৎপাদনের ক্ষেত্রে রাশিয়া বিমানের স্টেলথ টেকনোলজির মতো বিষয়কে গুরুত্ব না দিয়ে এর সর্বোচ্চ গতি, ম্যাসিভ ওয়েপন্সস ক্যাপাবিলিটি এবং লং রেঞ্জের মতো প্রযুক্তিগত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব প্রদান করে বিশেষভাবে ডিজাইন ও তৈরির কাজে মনোযোগ দিয়েছে। তাই শত্রুর রাডারে ধরা পড়লেও একে ইন্টারসেপ্ট করাটা খুবই কঠিন একটি কাজ হয়ে যাবে। সভিয়েত আমলের তোপলেভ টিইউ-১৬০ এর সর্বোচ্চ গতিবেগ ২.০০ ম্যাক হলেও নতুন প্রজন্মের টিইউ-১৬০এম সুপার বোম্বারের সর্বোচ্চ গতিবেগ ম্যাক ২.৫ পর্যন্ত বা এর এর কাছাকাছি হতে পারে।

১৩,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাল্লার টিইউ-১৬০ এম২ এর ম্যাক্সিমাম পেলোড ক্যাপাসিটি প্রায় ৪০ হাজার কেজি বা ৪০ টন। এর কম্ব্যাট রেডিয়াস ৭৩০০ কিলোমিটার এবং সার্ভিস সিলিং ১৬ হাজার মিটার। এটি একই সাথে ২০০ কিলোটন ক্ষমতা সম্পন্ন ১২টি ৩০০ কিলোমিটার পাল্লার কেএইচ-৫৫ (প্রচলিত ও পারমাণবিক ওভারহেড) অথবা ১২টি পারমাণবিক ওভারহেড সমৃদ্ধ ৩০০ কিলোমিটার পাল্লার কেএইচ-১৫ ক্রুজ মিসাইল বহন করতে পারবে। তাছাড়া এটি কমপক্ষে ১২টি ক্ষেপনাস্ত্রসহ প্রচলিত গাইডেড এন্ড আইগাইডেড হেভী বোম্বস এন্ড ওয়েপন্সস সিস্টেম বহন করতে পারে।

আসলে তৎকালীন সোভিয়েত আমলে ১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রোটোটাইপ কপিওশ মোট ৩৬টি টিইউ-১৬০ তৈরি করা হয়। পরবর্তী সময়ে চরম আর্থিক সংকটের মুখে এই স্টাটিজিক সুপার বোম্বারের উৎপাদন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয় রাশিয়া। বর্তমানে রাশিয়ার বিমান বাহিনীতে মোট ১৫টি কৌশলগত টিইউ-১৬০ (ব্লাকজ্যাক) বোম্বার, ৩২টি টার্বোপ্রোপ টিইউ-৯৫ বিয়ার এবং ৬৯টি টিইউ-২২এম বোম্বার এয়ারক্রাফট অপারেশনাল রয়েছে।

তবে ১৯৯১ সালের পর ইউক্রেনের কাছে ১৯টি এই জাতীয় টিইউ-১৬০ সুপার বোম্বার ছিল। রাশিয়া থেকে গ্যাস রিলিফ পেতে ১৯৯৯ সালে ৮টি এই জাতীয় বোম্বার রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে দেয়। অবশিষ্ট ১১টি বোম্বার আমেরিকার আর্থিক সহায়তা প্রাপ্তির চুক্তির আলোকে স্ক্যার্প হিসেবে নিজেই দেশেই ধ্বংস করে ফেলে ইউক্রেন।

সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, গ্রামঃ ছোট চৌগ্রাম, সিংড়া, নাটোর। sherazbd@gmail.com

BySherazur Rahman

জার্মানির সাবমেরিন রপ্তানিঃ

১৯৬০ সাল থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বিশ্বের মধ্যে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক কনভেনশনাল পাওয়ারড ডিজেল ইলেক্টিক সাবমেরিন রপ্তানি করেছে জার্মানী। জার্মানী এই ছয় দশকের মধ্যে ১৭টি দেশে মোট প্রায় ১২০টি সাবমেরিন রপ্তানি করে।

যার মধ্যে জার্মান সবেচেয়ে বেশি সংখ্যক ১২টি করে মোট ২৪টি সাবমেরিন রপ্তানি করেছে তুরস্ক এবং দক্ষিণ কোরিয়ায়। ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীতে বর্তমানে একটি মাত্র জার্মানীর তৈরি টাইপ-২০৯/১৩০০ সিরিজের (কেআরআই কাকড়া) ডিজেল ইলেক্ট্রিক এ্যাটাক সাবমেরিন অপারেশনাল রয়েছে।

তাছাড়া ইসরাইলে ডলফিন ক্লাস সাবমেরিন রপ্তানি করেছে মোট ৬টি। ভারত মোট ৪টি জার্মানির তৈরি টাইপ-২০৯ শিশুমার ক্লাস সাবমেরিন অপারেট করে। যার মধ্যে দুটি সার্ভিসে এসেছে ১৯৯০ সালে এবং ১৯৯২ সালে।

তবে আশ্চর্যজনক যে, বিগত প্রায় ৬০ বছরে জার্মান সারা বিশ্বের প্রায় ১২০টি বা তার কাছাকাছি সাবমেরিন সারা বিশ্বে রপ্তানি করলেও তাদের নিজের নৌবাহিনীতে টাইপ-২১২ ক্লাস সাবমেরিন আছে মাত্র ৬টি।

সাবমেরিন ডিজাইন ও তৈরিতে বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে ব্যাপক সুখ্যাতি লাভ করে জার্মানী। তাছাড়া জার্মানী তথা সারা বিশ্বের বিখ্যাত কনভেনশনাল এ্যাটাক সাবমেরিন ডিজাইন ও বিল্ডার কোম্পানি হচ্ছে thyssenkrupp Marine Systems (tkMS)। তাছাড়া সাবমেরিনের উন্নত মানের ডিজেল ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচারিং এ সবার উপরে উঠে এসেছে জার্মানীর নাম। এমনকি চীন নিজেও সাবমেরিন ডিজাইন ও তৈরি করলেও এর ইঞ্জিন কিন্তু জার্মানী থেকে আমদানি করে ইনস্টল করে।

জার্মান বর্তমানে টাইপ-২১২এ, টাইপ-২১৪ এবং ডলফিন ক্লাস সাবমেরিন তৈরি ও রপ্তানি করে থাকে। তবে অত্যন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য যে, চলতি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ইন্দোনেশিয়া নৌবাহিনীর জার্মানির তৈরি ৪২ বছরের অতি পুরনো একটি টাইপ-২০৯ ক্লাসের (কেআরআই নাঙ্গালা) সাবমেরিন বালি সমুদ্রের গভীরে ধ্বংস হয়ে ৫৩ জন নিরীহ অফিসার এবং ক্রু মৃত্যুবরণ করেন।

Sherazur Rahman

BySherazur Rahman

একেবারে নতুন কনসেপ্টের এক ভয়ানক অস্ত্র ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পালস বা (ইএমপি)ঃ

