আজ থেকে দুই বছর আগে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর একটি ডিজেল ইলেক্ট্রিক চালিত এ্যাটাক সাবমেরিন কেআরআই নাঙ্গালা ৪০২ বালি দ্বীপের কাছাকাছি সাগরের ৮৫০ মিটার গভীরে ডুবে ধ্বংস হয়ে যায়। আর এই মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় সাবমেরিনে থাকা ৫৩ জন অফিসার এবং ক্রুর সকলেই অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুবরণ করেন। আসলে এতগুলো নিরীহ মানুষের অকাল মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।

আসলে রুটিন মাফিক টর্পেডো মহড়ায় অংশ নিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর কেআরআই নাঙ্গালা-৪০২ এ্যাটাক সাবমেরিনটি। সাবমেরিনটিতে ৭২ ঘণ্টা চলার মতো অক্সিজেন ছিল। তবে সাগরে ৮৫০ মিটার গভীরে তীব্র চাপে সাবমেরিনটি ধ্বংস হয়ে যায়। যেখানে জার্মানির তৈরি সাবমেরিনটিকে সর্বোচ্চ ৫০০ মিটার পানির গভীরের চাপ সহ্য করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছিল।

চলতি ২০২১ সালের ২১শে এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর কমাণ্ড সেন্টারের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সাবমেরিনটি বালি দ্বীপের কাছাকাছি সাগরের বুকে লাইভ টর্পেডো ড্রিল পরিচালনা করেছিল এবং নিখোঁজ হওয়ার আগে একটি সরাসরি টর্পেডো নিক্ষেপ করেছিল সাগরে। এই ঘটনার পর পরই ইন্দোনেশিয়ার এবং অন্যান্য দেশের একাধিক রেসকিউ জাহাজ সাবমেরিনটির সন্ধানে পাঠানো হয়। তবে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর নিজস্ব কোন সাবমেরিন রেসকিউ ভ্যাসেল না থাকায় বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যায় উদ্ধার অভিযান। যদিও কমপক্ষে ৬টি যুদ্ধ জাহাজ, একটি হেলিকপ্টার ও ৪০০ লোক সাবমেরিন উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছিল।

জার্মানীর তৈরি পুরনো টাইপ ২০৯ সাবমেরিনের ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা কেআরআই নাঙ্গালা (৪০২) ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর দুটি কাকড়া শ্রেণির ডিজেল ইলেক্ট্রিক সাবমেরিনের মধ্যে একটি ছিল এটি। ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী ১৯৭৭ সালের সালে এটি অর্ডার করলেও এটি লাউঞ্চ করা হয় ১০ই সেপ্টেম্বর ১৯৮০ সালে। একাধিক সী ট্রায়াল শেষে ১৯৮১ সালের ২১শে অক্টোবর চূড়ান্তভাবে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীতে কমিশনিং লাভ করে।

সে হিসেবে কেআরআই নাঙ্গালা (৪০২) এ্যাটাক সাবমেরিনটি ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীতে প্রায় ৪০ বছর সার্ভিসে ছিল। এটিকে প্রথমে ১৯৮৯ সালে এবং সর্বশেষ ২০১২ সালে বড় ধরণের মেরামত বা মেজর আপগ্রেডিং করা হয়। এতে বেশকিছু নতুন প্রযুক্তি ও ওয়েপন্স সিস্টেম ইনস্টল করে এর সার্ভিস লাইফ টাইম বৃদ্ধি করে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী ব্যবহার করতে থাকে।

১,৩৯৫ টনের কাকড়া ক্লাসের এ্যাটাক সাবমেরিনটি তৈরি করে জার্মানীর বিখ্যাত হাওয়াল্ডসওয়ার্ক-ডয়চে ওয়ার্ফ্ট কর্পোরেশন। ১৯৮১ সালে সার্ভিসে আসার পর থেকে কেআরআই নাঙ্গালা এ্যাটাক সাবমেরিনটি ভারত মহাসাগর, পূর্ব তিমুর, ও নুনুকান রিজেন্সিতে সফলভাবে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নেভাল অপারেশনে অংশ নেয়। তাছাড়া সাবমেরিনটি বিগত চল্লিশ বছরে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর পক্ষে বিভিন্ন ধরণের নৌ মহড়ায় অংশ নেয়। যার মধ্যে সহযোগিতা ভাসমান প্রস্তুতি এবং প্রশিক্ষণ, যৌথ সামুদ্রিক অপারেশন অনুশীলন, এবং ইউএসএস ওকলাহোমা এর সাথে যৌথভাবে পাসিং ড্রীল অন্যতম।

কেআরআই নাঙ্গালা এ্যাটাক সাবমেরিন ১৯৮১ সালে সার্ভিসে আসায় এটি এ পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ বছর সার্ভিস দিয়েছে। অথচ এর সার্ভিস লাইফ টাইম আরো অনেক আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কারণ সাধারণত ডিজেল চালিত একটি এ্যাটাক সাবমেরিনের আদর্শ সার্ভিস লাইফ টাইম ধরা হয় ২৫ বছর এবং ১ থেকে ২ বার মেজর আপগ্রেডিং বা পূর্ণঃ মেরামত করে এর সার্ভিস লাইফ টাইম সর্বোচ্চ মোট ৩০-৩২ বছর পর্যন্ত বর্ধিত করা যেতে পারে। তবে এই সময়ের পর সাবমেরিনটি গভীর সমুদ্রে দীর্ঘ মেয়াদে অপারেশনে ব্যবহার করাটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যেতে পারে।

Sherazur Rahman

See insights and ads

Boost post

All reactions:

8Mohammad Shahajhan and 7 others