EDWARDS AIR FORCE BASE, Calif. (June 12, 2019) B-52 out of EDW carries ARRW IMV asset for its first captive carry flight over Edwards Air Force Base. (U.S. Air Force photo by Christopher Okula)

ভয়াবহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দার মুখেও একমাত্র ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের উত্তাপে বিশ্বের অধিকাংশ দেশই আজ তাদের নিজস্ব সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় নির্বিচারে বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। একাধিক সামরিক গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ও থিংক ট্যাংকের দেয়া অনুমান অনুযায়ী, বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে চলতি ২০২৩ সালে সারা বিশ্বের প্রায় ১৮০ দেশ একত্রে আনুমানিক ২.৮ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ বা তার বেশি অর্থ ব্যয় করতে যাচ্ছে সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাত শক্তিশালী করতে। বিশেষ করে বিশ্বের এক নম্বর সামরিক পরাশক্তি আমেরিকা সবচেয়ে বেশি সামরিক বাজেট বরাদ্দ দিয়ে এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। চলতি ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আমেরিকার বাইডেন প্রশাসন আগামী ২০২৪ সালের জন্য সম্ভাব্য সামরিক বাজেটের আকার প্রকাশ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দফতর হোয়াইট হাউজের দেয়া তথ্যমতে, আমেরিকা ২০২৪ সালের জন্য সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে সম্ভাব্য ৮৮৬ বিলিয়ন ডলার বাজেট ব্যয় বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

আর এই বাজেটের মধ্যে ৮৪২ বিলিয়ন ডলারের সুবিশাল আকারের সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ পাবে মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর ‘পেন্টাগন’। যদিও চলতি ২০২৩ সালের জন্য মার্কিন প্রশাসন ২০২২ সালেই সামরিক বাজেট বরাদ্দ দিয়েছিল ৮৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অথচ আগামী ২০২৪ সালের প্রস্তাবিত এই নতুন সামরিক বাজেটে অতিরিক্ত আরো ২৮ বিলিয়ন ডলার বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমেরিকার সরকারের দেয়া ভাষ্যমতে, বর্ধিত এই সামরিক বাজেট আসন্ন রাশিয়া ও চীনের সামরিক হুমকি মোকাবেলায় নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করতে এ অর্থ ব্যয় করা হবে।

এদিকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়কারী দেশ হিসেবে উঠে এসেছে রেড জায়ান্ট চীনের নাম। চীনের শি জিং পিং সরকার চলতি ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ১.৫৫৩৭ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ২২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলারেরব বিশাল আকারের সামরিক বাজেট ঘোষণা করে। যা কিনা চীনের নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ানের হিসেবে গত ২০২২ সাল অপেক্ষা ৭.২% বেশি। যেখানে চীন গত ২০২২ সালে চীনের মোট সামরিক বাজেট ছিল ২২৯.৬ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১ সালে তা ছিল ২০৯ বিলিয়ন।

তবে ইউক্রেনে চলমান সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে যেতে এবং পশ্চিমা বিশ্বের ন্যাটো জোটকে প্রতিহত করার জন্য রাশিয়া তার বার্ষিক সামরিক বাজেট অবিশ্বাস্যভাবে দ্বিগুণ বৃদ্ধি করেছে। বিভিন্ন সামরিক গবেষণা ও রয়টার্স নিউজের দেয়া তথ্যমতে, রাশিয়া চলতি ২০২৩ সালের জন্য ৯.৪ ট্রিলিয় রুবল বা ১৪০ বিলিয়ন ডলার সামরিক বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে বা ব্যয় করবে। আর তার সাথে বর্তমানে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক খাতে ব্যয়কারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে রাশিয়া। মনে করা হয় রাশিয়া গত ২০২২ সালে প্রায় ১৩২.১ বিলিয়ন ডলারের অধিক পরিমাণে অর্থ ব্যয় করেছে ইউক্রেনে যুদ্ধ চলমান রাখতে। যদিও বাস্তবে রাশিয়ার সামরিক ও প্রতিরক্ষা ব্যয় আরো অনেক বেশি হতে পারে।