বর্তমানে বিশ্বের সামরিক শক্তিধর দেশগুলো নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্রের আধুনিকায়নের পাশাপাশি একেবারেই নতুন কনসেপ্টের আরো মারাত্বক কিছু অস্ত্র তৈরির গোপন নেশায় মেতে উঠেছে। আর এই নতুন ভয়ানক অস্ত্রের নাম হচ্ছে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পালস বা (ইএমপি)। রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দীর্ঘ মেয়াদী অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে চীনও কিন্তু একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তির ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) প্রযুক্তি সমৃদ্ধ হাইপারসনিক গতির ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের সামনে উম্মোচন করেছে। তবে এই নতুন প্রজন্মের অস্ত্র প্রতিযোগিতায় আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের পাশাপাশি ভারতের নামও কিন্তু উঠে এসেছে। তাছাড়া অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা উত্তর কোরিয়াও কিন্তু এই জাতীয় মারাত্বক অস্ত্র তৈরিতে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে বলে মনে করা হয়।

নন-নিউক্লিয়ার ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) রশ্মি ছুড়তে আসলে অত্যাধুনিক মিসাইল ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে ইলেক্ট্রন শক্তির প্রবল চাপ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় অতি শক্তিশালী মাইক্রোওয়েভ ওভেন। এই শক্তি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে, চুম্বকীয় ক্ষেত্রে, বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় বিকিরণ ও বৈদ্যুতিক পরিচলন রূপে অতিক্রম করতে পারে। আর ইলেক্ট্রন ও চুম্বকীয় শক্তির উচ্চ মাত্রায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ব্যাপক আলোক রশ্মির আঘাত করাই হলো ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) অস্ত্রের মূল যাদুমন্ত্র।

একটি নিদিষ্ট এলাকায় ইএমপি অস্ত্র আঘাত হানার পর সেখানে রাসায়নিক বিস্ফোরণ ঘটায় এবং ফ্লাক্স কমপ্রেশন জেনারেটর নামে পরিচিত বৈদ্যুতিক চার্জযুক্ত চুম্বককে সংকুচিত করে ফেলে। যার ফলস্রুতিতে তৈরি হওয়া শক এনার্জি অত্যন্ত শক্তিশালী ইলেকট্রন এবং চুম্বকীয় শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। এটা অনেকটা লেজার রশ্মি বা বজ্রপাতের আঘাত জনিত একটি বিষয়ের মতো। একই সময়ে আকাশে লক্ষ লক্ষ বজ্রপাত হলে যে ভয়ানক আলোকরশ্মি সৃষ্টি হবে, ঠিক ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) এর আঘাতে তার থেকে কয়েক গুন বেশি আলোক রশ্মি সৃষ্টি হতে পারে।

আকাশে মাত্রাতিরিক্ত বজ্রপাত যেমন ভূ-পৃষ্ঠে থাকা অবকাঠামো, পাওয়ার গ্রীড, রেডার এন্ড কমিউনিকেশন সিস্টেম নষ্ট করে দিতে পারে। ঠিক তেমনি ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) রশ্মিও পাওয়ার গ্রীড, বৈদুতিক সাজ সরঞ্জাম এবং বিমান পরিবহণ ব্যবস্থা এক নিমেষেই ধ্বংস করে দিতে সক্ষম। এ রশ্মি সরাসরি সরল পথে এবং আঁকাবাঁকা পথে দু-ভাবেই চলতে পারে।

উচ্চ প্রযুক্তির হাইপারসনিক মিসাইল সিস্টেমের মাধম্যে শত্রু দেশের উপর হামলা করা হলে ইএমপি রশ্মি বায়ু মণ্ডলকে বিরাট ঝাকুনি দিতে দিতে ভূ-পৃষ্ঠে ভূপাতিত হবে এবং চারপাশ চরম মাত্রায় উত্তপ্ত করে ভূমি থেকে ৬০ মাইল উচু থেকে ১.৫ মিলিয়ন বর্গ মাইল এলাকায় থাকা ইলেক্ট্রিক ব্যবস্থা এবং ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি এবং সাজ সরঞ্জাম ধ্বংস করে দিতে পারে এক নিমেষেই। আবার বৈদ্যুতিক তারের মাধম্যেও ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) অস্ত্র প্রয়োগ করা সম্ভব জানিয়েছেন সামরিক প্রযুক্তিবিদেরা।

অন্যদিকে ইএমপি অস্ত্র ব্যবহারে নিশ্চিতভাবেই যে কোন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা তথ্য ব্যবস্থা খুব দ্রুত হ্যাক বা ধ্বংস করা সম্ভব। এক গবেষণামুলক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ভবিষ্যতে রাশিয়া বা চিনের গোপন ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) অস্ত্র হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় তথ্য এবং পাওয়ার গ্রীড ও সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস করা হলে তা পুনরুদ্ধারে প্রায় এক যুগ লেগে যাবে এবং খরচ হবে আনুমানিক প্রায় চার ট্রিলিয়ন ডলার।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো এই নতুন প্রযুক্তির ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) অস্ত্রের বেশকিছু গোপন পরীক্ষা চালায়। মার্কিন গণমাধ্যমের তথ্যমতে, মার্কিন বিমানবাহিনী ও বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠাতা বোয়িং কর্পোরেশন যৌথভাবে নন-নিউক্লিয়ার ইএমপি তৈরি্তে কাজ করেছে। ‘চ্যাম্প’ বা কাউন্টার-ইলেকট্রনিক্স হাই পাওয়ার্ড মাইক্রোওয়েভ অ্যাডভান্সড মিসাইল প্রজেক্টের অধীনে তৈরি করা হচ্ছে। আর ইতোমধ্যেই রাশিয়াও এ অস্ত্রের গোপন পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।

চীন খুব সম্ভবত গত ২০২১ সালের শেষের দিকে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) প্রযুক্তি সমৃদ্ধ হাইপারসনিক মিসাইলের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছিল। চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি ম্যাক ৭ গতি সম্পন্ন হাইপারসনিক মিসাইলের কার্যকরী রেঞ্জ হচ্ছে ৩,২০০ কিলোমিটার। এটি প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্রের মতো তার লক্ষবস্তুতে ওয়ারহেড হীট না করে বরং তার শত্রু পক্ষের নিদিষ্ট অবস্থানে রসায়নিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, কম্পিউটার, রাডার সিস্টেম এণ্ড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সকল ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ধ্বংস করার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা একেবারে অচল করে দিতে পারে বলে চীনের মিডিয়ায় প্রচার করা হয়।

এদিকে ভারত কার্যত ২০০৪ সাল থেকেই তাদের নিজস্ব প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনী সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে কালি-৫০০০ নামে নতুন এই ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) অস্ত্র তৈরি ও গবেষণায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে বলে মনে করা হয়। যদিও ভারতের তরফে এ নিয়ে খুব একটা তথ্য মিডিয়ায় প্রচার করা হয় না।

