সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সার্ভিসে এসেছে তুরস্কের তৈরি ডেডিকেটেড বায়রাখতার টিবি-২ কমব্যাট এন্ড সার্ভেল্যান্স (ইউসিএভি) ড্রোন। বাংলাদেশের আকাশে ইতোমধ্যেই এর পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন শুরু হয়ে গেছে। ব্যাটল প্রুভেন টিবি-২ কমব্যাট ড্রোন ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তার পাশাপাশি কিছুদিন আগেই নার্গানো কারাবাখে এই ড্রোন দিয়ে আর্মেনিয়ান সামরিক বাহিনীর উপর সফল এয়ার স্টাইক চালিয়েছে আজারবাইজান।

তাছাড়া চলতি ২০২৩ সালের জুন মাসের দিকে কুয়েত সরকার সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের ড্রোন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ‘বায়কার’ এর সাথে মোট ৩৬৭ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি সম্পন্ন করেছে। এই চুক্তিটি গত ১৩ই জুন কুয়েতের সেনাবাহিনীর টুইটার অ্যাকাউন্টে নিশ্চিত করা হয়। তার পাশাপাশি ২৮ তম দেশ হিসেবে তার্কিস বায়রাক্তার টিবি-২ কমব্যাট ড্রোন আত্মপ্রকাশ করে মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট দেশ কুয়েত।

তুরস্কের বায়কার কোম্পানির তৈরি বায়রাখতার টিবি-২ কমব্যাট ড্রোন হচ্ছে একটি অ্যাডভান্স মিডিয়াম এল্টিটিউট লং এন্ডিউরেন্স (এমএএলই) কমব্যাট ড্রোন (ইউসিএভি)। যা কিনা একাধারে ইন্টেলিজেন্স, সার্ভেলেন্স, রিকর্নিসেন্স এবং তার পাশাপাশি শত্রু সীমানায় সরাসরি কমব্যাট বা অ্যাটাক মিশনে পরিচালনা করার বিশেষ উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ ১৮ হাজার ফিট উচ্চতায় একাধারে ২৭ ঘণ্টা পর্যন্ত কমব্যাট মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম এবং এর গতি প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২০ কিলোমিটার।

টিবি-২ কমব্যাট ড্রোনের পে-লোড ক্ষমতা অনেকটা সীমিত হলেও এটি ১৫০ কেজি ওজন পর্যন্ত অস্ত্র ও ৪টি সিরিট মিসাইল বহন করতে পারে। এই ড্রোনের ৪টি হার্ড পয়েন্টে এন্টি-ট্যাংক এণ্ড এন্টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মিসাইল, এল-ইউএমটিএএস, এমএএম-সি/এল প্রেসিসন গাইডেড মিউনিশন, রকেটসান সিরিট ৭০ এমএম মিসাইল সিস্টেমসহ গাইডেড এণ্ড আন-গাইডেড রকেট ও নিউনেশন ইনস্টল করা যায়।

তুরস্ক মূলত বিগত এক যুগ থেকেই তাদের উচ্চ প্রযুক্তির ড্রোন (ইউসিএভি) উন্নয়ন এবং ডিজাইনে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তুরস্কের ‘বায়কার’ ড্রোন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে বায়রাক্তার টিবি-২ কমব্যাট ড্রোনের (ইউসিএভি) প্রথম সফল ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করে। তাছাড়া দেশটির সামরিক বাহিনী ২০১৫ সাল থেকেই এই জাতীয় ড্রোন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এবং কার্যকরভাবে ব্যবহার করে আসছে।

২০১৪ সালে প্রথম ব্যাচে ৬টি এবং ২০১৫ সালে দ্বিতীয় ব্যাচে ৬টি এই জাতীয় কমব্যাট ড্রোন সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে বায়রাক্তার টিবি-২ কমব্যাট ড্রোনের যাত্রা শুরু করে তুরস্ক। বর্তমানে তুরস্কের সামরিক বাহিনীর হাতে প্রায় দুই শতাধিকের অধিক সংখ্যক এই জাতীয় অ্যাডভান্স কমব্যাট ড্রোন অপারেশনাল রয়েছে। এদিকে তুর্কি ড্রোন ম্যানুফ্যাকচারিং জায়ান্ট বায়কার কোম্পানি সাম্প্রতিক সময়ে ক্যারিয়ার বেসড নতুন প্রজন্মের টিবি-৩ (মেরিটাইম) কমব্যাট ড্রোনের বেশকিছু সফল পরীক্ষা চালিয়েছে।

চলতি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত তুরস্ক মোট ৩১ দেশের কাছে বায়রাখতার টিবি-২ কমব্যাট ড্রোন রপ্তানি করেছে কিংবা রপ্তানির চুক্তি সম্পন্ন করেছে। তুরস্কের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি এই জাতীয় অ্যাডভান্স কমব্যাট ড্রোন সংগ্রহ করে ইউক্রেন। ইউক্রেন গত ২০২১ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৬০টির কাছাকাছি টিবি-২ কমব্যাট ড্রোন ক্রয় করে। যার একটি বড় অংশ ইতোমধ্যেই যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া ধ্বংস করেছে।

তাছাড়া এ মুহূর্তে কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কসোভো, পোল্যান্ড, লিবিয়া, কুয়েত, বাংলাদেশ, মরক্কো, আজারবাইজানসহ আরো বেশকিছু দেশের সামরিক বাহিনী এটি অপারেট করে। তবে একক দেশ হিসেবে তুরস্কের বাহিরে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদেশ হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশে সংযুক্ত আরব আমিরাত ওয়েপন্স এন্ড ট্রেনিং প্যাকেজসহ ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে মোট ১২০টি হাইলি অ্যাডভান্স বায়রাখতার টিবি-২ কমব্যাট এন্ড সার্ভেল্যান্স ড্রোন (ইউসিএভি) ক্রয়ের চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন করেছে কিংবা করতে যাচ্ছে।

Sherazur Rahman