মহাকাশ গবেষণায় চীনের অবিশ্বাস্য উত্থানঃ

BySherazur Rahman

মহাকাশ গবেষণায় চীনের অবিশ্বাস্য উত্থানঃ

সাম্প্রতিক সময়ে রকেট ডিজাইন ও ইঞ্জিনিয়ারিং এ একের পর এক চমক সৃষ্টি করে যাচ্ছে রেড জায়ান্ট চীন। বর্তমানে মহাকাশ ভিত্তিক নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, তৈরি ও গবেষণায় সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রবল প্রতিযোগিতা শুরু করে করেছে দেশটি। যারই ধারাবাহিকতায় এবার চীনের একটি বেসরকারি অ্যারোস্পেস কোম্পানি কয়লা ভিত্তিক তরল জ্বালানী ব্যবহার করে এই প্রথমবারের মতো মহাকাশে নতুন প্রজন্মের রকেট উৎক্ষেপণ করেছে।

যা বিশ্বের প্রথম ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে সারাবিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে চীন। কয়লা ভিত্তিক তরল জ্বালানি নির্ভর রকেটটি অতি সাম্প্রতিক সময়ে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় চিউকুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চড প্যাড থেকে সফলভাবে মহাকাশে পাঠানো হয়।

শুধু কি তাই চাঁদের উল্টো যে পাশে সূর্যের আলো পড়েনা সেখানে ল্যান্ডার নামিয়েছে চীন ও মঙ্গলগ্রহে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র পাশাপাশি একেবারে নিজের মতো করে মিশন পরিচালনা করে রাশিয়া, জাপান ও গোটা ইউরোপকে অনেক আগেই ছাপিয়ে গেছে। তাছাড়া বর্তমানে বিশ্বের কোন একক দেশ হিসেবে মহাকাশে নিজস্ব প্রযুক্তির স্পেস স্টেশন স্থাপন করে মহাকাশ ভিত্তিক প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও উন্নয়নের নতুন এক নজির সৃষ্টি করেছে চীন।

এদিকে আমেরিকা ও সভিয়েত ইউনিয়নের পাশাপাশি ১৯৬০ সালের দিকে মহাকাশ জয়ের রকেট প্রজেক্ট নিয়ে চীন সীমিত পরিসরে গবেষণা শুরু করলেও একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তির স্পেস অবজেক্ট বা স্যাটালাইট সার্ভিসে আনতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় । চীন কার্যত ১৯৭৫ সালে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির লিকুইড ফুয়েল চালিত ডিএফ-৫ লং রেঞ্জের হেভী রকেট (আইসিবিএম) সিস্টেম ব্যবহার করে আকাশে স্যাটালাইট প্রেরণ করে মহাকাশ জয়ের শুভ সূচনা করে।

তবে চীন কিন্তু তার অনেক আগেই ২৪শে এপ্রিল ১৯৭০ সালেই লং মার্চ-১ রকেটের সাহায্যে ১৭৩ কেজি ওজনের ডং ফেং হং-১ কমিউনিকেশন স্যাটালাইট প্রথম বার পৃথিবীর লো আর্থ অর্বিটে স্থাপন করে চীনা জাতির এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছিল। এখন কিনা সেই চীন বিশ্বের সব দেশকে ছাপিয়ে মহাকাশে একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তির ‘তিয়ানগং’ স্পেস স্টেশন স্থাপন করে সারাবিশ্বকে চমকে দিয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন থেকে অনেকটা ছোট আকারের হলেও ৯৬ হাজার কেজি ওজনের চীনের ‘তিয়ানগং’ স্পেস স্টেশন মহাকাশ গবেষণার জন্য চালু করা হলেও আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে একটি পরিপূর্ণ স্পেস স্টেশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। আর এবার কিনা রকেট জ্বালানির নতুন এক ‘কয়লা ভিত্তিক তরল জ্বালানি’ কনসেপ্ট বিশ্বের সামনে উন্মোচন করল রেড জায়ান্ট চীন।

তাছাড়া গত বছর চীনের নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির সম্মানিত গবেষক এবং শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে একটি একেবারে নতুন প্রযুক্তির হাইপারসনিক রকেট মিসাইল ডিজাইন ও তৈরি করে মহাকাশে পাঠিয়েছিল। ফাইটান-১ নামক এই রকেট সিস্টেমটি গতি ম্যাক ৫+ এর অধিক গতিতে তার প্রথম টেস্ট ফ্লাইট সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এটি ছিল আসলে রকেট এবং স্ক্যামজেট বা এয়ার ব্রিদিং ইঞ্জিন এর সমন্বয়ে ডিজাইন করা নতুন প্রযুক্তির এক হাইপারসনিক রকেট বা মিসাইল সিস্টেম। যাতে জ্বালানি হিসেবে সাধারণ কেরোসিন ব্যবহার করা হয়। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো যে, এই রকেট পরীক্ষা করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন চীনের নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির উপর নিষেধাজ্ঞা বা অবরোধ আরোপ করে দেয়। যদিও আমেরিকার এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবে কোন কাজের ছিল না।

Sherazur Rahman

About the author

Sherazur Rahman author

Leave a Reply