Sherazur Rahman

BySherazur Rahman

রাশিয়ার নতুন প্রজন্মের আরএস-২৮ সারমাট ইন্টার কন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) বাস্তবতা নাকি প্রোপাগান্ডাঃ

ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনের মধ্যেই রাশিয়া গত ২০শে এপ্রিল নতুন প্রজন্মের এক অত্যন্ত ভয়ঙ্কর আরএস-২৮ সারমাট ইন্টার কন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করে। মুলত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন নিজেই গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ করেছিলেন। রাশিয়া বিরোধী শক্তি আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের সকল দেশকে সতর্ক বার্তা দিয়ে তিনি বলেছেন, “নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহণে সক্ষম আরএস-২৮ সারমাট (সার্টান-২) ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইলটি ক্রেমলিনের শত্রুদের কিছু করার আগে অবশ্যই দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে”। তার ভাষায় এটি রাশিয়ার একটি ‘অপারেজয়’ অস্ত্র।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো জোটকে কৌশলগতভাবে মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে নতুন প্রজন্মের আরএস-২৮ সারমাট (সার্টান-২) ইন্টার কন্টিন্যানটাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) বা নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল মিসাইল চলতি ২০২২ সালের শেষের দিকে সার্ভিসে আনতে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে রাশিয়া। বর্তমানে রাশিয়ার স্ট্র্যাটিজিক রকেট ফোর্সেস ইউনিটের হাতে থাকা সভিয়েত আমলের পুরনো কথিত ১৬ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের আরএস-৩৬ ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) এর রিপ্লেস হিসেবে আরো আধুনিক এবং অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ১৮ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের ২০টি আরএস-২৮ সারমাট (আইসিবিএম) সার্ভিসে আনতে চূড়ান্তভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে রাশিয়া। যদিও রাশিয়া ২০০৯ সাল থেকে এই মিসাইল নিয়ে গবেষণা ও ডেভলপমেন্ট শুরু করে।

২০২০ সালের দিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন কোন এক সামরিক মহড়া চলাকালে জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার অস্ত্র ভাণ্ডারে থাকা কৌশলগত আরএস-২৮ সারমাট (আইসিবিএম) মিসাইল কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমেরিকার টেক্সাস রাজ্য, ফ্রান্স কিংবা জার্মানীর মতো বড় একটি দেশকে পুরোপু্রি ধ্বংস বা মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে সক্ষম হবে। যদিও পুতিন কিন্তু প্রায়ই অন্য দেশে নিউক্লিয়ার অস্ত্র হামলার পরোক্ষ হুমকী দেয়া এবং তার পাশাপাশি অযৌক্তিক বা বারাবাড়ি রকমের বক্তব্য দিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে ভয় দেখিয়ে থাকেন। তাছাড়া মাঝে মধ্যের রাশিয়া ছাড়াও আরো দুটি দেশ পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া তার শত্রু দেশের উপর নিউক্লিয়ার মিসাইল হামলার ফাঁকা হুমকী দিয়ে থাকে।

১০৮.১ টন ওজন বিশিষ্ট রাশিয়ার আরএস-২৮ বা (শয়তান) খ্যাত ইন্টার কন্টিন্যানট্যাল ব্যালেস্টিক মিসাইলটিকে ১০টি বড় আকারের কিংবা ১৫টি ছোট আকারের নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড (এমআইআরভি) বহন করার উপযোগী করে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এর সর্বোচ্চ পেলোড ক্যাপাসিটি ১০ টনের কাছাকাছি। এর দৈর্ঘ্য ৩৫.৫ মিটার এবং ডায়ামিটার ৩ মিটার। তাছাড়া এই মিসাইলটি এভেনগার্ড হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকেল বহন করতে পারে। যা কিনা এটিকে একেবারে আরো ভয়ঙ্কর এবং অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে।

আর এটিকে মনে করা হচ্ছে সারা বিশ্বের দেশগুলোর হাতে থাকা এ পর্যন্ত যত পরমাণু অস্ত্রবাহী মিসাইল তৈরি করা হয়েছে আরএস-২৮ সারমাট (আইসিবিএম) মিসাইল হচ্ছে তাদের মধ্যে আকারে সবচেয়ে বড়। তিন স্তরের আরএস-২৮ (আইসিবিএম) মিসাইলটিকে সাইলো বেসড লঞ্চিং প্লটফর্ম থেকে অপারেট করা হয়। তিন স্তরের এই মিসাইলটিতে লিকুইড ফুয়েল হেভী রকেট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। রাশিয়ার মিডিয়ার এই মিসাইলের ওয়ারহেডের ধ্বংসক্ষমতা হিরোশিমা কিংবা নাগাসাকিতে ফেলা বোমার থেকে ২ হাজার গুণ বেশি ক্ষমতাসম্পন্নন বলে প্রচার করা হলেও বাস্তবে এটি রাশিয়ার নব্য প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়।

রাশিয়ার সামরিক বিশেষজ্ঞ এবং প্রযুক্তিবিদদের মতে, আরএস-২৮ সারমাট (আইসিবিএম) মিসাইলটিকে সম্পূর্ণ স্টেলথ প্রযুক্তিতে  তৈরি করা হয়েছে। এটি বিশ্বের যে কোন রাডার সিস্টেমকে ফাঁকি দিয়ে টার্মিনাল ফেজে ২০.৭ ম্যাক গতিতে তার লক্ষ্যবস্তুকে একেবারে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারবে। তবে বাস্তবে রাশিয়ার এই অতি ভয়ঙ্কর আরএস-২৮ সারমাট ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল কতটুকু কার্যকর হবে তা কিন্তু শতভাগ নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত বাস্তব কোন যুদ্ধে এই জাতীয় প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার সুযোগ পায়নি বিশ্বের কোন পরাশক্তি।

তবে যাই হোক, বিশ্বের বুকে আবারো নিউক্লিয়ার অস্ত্রের উত্তাপ ছড়িয়ে রাশিয়া এখন এক রকম প্রকাশ্যেই চলতি ২০২২ সালেই এই প্রাণঘাতী অস্ত্র সার্ভিসে আনার আগাম ঘোষণা দিয়ে নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা করল মাত্র। আর এখন রাশিয়াকে কৌশলগতভাবে মোকাবেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার অস্ত্র ভান্ডারে থাকা পুরনো মিনিটম্যান ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল আধুনিকায়নে প্রায় শত বিলিয়ন ডলারের কাছকাছি ফান্ড বরাদ্দ দিয়েছে।  

Sherazur Rahman

BySherazur Rahman

তাইওয়ানকে ঘিরে আমেরিকার উস্কানী কিংবা পাতানো যুদ্ধের ফাঁদে পা দিবে কী চীন?

