বিশ্বের অন্যতম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে তুরস্ক!

BySherazur Rahman

বিশ্বের অন্যতম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে তুরস্ক!

বৈশ্বিক বাজারে প্রতিরক্ষা সাজ সরঞ্জাম রপ্তানির ক্ষেত্রে চলতি ২০২৪ সালে অন্যতম অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে তুরস্ক। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্কের প্রতিরক্ষা সাজসরঞ্জাম এবং এ্যারোস্পেস সিস্টেম রপ্তানি রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্সি অফ ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজ (এসএসবি) এর দেয়া তথ্যমতে, সদ্য সমাপ্ত ২০২৪ সালে প্রায় ১৮০টি দেশে ৭.১৫৪ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে তুরস্কের ডিফেন্স রিলেটেড ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাবগুলো।

তুরস্কের এরদোয়ান প্রশাসন গত ২০২৪ সালের শুরুতে সারা বছরের জন্য ৬.৫ বিলিয়ন ডলারের ডিফেন্স সিস্টেম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। তবে দেশটি একই সময়ে সেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১১% অধিক পরিমাণ ও মূল্যের ডিফেন্স সিস্টেম রপ্তানির রেকর্ড গড়ে। গত ২০২৪ সালে তার পূর্বের ২০২৩ অপেক্ষা প্রায় ২৯% বেশি ডিফেন্স এবং এ্যারোস্পেস সিস্টেম রপ্তানি করে দেশটি। আর গত ২০২৩ সালের ১২ মাসে মোট ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা সাজ সরঞ্জাম রপ্তানি করে।

গত ২০২০ সালের দিকে করোনা মহামারির কারণে পর্যটন নির্ভর তুরস্কের অর্থনীতি মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গত ২০২৩ সাল থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে দেশটির সার্বিক অর্থনীতি এবং রপ্তানি আয়। বিশেষ করে গত ২০২৪ সালে ডিফেন্স সিস্টেমসহ সারা বিশ্বে রেকর্ড পরিমাণ মোট ২৬২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রপ্তানি করে। যেখানে গত ২০২৩ সালে দেশটির মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৫৫.৮ বিলিয়ন ডলার এবং গত ২০২২ সালে তা ছিল প্রায় ২৬১ বিলিয়ন ডলার।

তুরস্ক বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং নিজস্ব প্রযুক্তির সমন্বয়ে বিশ্ব মানের কমব্যাট ড্রোন, অ্যাটাক হেলিকপ্টার, স্বল্প রেঞ্জের মিসাইল, রকেট, লাইট ট্যাংক, আর্মাড ভেইকল (সামরিক সাঁজোয়া যান), ব্যাটল শিপ, রাডার এন্ড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম,আর্টিলারি সিস্টেমসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির লাইট আর্মস এবং ডিফেন্স সিস্টেম ম্যানুফ্যাকচারিং এবং নিজে ব্যবহারের পাশাপাশি সারা বিশ্ব রপ্তানির করে। তাছাড়া চলতি ২০২৫ সাল শেষে হয়ত ১০ বিলিয়ন ডলারের ডিফেন্স এন্ড এ্যারোস্পেস সিস্টেম রপ্তানির মাইলফলক অর্জন করতে পারবে বলে আশাবাদী দেশটি।

আজ থেকে প্রায় এক দশক আগেও তুরস্ককে একটি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানিকারক দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হত। অথচ বর্তমানে দেশটি পর্যায়ক্রমে তার অস্ত্র আমদানি ৮০% পর্যন্ত হ্রাস করে নিজস্ব এক সমৃদ্ধশালী প্রতিরক্ষা শিল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। তার পাশাপাশি নিজ দেশের মেধাবী তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগিয়ে তুরস্ক কিন্তু অত্যন্ত পরিকল্পনা মাফিক বেশকিছু বিশ্ব মানের ডিফেন্স সিস্টেম ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি গড়ে তুলেছে।

বর্তমানে তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ ডিফেন্স এন্ড এ্যারোস্পেস সিস্টেম ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির মধ্যে বায়রাক্তার, অ্যাসেলসান, হ্যাভেলসান, এসটিএম, টার্কিস এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টিএআই), রকেটসান কোম্পানি হচ্ছে অন্যতম। তার পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বের প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ইতালি, জার্মানি এবং স্পেনের মতো দেশের সাথে কলাব্রেট করে নিজ দেশেই বেশকিছু উচ্চাভিলাষী ডিফেন্স প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করছে তুরস্ক।

বিশেষ করে তুর্কি নৌবাহিনীর জন্য টিসিজি আনাদুলুর মতো ডেডিকেটেড ফ্ল্যাগশিপ লাইট হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার তৈরি করে এক নতুন প্রযুক্তিগত সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে তুরস্ক। তাছাড়া নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি নতুন প্রজন্মের (কেএএএন) অ্যাডভান্স কমব্যাট এয়ারক্রাফট এবং চালকবিহীন ‘কিঝিলএলমা’ এয়ারক্রাফট পরীক্ষামূলকভাবে আকাশে উন্নয়ন করে নিজের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও দক্ষতা বিশ্বের সামনে উন্মোচন করেছে। আর তুরস্করে এরদোয়ান সরকারের টেকসই এবং অত্যন্ত পরিকল্পিত প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশ সারা বিশ্বে ইতোমধ্যেই ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

তথ্যসূত্র:- দ্য ডেইলি সাবাহ, আনাদুলু, তুর্কি টুডে।

সিরাজুর রহমান, (Sherazur Rahman), শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

About the author

Sherazur Rahman author

Leave a Reply