এভিয়েশন প্রযুক্তির ব্যবহার ও জয়যাত্রা ১৯০৩ সালে শুরু হলেও এই এক বিংশ শতাব্দীতে এসেও বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশ একেবারে স্বাধীনভাবে শতভাগ নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে এডভান্স ফাইটার জেট ডিজাইন ও তৈরি করতে সক্ষম। এই তিনটি দেশ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ফ্রান্স। আর এই তিনটি দেশ ব্যাতিত চীন নিজস্ব প্রযুক্তির জেট ফাইটার তৈরি করলেও ইঞ্জিনসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রযুক্তির জন্য এখনো পর্যন্ত রাশিয়া বা অন্য কোন দেশের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে রয়েছে।

তাছাড়া এই চারটি দেশ ব্যাতিত যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তুরস্ক, সুইডেন, ভারত, পাকিস্তানের মতো দেশ যুদ্ধবিমান তৈরি করলেও এর প্রযুক্তি এবং বিভিন্ন ধরণের গুরুত্বপূর্ণের যন্ত্রাংশের ৫০% থেকে ৬০% পর্যন্ত অন্য কোন দেশ হতে আমদানি করে আনতে হয়। আবার ইউরোফাইটার তাইফুন যুক্তরাজ্য, জার্মান, ইতালী এবং স্পেন অংশীদ্বারিত্বের ভিত্তিতে ম্যানুফ্যাকচারিং করে। এটিও কিন্তু একক কোন দেশের পক্ষে তৈরি করার সুযোগ নেই।

তবে যাই হোক না কেন, ফাইটার জেটের পেলোড বা অস্ত্র বহণ করার সক্ষমতার বিচারে কাগজে কলমে হলেও সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে চীনের চেংদু জে-২০ স্টেলথ জেট ফাইটার। চীনের দেয়া ভাষ্যমতে, তাদের নতুন প্রজন্মের জে-২০ স্টিলথ জেট ফাইটার আনুমানিক ১১,০০০ কেজি বা ১১ টন পে-লোড বহণ করতে সক্ষম।

চীনের তরফে এক্ষেত্রে যাই বলা হোক না কেন, বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কিছু কথা। কারণ চীনের জে-২০ জেট ফাইটের ব্যাবহার করা হয়েছে সেই আশির দশকের রাশিয়ান পুরনো এএল-৩১এফ আফটার টার্বোফ্যান ইঞ্জিন বা চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি নিম্ন মানের ডাব্লিউএস-১০বি ইঞ্জিন। আর এই জাতীয় পুরনো টুইন ইঞ্জিন দিয়ে ১১টন ওজনের পে-লোড কোন স্টেলথ জেট ফাইটারের পক্ষে আকাশে উড্ডয়ন করা কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ঠ অবকাশ থেকেই যাচ্ছে। তবে অদূর ভবিষ্যতে চীন তাদের নতুন প্রজন্মের জেট ফাইটারে হাইলী এডভান্স জিয়ান ডাব্লিউএস-১৫ আফটার টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিন ব্যবহার শুরু করতে যাচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সত্তরের দশকের জয়েন্ট স্টাইক এফ-১৫ এর পরীক্ষিত পে-লোড ক্যাপাসিটি বা অস্ত্র বহণ করার ক্ষমতা ১০,৪০০ কেজি বা ১০.৪ টন। যা কিনা যুদ্ধবিমানটিকে এক রকম নিশ্চিতভাবেই বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় সক্ষমতার জেট ফাইটারের স্থানে নিয়ে গেছে বহু আগেই। এফ-১৫ প্রায় চার দশক ধরে আকাশ যুদ্ধে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে।

আমেরিকার নতুন প্রজন্মের এফ-৩৫ জয়েন স্টাইক স্টেলথ জেট ফাইটারের মোট পেলোড ক্যাপাসিটি ৮,২০০ কেজি হলেও শুধু ‘ওয়েপন্স-বে’ তে এর ম্যাক্সিমাম পেলোড ক্যাপাসিটি ২,৬০০ কেজি এবং এফ-২২ র‍্যাপ্টারের ‘ওয়েপন্স-বে’ তে পেলোড ক্যাপাসিটি ২,২০০ কেজি।

বিশ্বের সেরা ২০০ কিলমিটার রেঞ্জের মেটওর এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইল সমৃদ্ধ ফ্রান্সের এডভান্স রাফায়েল জেট ফাইটারের ম্যাক্সিমাম পে-লোড ক্যাপাসিটি ৯.৫ টন। ইউরোফাইটার টাইফুনের পে-লোড ক্যাপাসিটি ৯ টন। আবার রাশিয়ার এসইউ-৫৭ সুপার স্টিলথ এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটারের পে-লোড ক্যাপাসিটি ৯ টন, এসইউ-৩৫এস সিরিজের জেট ফাইটারের পে-লোড ক্যাপাসিটি ৮ টন, মিগ-৩৫ এর পে-লোড ক্যাপাসিটি ৬.৫ টন এবং এসইউ-৩০ এসএমই জেট ফাইটারের পে-লোড কযাপাসিটি ৮ টন।

এদিকে সিঙ্গেল ইঞ্জিনের জেট ফাইটারের বিবেচনায় মার্কিন এফ-১৬ এর পে-লোড ক্যাপাসিটি ৭.৭ টন বা ৭,৭০০ কেজি, সুইডিস গ্রোপেন-ই জেট ফাইটারের ম্যাক্সিমাম পে-লোড ক্যাপাসিটি ৫,৩০০ কেজি বা ৫.৩ টন, ভারতের তেজাস হাল লাইট জেট ফাইটারের পে-লোড ক্যাপাসিটি ৫,৭০০ কেজি বা ৫.৭ টন, চীন-পাকিস্তান জয়েন্ট প্রডাক্ট জেএফ-১৭ থাণ্ডার লাইট জেট ফাইটারের ম্যাক্সিমাম পে-লোড ক্যাপাসিটি ৫.৫ টন বা ৫,৫০০ কেজি এবং চীনের জে-১০ সিঙ্গেল ইঞ্জিন জেট ফাইটারের ম্যাক্সিমাম পে-লোড ক্যাপাসিটি ৭ টন বা ৭,০০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকতে পারে।

তবে বিশ্বের এভিয়েশন প্রযুক্তি নির্ভর অনেক দেশকে ছাপিয়ে নতুন প্রজন্মের স্টেলথ জেট ফাইটারের সফল ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করেছে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটি মুলত গত ১৯শে জুলাই বিশ্বের চতুর্থ একক দেশ হিসেবে তাদের কেএফ-২১ নেক্সড জেনারেশন ফাইটার জেটের পরীক্ষামুলক সফল উড্ডয়ন শেষ করে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার দেয়া তথ্যমতে, ২,৯০০ কিলোমিটার রেঞ্জের কেএফ-২১ নেক্সড জেনারেশন যুদ্ধবিমান আনুমানিক ৩ হাজার কেজি পর্যন্ত অস্ত্র ও মিসাইল ধারণ করতে সক্ষম।

Sherazur Rahman