গত ২ আগস্ট চীনের তীব্র বিরোধীতা এবং প্রবল আপত্তি উপেক্ষা করেই মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি চীনের তাইওয়ান অঞ্চল সফর করেন। এটি আসলে ‘এক চীন নীতি’ এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার তিনটি ইশতেহারের গুরুতর লঙ্ঘন ছিল। যদিও রাশিয়া কিংবা আমেরিকার মতো সুপার পাওয়ার দেশগুলো নিজ স্বার্থে আন্তর্জাতিক আইন কতটুকু মেনে চলে তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ থেকেই যাচ্ছে।

তাইওয়ান থেকে ন্যান্সি পোলিসি চলে গেলে দেশটিকে ঘিরে চাইনিজ পিপলস লিবারেশন আর্মি ব্যাপক আকারের সামরিক মহড়া শুরু করেছে। অনেকে চীন তাইওয়ান যুদ্ধ শুরুর আকাঙ্খা প্রকাশ করলেও বাস্তবে চীন নিজের অর্থনৈতিক ক্ষতি করে এ মুহুর্তে কারো সাথেই যুদ্ধে জড়াবে না। এটাই হচ্ছে চীনের শি জিং পিং সরকারের বর্তমান মূল নীতি। তবে শত সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও চীনের বরাবর এই যুদ্ধ বর্জন নীতি এবং বৈশ্বিক কৌশলকে আমি সম্মান ও স্যালুট জানাচ্ছি।

তবে পেলোসি তাইওয়ান সফর শেষ করার কিছু পরেই দেশটির স্বঘোষিত আকাশ-প্রতিরক্ষা সীমার ভেতরে মিসাইল নিয়ে ঢুকে পড়েছিল চীনের ২৭টি জেট ফাইটার। অথচ চীন কিন্তু ইচ্ছে করলেই তীব্র প্রতিবাদের পাশাপাশি পোলসিকে বহনকারী বিমান বহরকে রাশিয়ার মতো ইন্টারসেপ্ট করার চেষ্টা করে দেখতে পারত। অবশ্য ৮টি মার্কিন এফ-১৫ জয়েন স্টাইক ঈগল জেট ফাইটার থাকায় চীনের বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো তার ২০০ মাইলের মধ্যে উড্ডয়ন করার সাহস দেখাতে পারেনি। আর এখন হাজার হাজার ব্যারেল তেল পুড়িয়ে লাইভ মিলিটারি এক্সেসাইজ বা মহড়া চালিয়ে লোক হাসানোর কোন মানেই হয় না।

এটা বুঝতে হবে যে চীন কিন্তু নিজের অর্থনৈতিক ক্ষতি করে কারো সাথেই সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না। আর আমেরিকার বিরুদ্ধে তো প্রশ্নই উঠে না। এ পর্যন্ত দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে যত সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে তা মুলত তীব্র মৌখিক প্রতিবাদ এবং বড় ধরণের সামরিক মহড়ার মধ্যেই সীমিত থেকেছে। যুদ্ধ শুরু করার মতো কোন ভয়াবহ পরিস্থিতি আজও সৃষ্টি হয়নি।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে কিন্তু অতি মাত্রায় ব্যবসায়ী জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তাই কোন দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসী বা সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ১০ বার ভেবে হিসাব নিকাশ করে চীন। তাছাড়া ১৯৭৯ সালে সংক্ষিপ্ত এক যুদ্ধে ভিয়েতনামের কাছে খুব করে পেদানি খাওয়ার পর পরবর্তী সময়ে আর কোন দিন সরাসরি কারো সাথেই যুদ্ধে জড়ায়নি রেড জায়ান্ট চীন। তবে অনেকটা অন্যায় করে হলেও ২০২০ সাল থেকে অতন্ত্য সুকৌশলে এবং এক রকম বিনা যুদ্ধেই কিন্তু ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন দূর্গম কিছু এলাকা দখল করে রেখেছে চীন।

বিগত চার দশকে আমেরিকা এবং রাশিয়া অন্যায় করে হলেও প্রায় অর্ধ শতাধিক যুদ্ধে জড়িয়েছে। এসব অনৈতিক যুদ্ধে সারা বিশ্বে প্রায় এক কোটির কাছাকাছি সাধারণ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি এখানে সেই বিষয়ের দিকে যাব না। মুলত দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধ পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতার বিচারে চীন কিন্তু অতি মাত্রায় যুদ্ধবাজ আমেরিকার কাছে কিছুই না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সুবিশাল আকারের সামরিক বাহিনী গড়ে তুললেও ভয়াবহ যুদ্ধ ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞাতার বিচারে রাশিয়া বা আমেরিকার তুলনায় কম করে হলেও পঞ্চাশ বছর পিছিয়ে রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আমার নিজ ধারণা বাস্তবের সাথে যৌক্তিকভাবে সঠিক নাও হতে পারে।

আমেরিকা বা রাশিয়ার মতো সামরিক সুপার পাওয়ার হতে না পারলেও চীন কিন্তু ঠিকই বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী চীনের নমিনাল জিডিপির আকার ১৯.৯ ট্রিলিয়ন ডলার এবং দেশটি ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসে বৈদেশিক বানিজ্য বা আমদানি-রপ্তানি করে ২.৯৪ ট্রিলিয়ন ডলার বা ২,৯৪০ বিলিয়ন ডলার। আর এ থেকেই কিন্তু দেশটির সার্বিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং বৈশ্বিক গুরত্ব সুস্পষ্টভাবেই ফুঁটে উঠেছে। বর্তমানে সারা বিশ্বের আমদানি রপ্তানি বানিজ্যের ৪০-৫০% একাই নিয়ন্ত্রণ করছে রেড জায়ান্ট চায়না।

SSherazur Rahman

BySherazur Rahman

আমেরিকার কুখ্যাত হেলফায়ার মিসাইলঃ

গত ১লা আগস্ট স্থানীয় সময় ৬টা ১৮ মিনিটে আল কায়দার শীর্ষ নেতা জাওয়াহিরি মার্কিন বিমান বাহিনীর এমকিউ-৯ রিপার কমব্যাট ড্রোন থেকে ছোড়া কুখ্যাত হেলফায়ার (এজিএম-১১৪ আর৯এক্স) মিসাইলের আঘাতে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে লক্ষ্য করে ২টি শর্ট রেঞ্জের হেলফায়ার মিসাইল ফায়ার করা হয় মার্কিন কমব্যাট ড্রোন থেকে।

তাছাড়া ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারি ইরাকের রাজধানী বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কাছে ইরানের আইআরজিসি বিপ্লবী বাহিনীর প্রধান কাসেমি সোলাইমানিকে মার্কিন বিমান বাহিনীর এমকিউ-৯ রিপার কমব্যাট ড্রোন থেকে সেই কুখ্যাত হেলফায়ার মিসাইল হীটের মাধ্যমে হত্যা করে। এই এমকিউ-৯ রিপার কমব্যাট ড্রোন কাতারে অবস্থিত কোন গোপন মার্কিন সামরিক ঘাটি থেকে অপারেট করা হয়।

