পাকিস্তানের বিমান বাহিনী চীন থেকে ৩৬টি ৪++ প্রজন্মের জে-১০সি সিরিজের এডভান্স এক্সপোর্ট ভার্সন জে-১০সিই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করেছে। পাকিস্তান মুলত চীনের সাথে ১.৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ৩৬টি জে-১০বি সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটার ক্রয়ের প্রাথমিক চুক্তি করে ২০০৯ সালে।
চীন ইতোমধ্যেই পাকিস্তান বিমান বাহিনীর হাতে ১২টি জে-১০সিই সিরিজের এডভান্স যুদ্ধবিমান সরবরাহ করছে। অবশিষ্ট ২৪টি যুদ্ধবিমান পর্যায়ক্রমে পাকিস্তানকে সরবরাহ করবে চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন। পাকিস্তান কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই জাতীয় মোট ৬০টি সিঙ্গেল ইঞ্জিনের যুদ্ধবিমান সার্ভিসে আনবে।
তবে পরবর্তীতে চুক্তি সংশোধন করে ২০১৩ সালের ৭ই অক্টোবর জে-১০বি সিরিজের যুদ্ধবিমানের স্থলে মোট ২৫টি জে-১০সিই সিরিজের যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চূড়ান্ত চুক্তি করে পাকিস্তান। তবে শেষমেশ ৩৬টি এই জাতীয় যুদ্ধবিমান ক্রয়ের জন্য খুব সম্ভবত মোট ২.২ বিলিয়ন ডলারের বিশাল আকারের নতুন চুক্তি সম্পন্ন করে পাকিস্তান। এর মাধ্যমে পাকিস্তান চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমানের প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
চুক্তি মোতাবেক পাকিস্তান এই যুদ্ধবিমানের সাথে অজানা সংখ্যক চীনের তৈরি অত্যাধুনিক পিএল-১৫ই এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইল পেতে যাচ্ছে। ৪.৫ ম্যাক গতি সম্পন্ন পিএল-১৫ এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইলের সর্বোচ্চ রেঞ্জ ২৮০ কিলোমিটার বলা হলেও এর এক্সপার্ট ভার্সনের পিএল-১৫ই সিরিজের এডভান্স এয়ার টু এয়ার মিসাইলের সর্বোচ্চ রেঞ্জ ১৪৫ কিলোমিটার। আর পাকিস্তান বিমান বাহিনী অন্যান্য অস্ত্রের সাথে এই ১৪৫ কিলোমিটার রেঞ্জের পিএল-১৫ই সিরিজের বিয়োন্ড ভিজুয়াল রেঞ্জ (বিভিআর) এয়ার টু এয়ার মিসাইল পাবে।
চীন কার্যত তার নিজস্ব প্রযুক্তির জে-১০সিই সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটারটিকে পূর্বের এ ও বি সিরিজের সকল সীমাবদ্ধতা ও প্রযুক্তিগত ত্রুটিমুক্ত করে একেবারে অধুনিক (এইএসএ) রাডার ও এভিয়নিক্স সিস্টেম দ্বারা সজ্জিত করে সার্ভিসে এনেছে। এটিতে চীন পূর্বের এএল-৩১এফ আফটার টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিনের পরিবর্তে চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি ডাব্লিউএস-১০বি সিরিজের অত্যন্ত শক্তিশালী আফটার টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে।
এর এভারেজ কমব্যাট রেঞ্জ ২,৬০০ কিলোমিটার এবং সর্বোচ্চ গতি ২.১ ম্যাক। তাছাড়া এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫৯ হাজার ফিট উচ্চতায় কমব্যাট মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম। জে-১০সিই সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটার ডিজাইন এবং তৈরিতে চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করেছে। এর ম্যাক্সিমাম পেলোড ক্যাপাসিটি প্রায় ৭.২ টন এবং পার আওয়ার অপারেটিং কস্ট আনুমানিক প্রায় ৬-৭ হাজার ডলার হতে পারে।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর নতুন করে সংগ্রহ করা সিঙ্গেল ইঞ্জিনের ৩৬-৬০টি জে-১০সিই সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটার ভারতের বিমান বাহিনীর টুইন ইঞ্জিনের রাফাল জেট ফাইটারের দরাসরি বিকল্প কিছু না হলেও এটি কিন্তু পাকিস্তান বিমান বাহিনীর এয়ার কমব্যাট সক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না।
পরিশেষে বলা যায় যে, ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মুখে থাকা পাকিস্তান এই চুক্তিটি নগদ ডলারের বিনিময়ে নাকি দেশের কোন সমুদ্র বন্দর বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা চীনের কাছে লিজ দিয়ে শেষ করেছে তা কিন্তু স্পষ্ট নয়। কারণ পাকিস্তানের যতই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট ও বেল আউট হোক না কেন দেশটির প্রতি বছর সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাজেট ও অস্ত্র ক্রয়ের তালিকা দেখলে যে কেউই চমকে যেতে পারে।