আজ ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সাল। দেখতে দেখতে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের এক বছর পূর্ণ হয়ে গেল। এই যুদ্ধে কোন পক্ষ জয়লাভ করবে তা নিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব না হলেও এখনো পর্যন্ত উভয় পক্ষের প্রায় ৩ লক্ষাধিক সাধারণ মানুষ এবং সেনা হতাহত হয়েছেন। তাছাড়া প্রতিদিন শত শত সেনা সম্মুখ যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যাচ্ছেন তার সঠিক কোন তথ্য উপাত্ত প্রকাশ করছে না কোন পক্ষই। অথচ এদিকে কিনা রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ হুমকি দিয়ে বলেছেন যে, প্রয়োজন হলে পোল্যান্ডের সীমানা পর্যন্ত ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে নিয়ে যাবে রাশিয়া।

এদিকে আমেরিকার নিউজ এজেন্সি সিএনএনের জানিয়েছে যে, ইউক্রেনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সফরকালে রাশিয়া তার শক্তি প্রদর্শনের জন্য কথিত উচ্চ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ অতি ভয়ঙ্কর আরএস-২৮ ‘সারমাত’ ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম) এর পরীক্ষা চালালে তা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়ে যায়।রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজেকে বিশ্বের সামনে নিজেকে সুপার হিউম্যান বলে প্রচার করুক না কেন, দীর্ঘ মেয়াদী ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার প্রচলিত অস্ত্র সক্ষমতার দূর্বলতা ও অক্ষমতা বিশ্বের সামনে ঠিকই কিন্তু উন্মোচন হয়ে গেছে।

আর এখন কিনা যুদ্ধক্ষেত্রে টিকে থাকার জন্য ইরান থেকে ড্রোন, মিসাইল ও উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে এমিউনিশন বা গোলাবারুদ নিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে। তাছাড়া ইরান নাকি ইতোমধ্যেই কয়েক চালানে প্রায় ১২ হাজার এ্যামুনিশন রাশিয়ায় পাঠিয়েছে এবং পরবর্তী চালান পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। আসলে বিশ্বের অন্যতম সুপার পাওয়ার হিসেবে রাশিয়াকে যতটা শক্তিশালী মনে করা হয়েছিল বাস্তবে দেশটি আসলে সে পর্যায়ে পড়ে না। আবার একেবারে সামরিক ভাবে যে শক্তিহীন এ কথা বলারও কোন সুযোগ নেই।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারে’র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়া ইতোমধ্যেউ ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে। তবে বিগত দুই এক মাসের যুদ্ধের পরিস্থিতি বলছে যে, ইউক্রেনের বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো পক্ষই বড় ধরণের কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। ইউক্রেনের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে দেশটির বিভিন্ন শহরের বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো বা স্থাপনায় ড্রোন ও মিসাইল হামলা অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন ও হামলা রুখে দিতে পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে অত্যাধুনিক ট্যাংকসহ অন্যান্য সমরাস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে ইউক্রেন। এসব অস্ত্র খুব সম্ভবত আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ইউক্রেনের হাতে তুলে দিবে পশ্চিমা মিত্ররা।

এদিকে গত ২১শে ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাশিয়ার লৌহমানব ভ্লাদিমির পুতিন বার্ষিক ‘স্টেট অব দ্য ন্যাশন’ ভাষণের মধ্য দিয়ে আমেরিকার সাথে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ‘নিউ স্টার্ট’ স্থগিতের চূড়ান্ত ঘোষণা দেন। আসলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে একমাত্র ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তিই কার্যকর ছিল। ২০১০ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। এই চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশের সর্বোচ্চ ১,৫৫০টি লং রেঞ্জের নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স মোতায়েনের সুযোগ ছিল। যদিও ২০২১ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে পরবর্তীতে পাঁচ বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছিল।

এদিকে রাশিয়া একতরফা ভাবে আমেরিকার সাথে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তিটি বাতিল করার পরে তার অস্ত্র ভান্ডারে থাকা সবচেয়ে এডভান্স ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল আরএস-২৮ ‘সারমাত’ (আইসিবিএম) মোতায়েনের ঘোষণা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। যা নিয়ে অবধারিতভাবে পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক উত্তেজনা ও ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। ১৮ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের আরএস-২৮ ‘সারমাত’ বা শয়তান-২ (আইসিবিএম) বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখন এই চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ায় সারা বিশ্ব আবারও কিন্তু নতুন করে ভয়াবহ রকমের পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেল।

Sherazur Rahman