ইরানের আইআরজিসি বাহিনী কাসেম সোলাইমানীর হত্যার বদলা হিসেবে বিগত দুই বছরে পর্যায়ক্রমে ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাটিতে প্রায় শতাধিক ব্যালেস্টিক মিসাইল ছুড়লেও আজ পর্যন্ত দুই একটি সামরিক যান ধ্বংস হওয়া তো দূরের কথা একজন সেনা হতাহত হওয়ার কোন নজির খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হেলফায়ার (এজিএম-১১৪) একেবারে স্বল্প পাল্লার ও হালকা ওজনের মিসাইল। যা কিনা বিশ্বের প্রথম কোন শতভাগ সফল একটি লেজার গাইডেড মিসাইল। এর উৎপাদন ১৯৭৪ সালে শুরু করা হলেও এটি প্রথম সার্ভিসে আসে ১৯৮৪ সালে। তখন থেকেই মার্কিন সামরিক বাহিনী এখন পর্যন্ত এই ভয়ংকর হেলফায়ার মিসাইল শতাধিক বার ব্যাবহার করেছে বিভিন্ন গোপন ও সামরিক মিশনে।

লকিহীড মার্টিন কর্পোরেশনের তৈরি মাত্র ৪৫ কেজি ওজনের প্রতিটি হেলফায়ার মিসাইলের ইউনিট কস্ট ১ লক্ষ ৬০ হাজার ডলার। সলিড ফুয়েল রকেট ইঞ্জিন চালিত এই সর্ট রেঞ্জের মিসাইলটিকে ড্রোন, হেলিকপ্টার কিংবা নেভাল প্লটফর্ম থেকেও ফায়ার করা যায়। এর গতি মাত্র ১.৩ ম্যাক।

১.৩ ম্যাক গতি সম্পন্ন হেলফায়ার মিসাইলের কার্যকর রেঞ্জ ০.৫ কিলোমিটার থেকে সর্বোচ্চ মাত্র ১১ কিলোমিটার (এক্সপোর্ট ভার্সন)। তবে খুব সম্ভবত মার্কিন সামরিক বাহিনী নিজেদের জন্য কাস্টমাইজড করা ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার পর্যন্ত রেঞ্জের এই মিসাইল অপারেট করে।

যুদ্ধক্ষেত্রে এটি এতটাই সফল যে একে মজা করে ফায়ার এণ্ড ফরগেট মিসাইল বলা হয়। বলা চলে সারা বিশ্বের একমাত্র শতভাগ সফল একটি মিসাইল হচ্ছে এয়ার লঞ্চড বেসড লাইট হেলফায়ার (এজিএম-১১৪) মিসাইল।

মার্কিন সামরিক বাহিনী কার্যত ল্যান্ড বেসড ট্যাংক ও সামরিক যান ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে হেলফায়ার (এজিএম-১১৪) মিসাইল ব্যবহার করলেও একেবারে সুনিদিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে এর আরো আপডেট ভার্সন হেলফায়ার (এজিএম-১১৪ আর৯এক্স) মিসাইল ব্যবহার করে। নতুন এই মিসাইলে প্রচলিত বিষ্ফোরক ওয়ারহেডের পরিবর্তে ধারালো ৬টি ব্লেড (kinetic warhead with pop-out blades) ব্যবহার করা হয়েছে।

Sherazur Rahman

BySherazur Rahman

যুদ্ধবিমানের পেলোড ক্যাপাসিটি কত?

এভিয়েশন প্রযুক্তির ব্যবহার ও জয়যাত্রা ১৯০৩ সালে শুরু হলেও এই এক বিংশ শতাব্দীতে এসেও বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশ একেবারে স্বাধীনভাবে শতভাগ নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে এডভান্স ফাইটার জেট ডিজাইন ও তৈরি করতে সক্ষম। এই তিনটি দেশ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ফ্রান্স। আর এই তিনটি দেশ ব্যাতিত চীন নিজস্ব প্রযুক্তির জেট ফাইটার তৈরি করলেও ইঞ্জিনসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রযুক্তির জন্য এখনো পর্যন্ত রাশিয়া বা অন্য কোন দেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে রয়েছে।

তাছাড়া এই চারটি দেশ ব্যাতিত যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তুরস্ক, সুইডেন, ভারত, পাকিস্তানের মতো দেশ যুদ্ধবিমান তৈরি করলেও এর প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন ধরণের গুরুত্বপূর্ণের যন্ত্রাংশের ৫০% থেকে ৬০% পর্যন্ত অন্য কোন দেশ হতে আমদানি করে আনতে হয়। আবার ইউরোফাইটার তাইফুন যুক্তরাজ্য, জার্মান, ইতালী এবং স্পেন অংশীদ্বারিত্বের ভিত্তিতে ম্যানুফ্যাকচারিং করে। এটিও কিন্তু একক কোন দেশের পক্ষে তৈরি করার সুযোগ নেই।

তবে যাই হোক না কেন, ফাইটার জেটের পেলোড বা অস্ত্র বহণ করার সক্ষমতার বিচারে কাগজে কলমে হলেও সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে চীনের চেংদু জে-২০ স্টেলথ জেট ফাইটার। চীনের দেয়া ভাষ্যমতে, তাদের নতুন প্রজন্মের জে-২০ স্টিলথ জেট ফাইটার আনুমানিক ১১,০০০ কেজি বা ১১ টন পে-লোড বহণ করতে সক্ষম।

চীনের তরফে এক্ষেত্রে যাই বলা হোক না কেন, বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কিছু কথা। কারণ চীনের জে-২০ জেট ফাইটের ব্যাবহার করা হয়েছে সেই আশির দশকের রাশিয়ান পুরনো এএল-৩১এফ আফটার টার্বোফ্যান ইঞ্জিন বা চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি নিম্ন মানের ডাব্লিউএস-১০বি ইঞ্জিন। আর এই জাতীয় পুরনো টুইন ইঞ্জিন দিয়ে ১১টন ওজনের পে-লোড কোন স্টেলথ জেট ফাইটারের পক্ষে আকাশে উড্ডয়ন করা কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ঠ অবকাশ থেকেই যাচ্ছে। তবে অদূর ভবিষ্যতে চীন তাদের নতুন প্রজন্মের জেট ফাইটারে হাইলী এডভান্স জিয়ান ডাব্লিউএস-১৫ আফটার টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিন ব্যবহার শুরু করতে যাচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সত্তরের দশকের জয়েন্ট স্টাইক এফ-১৫ এর পরীক্ষিত পে-লোড ক্যাপাসিটি বা অস্ত্র বহণ করার ক্ষমতা ১০,৪০০ কেজি বা ১০.৪ টন। যা কিনা যুদ্ধবিমানটিকে এক রকম নিশ্চিতভাবেই বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় সক্ষমতার জেট ফাইটারের স্থানে নিয়ে গেছে বহু আগেই। এফ-১৫ প্রায় চার দশক ধরে আকাশ যুদ্ধে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে।

আমেরিকার নতুন প্রজন্মের এফ-৩৫ জয়েন স্টাইক স্টেলথ জেট ফাইটারের মোট পেলোড ক্যাপাসিটি ৮,২০০ কেজি হলেও শুধু ‘ওয়েপন্স-বে’ তে এর ম্যাক্সিমাম পেলোড ক্যাপাসিটি ২,৬০০ কেজি এবং এফ-২২ র‍্যাপ্টারের ‘ওয়েপন্স-বে’ তে পেলোড ক্যাপাসিটি ২,২০০ কেজি।