চীন ও পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান সীমান্ত উত্তেজনা ও সামরিক হুমকি মোকাবেলায় ভারত তার সামরিক বাজেট প্রতি বছরের ন্যয় চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও বৃদ্ধি করেছে। রয়াটার্স নিউজের দেয়া তথ্যমতে, ভারত গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য মোট ৭২.৬ বিলিয়ন ডলার বা ৫.৯৪ ট্রিলিয়ন রুপীর সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাজেট অনুমোদন করছে। যা ছিল কিনা গত বছরের চেয়ে ১৩% বেশি সামরিক বাজেট বা ব্যয় বরাদ্দ। যেখানে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারত মোট ৭০.৬ বিলিয়ন ডলারের সামরিক বাজেট বরাদ্দ দিয়েছিল।

বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে ২০২৩ সালে সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে যুক্তরাজ্য সর্বোচ্চ প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় বরাদ্দ দিয়েছে। তার পাশাপাশি জাপান ৫৫ বিলিয়ন ডলার, জার্মানি ৫৫.৪ বিলিয়ন ডলার, ফ্রান্স ৪৮ বিলিয়ন ডলার, ইতালি ২৬.৫ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া একই সময়ে তুরস্ক ২৫.২ বিলিয়ন ডলার এবং ইরান প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের সামরিক ব্যয় বরাদ্দ দিয়েছে। তার মানে বোঝাই যাচ্ছে সারা বিশ্বে বর্তমানে এক রকম যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের এক অশুভ চাপা উত্তেজনা ও আশাঙ্খা বিরাজ করছে।

এদিকে বিশেষ করে পূর্বের শান্তিবাদী অবস্থান থেকে সরে এসে এক রকম প্রকাশ্যেই জাপান একাই ৩২০ বিলিয়ন ডলারের ৫ বছর মেয়াদি এক বিশাল আকারের সামরিক বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে। মূলত রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং চীনের প্রবল সামরিক হুমকি ও আগ্রাসনের মোকাবেলায় জাপান পর্যায়ক্রমে তার সামরিক বাহিনী আধুনিকায়নে ও নতুন নতুন প্রাণঘাতী অস্ত্র তৈরি ও ক্রয় করতে এ অর্থ ব্যয় করবে। আর এর মাধ্যমে জাপান কিন্তু ব্যাপক মাত্রায় সামরিক শক্তি ও অস্ত্রে বলিয়ান হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে সমগ্র এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে। এখন যদি কোন ভাবে আমেরিকার ইশারায় কিংবা উস্কানীতে নিউক্লিয়ার অস্ত্র তৈরি করার সুযোগ পেয়ে গেলে তা চীন তো বটেই ভবিষ্যতে গোটা এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য এক ভয়াবহ রকমের বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

তাছাড়া বিশ্বের সামরিক খাতে ব্যয়কারী অন্যতম অঞ্চল হিসেবে নাম লিখিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী আরব দেশগুলো। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ হিসেবে সৌদি আরব চলতি ২০২৩ সালের জন্য ৬৯ বিলিয়ন ডলারের সামরিক বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে। চলতি ২০২৩ সালে সামরিক বাজেট ও ব্যয়ের দিক দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত ২৩.২ বিলিয়ন ডলার, কাতার ১৩.৪ বিলিয় ডলার, ইসরাইল ২২ বিলিয়ন ডলার, কুয়েত ৬.৪ বিলিয়ন ডলার ও বাহরান ১.৩৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় বরাদ্দ দিয়েছে।

চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে থাকা পাকিস্তান ২০২৩ সালের জন্য অবিশ্বাস্যভাবে ১২ বিলিয়ন ডলারের সামরিক বাজেট ব্যয় বরাদ্দ দিয়েছে। তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাজেট বরাদ্দ ছিল ৪.৩ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া ২০২৩ সালের জন্য সামরিক খাতে শ্রীলঙ্কা ১.৪৫ বিলিয়ন ডলার, নেপাল ৩৯৩ মিলিয়ন ডলার, ভুটান প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার এবং মিয়ানমার খুব সম্ভবত ৩.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় বরাদ্দ দেয়।

সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক এবং লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com