১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের আগে থেকেই ভারত অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তাদের বিশ্ব মানের অটোমোবাইলস ব্রান্ড এবং গ্রুপ অব কোম্পানি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দেশ ভাগের আগেই ১৯৪৫ সালে ভারতের বিখ্যাত অটোমোবাইলস কোম্পানি বাজাজ অটো লিমিটেড কোম্পানি গঠিত হয়। এই কোম্পানির ২০২২ সালে ৪.৩ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন।
আবার হিরো মোটোক্রোপ লিমিটেড (Hero MotoCorp Limited) বা হিরো হোন্ডা ম্যানুফযাকচারিং কোম্পানি হিরো মটোক্রোপ লিমিটেড ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্টা করা হয় এবং প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে প্রায় ৪.১ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন করে।
ভারতের মাহিন্দ্রা এন্ড মাহিন্দ্রা লিমিটেড ১৯৪৫ সালে গঠিত হয় এবং এই কোম্পানিটি ২০২১ সালে ৯.৭ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন করে এবং এর মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬৭ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে ভারতের টাটা গ্রুপের অঙ্গ সংস্থা টাটা মটোরস আজ থেকে ৭৭ বছর আগে ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটি ২০২১ সালে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন করে এবং তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪৫ বিলিয়ন ডলার। যদিও অবশ্য ২০২১ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী মূল কোম্পানি টাটা গ্রুপের মোট মার্কেট ক্যাপিটাল ভেলু ৩১৪ বিলিয়ন ডলার এবং টাটা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২২ অর্থ বছরে মোট ১৪৮ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন করেছে।
প্রথম দিকে ভারতের এই অটোমোবাইলস কোম্পানিগুলো জাপানসহ বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তি নিয়ে এস্যাম্বি করলেও বর্তমানে তারা কিন্তু একেবারে দেশীয় প্রযুক্তিতে শতাধিকের উপর মডেল বা সিরিজের লাক্সজারিয়াস কার, মোটোরসাইকেল, সিএনজি অটোরিক্সা, ট্রাক ম্যানুফযাকচারিং করে এবং সারা বিশ্বে রপ্তানি করে। আর আটোমোবাইলস সেক্টরে ভারতের এই বিশাল অর্জন এমনি এমনি চলে আসেনি। এর পেছনে রয়েছে বেসরকারি খাতের বিপুল বিনিয়োগ, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন।
এদিকে আমাদের দেশের রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০২১ সালে এই কোম্পানির নিট রেভিনিউ আনুমানিক ২২০ মিলিয়ন ডলার। এটা অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। তবে বাংলাদেশের বেশকিছু অটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পনি ইলেক্ট্রিক মোটর চালিত ই-বাইক বাজারে আনলেও এর প্রযুক্তি সহ সবকিছুই কিন্তু চীন থেকে নিয়ে এসে এসেম্বল করে থাকে। এতে করে কোম্পানিগুলো কিছুটা মুনাফা অর্জন করলেও কিন্তু মূল লাভের অংশটা শেষমেশ চলে যাচ্ছে চীনের পকেটেই।
এখানে বুঝতে হবে বর্তমানে অটোমোবাইলস সেক্টরে আমাদের দেশীয় প্রযুক্তি বা নিজস্ব ব্রান্ড বলতে আসলে কিছুই নেই। সবই হচ্ছে রেড জায়ান্ট চীনের যাদুর বদৌলতে। এদিকে ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আমাদের দেশের প্রগতি অটোমোবাইলস লিমিটেড জাপানসহ অন্যান্য দেশ থেকে ইমপোর্ট করে আনা গাড়ির যন্ত্রাংশ সংযোজন করত এবং এখনো পর্যন্ত সেই একই কাজ করে যায়। তারা কিন্তু গবেষণা করে আজো নিজস্ব ব্রান্ডের কার বাজারে এনে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার পরিচয় জাতির কাছে তুলে ধরতে পারেনি।
তবে খুব ধীরে হলেও আমাদের দেশে নিজস্ব প্রযুক্তি এবং ব্যান্ডের বিশ্ব মানের অটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরিতে দেশীয় এবং বিদেশী প্রতিষ্ঠাগুলো বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন। বিশেষ করে আমাদের দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ থাকায় জাপান এবং মালয়েশিয়ার অটোমোবাইলস কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তাদের ম্যানুফযাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব প্রতিষ্ঠায় প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই আমাদের অবশ্যই এসব বৈদেশিক বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি প্রাপ্তির সুযোগগুলোকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে অটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে স্বনির্ভরতা অর্জনের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না।
তবে বর্তমানে বাংলাদেশের পিএইচপি অটোমোবাইলস কোম্পানি লিমিটেড মালেয়শিয়ার সাথে যৌথভাবে লাক্সারী গাড়ি উৎপাদন বা এসেম্বলী প্লান্ট সাফল্যের সাথে চালু করেছে। ২০২২ সাল নাগাদ তাদের স্থাপিত ভারি অটোমোবাইল এসম্বলী প্লান্টে বছরে গড়ে ১,২০০ গাড়ি উৎপাদনের ব্যাপক লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে আমাদের দেশের স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান পিএইচপি গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পিএইচপি অটোমোবাইলস লিমিটেড। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের সোনার বাংলাদেশকে গাড়ি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করতে এক রকম বদ্ধপরিকর হয়েই কাজ করে যাচ্ছে পিএইচপি গ্রুপ।
জাপানের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এণদ ম্যানুফ্যাকচারিং হাবগুলো চীন থেকে সরিয়ে অন্যান্য বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলোতে নতুন করে স্থাপন করার মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে শুরু করে দিয়েছে। আর এই বৈদেশিক বিনিয়োগের ১০% হলেও বাংলাদেশে নিয়ে আসার বড় ধরণের সুযোগ রয়েছে। তবে এজন্য আমাদের অবশ্যই দক্ষ জনশক্তি এবং ইতিবাচক বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।
Sherazur Rahman