বিশ্বের সেরা ২০০ কিলমিটার রেঞ্জের মেটওর এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইল সমৃদ্ধ ফ্রান্সের এডভান্স রাফায়েল জেট ফাইটারের ম্যাক্সিমাম পে-লোড ক্যাপাসিটি ৯.৫ টন। ইউরোফাইটার টাইফুনের পে-লোড ক্যাপাসিটি ৯ টন। আবার রাশিয়ার এসইউ-৫৭ সুপার স্টিলথ এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটারের পে-লোড ক্যাপাসিটি ৯ টন, এসইউ-৩৫এস সিরিজের জেট ফাইটারের পে-লোড ক্যাপাসিটি ৮ টন, মিগ-৩৫ এর পে-লোড ক্যাপাসিটি ৬.৫ টন এবং এসইউ-৩০ এসএমই জেট ফাইটারের পে-লোড কযাপাসিটি ৮ টন।

এদিকে সিঙ্গেল ইঞ্জিনের জেট ফাইটারের বিবেচনায় মার্কিন এফ-১৬ এর পে-লোড ক্যাপাসিটি ৭.৭ টন বা ৭,৭০০ কেজি, সুইডিস গ্রোপেন-ই জেট ফাইটারের ম্যাক্সিমাম পে-লোড ক্যাপাসিটি ৫,৩০০ কেজি বা ৫.৩ টন, ভারতের তেজাস হাল লাইট জেট ফাইটারের পে-লোড ক্যাপাসিটি ৫,৭০০ কেজি বা ৫.৭ টন, চীন-পাকিস্তান জয়েন্ট প্রডাক্ট জেএফ-১৭ থাণ্ডার লাইট জেট ফাইটারের ম্যাক্সিমাম পে-লোড ক্যাপাসিটি ৫.৫ টন বা ৫,৫০০ কেজি এবং চীনের জে-১০ সিঙ্গেল ইঞ্জিন জেট ফাইটারের ম্যাক্সিমাম পে-লোড ক্যাপাসিটি ৭ টন বা ৭,০০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকতে পারে।

তবে বিশ্বের এভিয়েশন প্রযুক্তি নির্ভর অনেক দেশকে ছাপিয়ে নতুন প্রজন্মের স্টেলথ জেট ফাইটারের সফল ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করেছে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি মুলত গত ১৯শে জুলাই বিশ্বের চতুর্থ একক দেশ হিসেবে তাদের কেএফ-২১ নেক্সড জেনারেশন ফাইটার জেটের পরীক্ষামুলক সফল উড্ডয়ন শেষ করে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার দেয়া তথ্যমতে, ২,৯০০ কিলোমিটার রেঞ্জের কেএফ-২১ নেক্সড জেনারেশন যুদ্ধবিমান আনুমানিক ৩ হাজার কেজি পর্যন্ত অস্ত্র ও মিসাইল ধারণ করতে সক্ষম।

Sherazur Rahman 

BySherazur Rahman

লাইট কমব্যাট এয়ারক্রাফটের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে তুরস্কের হেভী ‘আকসঙ্গুর’ মাল্টিরোল এণ্ড কমব্যাট ড্রোন (ইউসিএভি)ঃ

এক বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই ড্রোন প্রযুক্তিতে মুসলিম বিশ্বের একমাত্র দেশ হিসেবে তুরস্ক ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে। বিশেষ করে গত ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে তার্কিস এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিক (টিএআই) তুরস্কের নৌবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিভাবে একটি ‘আকসঙ্গুর’ মাল্টিরোল এণ্ড কমব্যাট ড্রোন (ইউসিএভি) হস্তান্তর করে। আর এর মাধ্যমে মুলত তুর্কী এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টিআইএ) এর তৈরি নতুন উচ্চ প্রযুক্তির ‘আকসঙ্গুর’ হেভী কমব্যাট ড্রোন (ইউসিএভি) তার নতুন যাত্রা শুরু করল। বর্তমানে বিশ্বের বুকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের পাশাপাশি তুরস্ক তার নিজস্ব প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী সক্ষমাকে কাজে লাগিয়ে বেশকিছু নতুন সিরিজের হেভী কমব্যাট ড্রোন সার্ভিসে এনে সারা বিশ্বকে একেবারেই চমকে দিয়েছে।

তার্কিস এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিক (টিএআই) তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি ‘আকসঙ্গুর’ হেভী কমব্যাট ড্রোন (ইউসিএভি) নিয়ে এক দশক আগে থেকেই কাজ শুরু করলেও এর প্রথম সফল ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করে ২০১৯ সালের ২০শে মার্চ। তবে মাত্র দুই বছরে ৬০ এর কাছাকাছি ফ্লাইট টেস্ট পরীক্ষা ও গবেষণা শেষে চূড়ান্তভাবে তুরস্কের নৌবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হলো। তাছাড়া ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৬টি প্রটোটাইপ কপি তৈরি করা হলেও ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত মোট ৫টি হেভী ‘আকসঙ্গুর’ মাল্টিরোল এণ্ড কমব্যাট ড্রোন (ইউএভি) তুর্কী নৌবাহিনীতে সার্ভিসে আনা হয়েছে।

‘আকসুঙ্গুর’ ড্রোন (ইউসিএভি) হচ্ছে একটি মিডিয়াম-আল্টিটিউট লং-ইনডিউরেন্স (এমএএলই) ড্রোন। যা যুদ্ধক্ষেত্রে কমব্যাট মিশনের পাশাপাশি মাল্টিরোল হিসেবে ইন্টালিজেন্স, সার্ভেলাইন্স এণ্ড রিকর্নিয়েন্স অপারেশনের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এটিকে মুলত স্যাটালাইট কমিউনিকেশন সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। গোপন কমাণ্ড সেন্টার থেকে একজন অপারেটর এটিকে নিয়ন্ত্রন করেন। তবে কোন কারণে কমাণ্ড সেন্টারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে এটি তার নিজস্ব উচ্চ প্রযুক্তির কম্পিউটার সিস্টেমের নির্দেশে কমব্যাট মিশন শেষে করে নির্ধারিত বেসে ফিরে আসতে পারে।

গত ২০২১ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর তুর্কী এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টিআইএ) তাদের ‘আকসুঙ্গুর’ কমব্যাট ড্রোন (ইউএভি) ১২টি স্মার্ট মাইক্রো মিউনেশন (এমএএম-এল বোম্বস) নিয়ে আকাশে টানা ২৮ ঘন্টা পরীক্ষামুলক উড্ডয়ন সম্পন্ন করে। এই সময়ে ড্রোনটি আকাশে ২০ হাজার ফিট উচ্চতায় ২৫০ কেজি পেলোড নিয়ে মিশন শেষ করে। তাছাড়া গত ২রা সেপ্টম্বর ‘আকসুঙ্গুর’ ড্রোন তার ৫৯ তম ফ্লাইট টেস্ট মিশনে একটানা ৪৯ ঘন্টা আকাশে উড্ডয়ণ করে আগের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছিল।

এই মাল্টিরোল ড্রোনের (ইউসিএভি) এর দৈর্ঘ্য ১২ মিটার এবং উইনস্প্যান ২৮ মিটার এবং উচ্চতা ৩ মিটার। সম্পূর্ণ খালি অবস্থায় এর ওজন ১,৮০০ কেজি এবং ম্যাক্সিমাম টেক অফ ওয়েট ৩,৩০০ কেজি। আকাশে উড্ডয়ন বা শক্তি যোগানোর জন্য এটিতে তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি ২টি টিইআই ৪ সিলিণ্ডারের পিডি-১৭০ লিকুইড কুলড টার্বোচার্জ (১৭০-২২০ হর্স পাওয়ার) ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এর ক্রইজ স্পিড ২৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা এবং এর রেঞ্জ প্রায় ৬,৫০০ কিলোমিটার। এটি আকাশে একটানা ৬০ ঘন্টা পর্যন্ত উড্ডয়ন করতে পারে এবং এটিকে ভূমি থেকে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার ফিট উচ্চতায় শত্রু পক্ষের অবস্থানে নজরদারি বা হামলা চালানোর উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে।

‘আকসুঙ্গুর’ মাল্টিরোল কমব্যাট (এমএএলই) ড্রোন মোট ৭৫০ কেজি ওজনের গাইডেড বোম্বস ও মিসাইল নিয়ে কমব্যাট মিশন পরিচালনা করতে পারে। এটি তার ৬টি হার্ড পয়েন্টে রকেটসানের তৈরি সিরিট মিসাইল বহণ করে। তাছাড়া এটি এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফার রকেট এবং মেরিটাইম স্টাইকের জন্য ছোট আকারের টর্পেডো বহণ করে। বোম্বস হিসেবে এটিতে স্মার্ট মাইক্রো মিউনেশন এমএএম-এল, এমএএম-সি এর পাশাপাশি তাবির-৮১ এবং তাবির-৮২ লেজার গাইডেন্স কিটস ইন্সটল করা যায়। তাছাড়া প্রিসিয়ন গাইডেন্স কিটস হিসেবে এইচজিকে-৮২/৩ মিউনেশন বহণ করতে সক্ষম। আর ‘আকসঙ্গুর’ মাল্টিরোল ড্রোনে প্রথম বারের মতো ‘তাবির’ সিরিজের লেজার গাইডেন্স কিট ইনস্টল করা হয়েছে।

গত এপ্রিল মাসে তার্কিস মিনিস্ট্রি অব ন্যাশনাল ডিফেন্স কিছু ভিডিও রিলিজ করেছিল। যাতে চলতি ২০২২ সালের ১১ই এপ্রিল এবং ২১শে এপ্রিলে নৌবাহিনীর ব্লু হোমল্যান্ড ২০২২ (Mavi Vatan-2022) নামক সামরিক মহড়ায় ‘আকসঙ্গুর’ কমব্যাট ড্রোন সমুদ্রে থাকা সুনিদিষ্ট টার্গেটকে রকেটসানের তৈরি এমএএম-এল (লেজার গাইডেড স্মার্ট মাইক্রো মিউনিশন) দিয়ে সফলভাবে ধ্বংস করে দেয়।

প্রাথমিকভাবে ‘আকসুঙ্গুর’ মাল্টিরোল কমব্যাট (এমএএলই) ড্রোনটিকে তুরস্কের নৌবাহিনীর জন্য তৈরি করা হলেও এটিকে অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানির করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তুরস্কের সরকার। খুব সম্ভবত কাতার আন্তর্জাতিক প্রথম ক্রেতা দেশ হিসেবে ইতোমধ্যেই এই জাতীয় হেভী কমব্যাট ড্রোন ক্রয় করার প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, গ্রামঃ ছোট চৌগ্রাম, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

BySherazur Rahman

মিডিয়াম রেঞ্জের জে-৬০০টি থান্ডারবোল্ট (Yıldırım IV) সিরিজের ব্যালেস্টিক মিসাইল সার্ভিসে আনতে যাচ্ছে তুরস্কঃ

তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি জে-৬০০টি থান্ডারবোল্ট (Yıldırım IV) সিরিজের মিসাইল হচ্ছে একটি নতুন প্রজন্মের কনভেনশনাল ওভারহেড সমৃদ্ধ মিডিয়াম রেঞ্জের ব্যালিস্টিক মিসাইল। এটি মুলত ম্যানুফ্যাকচারিং করে তুর্কী ডিফেন্স সিস্টেম ম্যানুফ্যাকচারিং জায়ান্ট রকেট সান কোম্পানি। এটিকে মুলত শত্রু পক্ষের হাই-ভ্যালু টার্গেট যেমন সামরিক স্থাপনা, সি৩আই কমান্ড সেন্টার, লজিস্টিক এন্ড ইনফ্যারাস্টাকচার ফ্যাসালিটি ধ্বংস করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।

জে-৬০০টি (Yıldırım IV) থান্ডারবোল্ট ব্যলেস্টিক মিসাইলের সর্বোচ্চ রেঞ্জ ২,৫০০ কিলোমিটার। এটি এখনো পর্যন্ত গবেষণা ও উন্নয়নের চূড়ান্ত স্তরে রয়েছে। আসলে ২.১ টন ওজনের এই ব্যালেস্টিক মিসাইলের দৈর্ঘ্য ৬.১ মিটার এবং ডায়ামিটার ৬০ সেন্টিমিটার। এর গতি সুপারসনিক এবং এটি একটি ৪৮০ কেজি ওজনের হাই এক্সপ্লুসিভ কনভেনশনাল ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।

গাইডেন্স সিস্টেম হিসেবে এটিতে ইন্টারনাল এণ্ড অপ্টিক্যাল গাইডেন্স সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। জে-৬০০টি থান্ডারবোল্ড ব্যালেস্টিক মিসাইলের মোট ৪টি সিরিজের ৩টি সর্ট রেঞ্জের (এসআরবিএম) এবং ১টি মিডিয়াম রেঞ্জের (এমআরবিএম) মিসাইল তৈরি করে তুরস্কের রকেটসান কোম্পানি।

তুরস্কের সামরিক বাহিনী ২০০১ সাল থেকে জে-৬০০টি সিরিজের শর্ট রেঞ্জের ব্যালেস্টিক মিসাইল অপারেট করলেও তাদের সর্বশেষ সিরিজের ২,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার জে-৬০০টি (Yıldırım IV) থান্ডারবোল্ট ব্যলেস্টিক মিসাইল এখনো পর্যন্ত কিন্তু সার্ভিসে আসেনি।

প্রতিটি জে-৬০০টি সিরিজের ব্যালেস্টিক মিসাইলের ব্যাটারিতে থাকে ১টি কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল যান, ২টি ফায়ারিং টিম কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল যান, ৬টি এফ-৬০০টি লাউঞ্জার ভিকলস, ৭টি এফ-৬০০টি রিলোড এবং রিসাপ্লাই ভিকলস এবং ১টি মেইন্টেনেন্স ভিকল।

বর্তমানে সার্ভিসে থাকা শর্ট রেঞ্জের জে-৬০০টি এর (ইলড্রিম-১) সিরজের রেঞ্জ ১৫০ কিলোমিটার, (ইলড্রিম-২) সিরিজের রেঞ্জ ৩০০ কিলোমিটার এবং ইলড্রিম-৩ সিরজের রেঞ্জ ৯০০ কিলোমিটার। গ্রীসের সাথে চলমান সামরিক উত্তেজনা ও বিরোধের মুখে তুর্কী সামরিক বাহিনী খুব দ্রুতই তার মিডিয়াম রেঞ্জের জে-৬০০টি ইলড্রিম-৪ সিরিজের ২,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ট্যাকটিক্যাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (এমআরবিএম) ২০২২ সালের শেষের দিকে সার্ভিসে আনতে কাজ করে যাচ্ছে।

Sherazur Rahman

BySherazur Rahman

বাংলাদেশে আটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে বিপুল সম্ভবনা ও বিনয়োগের হাতছানিঃ

১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের আগে থেকেই ভারত অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তাদের বিশ্ব মানের অটোমোবাইলস ব্রান্ড এবং গ্রুপ অব কোম্পানি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দেশ ভাগের আগেই ১৯৪৫ সালে ভারতের বিখ্যাত অটোমোবাইলস কোম্পানি বাজাজ অটো লিমিটেড কোম্পানি গঠিত হয়। এই কোম্পানির ২০২২ সালে ৪.৩ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন।

আবার হিরো মোটোক্রোপ লিমিটেড (Hero MotoCorp Limited) বা হিরো হোন্ডা ম্যানুফযাকচারিং কোম্পানি হিরো মটোক্রোপ লিমিটেড ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্টা করা হয় এবং প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে প্রায় ৪.১ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন করে।

ভারতের মাহিন্দ্রা এন্ড মাহিন্দ্রা লিমিটেড ১৯৪৫ সালে গঠিত হয় এবং এই কোম্পানিটি ২০২১ সালে ৯.৭ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন করে এবং এর মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬৭ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে ভারতের টাটা গ্রুপের অঙ্গ সংস্থা টাটা মটোরস আজ থেকে ৭৭ বছর আগে ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটি ২০২১ সালে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন করে এবং তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪৫ বিলিয়ন ডলার। যদিও অবশ্য ২০২১ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী মূল কোম্পানি টাটা গ্রুপের মোট মার্কেট ক্যাপিটাল ভেলু ৩১৪ বিলিয়ন ডলার এবং টাটা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২২ অর্থ বছরে মোট ১৪৮ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন করেছে।

প্রথম দিকে ভারতের এই অটোমোবাইলস কোম্পানিগুলো জাপানসহ বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তি নিয়ে এস্যাম্বি করলেও বর্তমানে তারা কিন্তু একেবারে দেশীয় প্রযুক্তিতে শতাধিকের উপর মডেল বা সিরিজের লাক্সজারিয়াস কার, মোটোরসাইকেল, সিএনজি অটোরিক্সা, ট্রাক ম্যানুফযাকচারিং করে এবং সারা বিশ্বে রপ্তানি করে। আর আটোমোবাইলস সেক্টরে ভারতের এই বিশাল অর্জন এমনি এমনি চলে আসেনি। এর পেছনে রয়েছে বেসরকারি খাতের বিপুল বিনিয়োগ, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন।

এদিকে আমাদের দেশের রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০২১ সালে এই কোম্পানির নিট রেভিনিউ আনুমানিক ২২০ মিলিয়ন ডলার। এটা অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। তবে বাংলাদেশের বেশকিছু অটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পনি ইলেক্ট্রিক মোটর চালিত ই-বাইক বাজারে আনলেও এর প্রযুক্তি সহ সবকিছুই কিন্তু চীন থেকে নিয়ে এসে এসেম্বল করে থাকে। এতে করে কোম্পানিগুলো কিছুটা মুনাফা অর্জন করলেও কিন্তু মূল লাভের অংশটা শেষমেশ চলে যাচ্ছে চীনের পকেটেই।

এখানে বুঝতে হবে বর্তমানে অটোমোবাইলস সেক্টরে আমাদের দেশীয় প্রযুক্তি বা নিজস্ব ব্রান্ড বলতে আসলে কিছুই নেই। সবই হচ্ছে রেড জায়ান্ট চীনের যাদুর বদৌলতে। এদিকে ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আমাদের দেশের প্রগতি অটোমোবাইলস লিমিটেড জাপানসহ অন্যান্য দেশ থেকে ইমপোর্ট করে আনা গাড়ির যন্ত্রাংশ সংযোজন করত এবং এখনো পর্যন্ত সেই একই কাজ করে যায়। তারা কিন্তু গবেষণা করে আজো নিজস্ব ব্রান্ডের কার বাজারে এনে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার পরিচয় জাতির কাছে তুলে ধরতে পারেনি।

তবে খুব ধীরে হলেও আমাদের দেশে নিজস্ব প্রযুক্তি এবং ব্যান্ডের বিশ্ব মানের অটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরিতে দেশীয় এবং বিদেশী প্রতিষ্ঠাগুলো বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন। বিশেষ করে আমাদের দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ থাকায় জাপান এবং মালয়েশিয়ার অটোমোবাইলস কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তাদের ম্যানুফযাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব প্রতিষ্ঠায় প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই আমাদের অবশ্যই এসব বৈদেশিক বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি প্রাপ্তির সুযোগগুলোকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে অটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে স্বনির্ভরতা অর্জনের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না।

তবে বর্তমানে বাংলাদেশের পিএইচপি অটোমোবাইলস কোম্পানি লিমিটেড মালেয়শিয়ার সাথে যৌথভাবে লাক্সারী গাড়ি উৎপাদন বা এসেম্বলী প্লান্ট সাফল্যের সাথে চালু করেছে। ২০২২ সাল নাগাদ তাদের স্থাপিত ভারি অটোমোবাইল এসম্বলী প্লান্টে বছরে গড়ে ১,২০০ গাড়ি উৎপাদনের ব্যাপক লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে আমাদের দেশের স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান পিএইচপি গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পিএইচপি অটোমোবাইলস লিমিটেড। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের সোনার বাংলাদেশকে গাড়ি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করতে এক রকম বদ্ধপরিকর হয়েই কাজ করে যাচ্ছে পিএইচপি গ্রুপ।

জাপানের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এণদ ম্যানুফ‍্যাকচারিং হাবগুলো চীন থেকে সরিয়ে অন্যান্য বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলোতে নতুন করে স্থাপন করার মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে শুরু করে দিয়েছে। আর এই বৈদেশিক বিনিয়োগের ১০% হলেও বাংলাদেশে নিয়ে আসার বড় ধরণের সুযোগ রয়েছে। তবে এজন্য আমাদের অবশ্যই দক্ষ জনশক্তি এবং ইতিবাচক বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।

Sherazur Rahman