সারা বিশ্বে সার্ভিসে থাকা এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফার এন্ড এন্টি সারফেস ওয়ারফার হেলিকপ্টার হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লর্কহীড মার্টিন কর্পোরেশনের তৈরি এমএইচ-৬০আর রোমিও সী-হক, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের যৌথ তৈরি এডাব্লিউ-১০১, এডাব্লিউ-১৫৯, ফ্রান্স, জার্মান, ইতালি এবং নেদারল্যান্ডেসের যৌথ প্রযুক্তিতে তৈরি এনএইচ-৯০, চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি জেড-১৮এফ সিরিজের এবং রাশিয়ার তৈরি কেমভ কেএ-২৭পিএল হেলিকপ্টারকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। তবে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও সাগরের বুকে কার্যকারিতার বিচারে সবার উপরে উঠে এসেছে আমেরিকার তৈরি এডভান্স এমএইচ-৬০আর ‘রোমিও’ সী-হক হেলিকপ্টারের নাম।
বর্তমানে এমএইচ-৬০আর ‘রোমিও’ সী-হক হেলিকপ্টারটিকে সবচেয়ে কার্যকর এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি এন্টি-সাবমেরিন এন্ড এন্টি-সারফেস হেলিকপ্টার হিসেবে সারা বিশ্বে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে। সাবমেরিন কিলার খ্যাত এই এডভান্স সী-বেসড হেলিকপ্টারটিকে মহাসাগরের বুকে লুকিয়ে থাকা শত্রু নৌবাহিনীর সাবমেরিন কিম্বা যুদ্ধজাহাজকে খুঁজে বের করে অত্যন্ত নির্ভূলভাবে ধ্বংস করার উপযোগী মিসাইল ও টর্পেডো সজ্জিত করে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এটিকে কার্যত মার্কিন নেভির পূর্বের এমএইচ-৬০বি/এফ সিরিজের হেলকপ্টারের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে সার্ভিসে আনা হয়েছে।
মার্কিন লকহীড মার্টিন কর্পোরেশনের তৈরি এমএইচ-৬০আর রোমিও হেলিকপ্টার হচ্ছে একাধারে সমুদ্র ভিত্তিক এন্টি-সাবমেরিন ওয়ারফার (এএসডব্লিউ), এন্টি-সার্ফ ওয়ারফার (এএসইউডাব্লু) হেলিকপ্টার। এর পাশাপাশি এটি সার্চিং এন্ড রেসকিউ (এসএআর), নৌ যুদ্ধে সরাসরি সহায়তা (এনজিএফএস), মহাসাগরে নজরদারি, যোগাযোগ, রসদ সরবরাহ এবং উদ্ধারকালীন মুহুর্তে দক্ষতার সাথে সৈন্য বা যাত্রী পরিবহণ করতে সক্ষম।
লকহীড মার্টিন এই হেলিকপ্টারটিতে অত্যন্ত শক্তিশালী দুটি জেনারেল ইলেকট্রিক টি-৭০০-জিই -৪০১-সি টার্বোসেফট ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে। যা কিনা সর্বোচ্চ ১,৪২৫ কিলোওয়াট শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। এটি তার নিজস্ব জ্বালানী সংরক্ষণ ট্যাংকে ২,২৩০ লিটার ফুয়েল ধারণ করতে পারে এবং যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ২,৭২১.৫৫ কেজি পর্যন্ত মালামাল (৬,০০০ পাউণ্ড) কার্গো হুকের সাথে উল্লম্বভাবে পরিবহণ করতে সক্ষম।
এই হেলিকপ্টারের ৪টি হার্ড পয়েন্টে লকহীড মার্টিন নির্মিত এজিএম-১৪৪ হেলফায়ার এন্টি সাবমেরিন মিসাইলসহ বিভিন্ন ধরণের অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছে। এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফারের জন্য তিনটি এমকে-৫০ বা এমকে-৪৬ (একটিভ/প্যাসিভ) লাইট ওয়েট টর্পেডো বহন করে। তাছাড়া নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য এটিতে একটি মাউন্টেড ৭.৬২ এমএম হেভি মেশিনগান সংযোজন করা হয়েছে।
এই হেলিকপ্টারটিতে লকহীড মার্টিন নির্মিত এএন/এএলকিউ-২১০ ইলেকট্রনিক সাপোর্ট ম্যাপিং সিস্টেম (ইএসএম) ইন্সটল করা হয়েছে। তাছাড়া উচ্চ প্রযুক্তির ইলেক্ট্রনিকস ওয়ারফেয়ার সিস্টেম হিসেবে এটিকে এএন/ এএআর-৪৭ মিসাইল ওর্য়ানিং সিস্টেম, লেজার ওর্য়ানিং সিস্টেম, বিএই সিস্টেম, এএন/ এএলকিউ-১৪৪ ইনফ্রারেড জ্যামার এবং এএন/এএলই-৩৯ (চাফ এবং ফ্লেয়ার ডিকয় ডিসপেনসার) সংযোজন করা হয়েছে।
বিশেষ করে এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফায়ারের জন্য এটিতে স্নোবয় লঞ্চার এবং রেইথন এএন/একিউএস-২২ এডভান্স এয়ারব্রোন লো ফিকোয়েন্সী (এএলএফএস) ডীপ সোনার সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে। এর পাশাপাশি এটিতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি রেইথন এএন/এএএস-৪৪ ডিটেক্টিং এন্ড ট্র্যাকিং সিস্টেম ইন্সটল করা হয়েছে।
এমএইচ-৬০আর রোমিও হেলিকপ্টারের মোট ওজন ৬,৮৯৫ কেজি। এটি প্রতি সেকেন্ডে ৮.৩৮ মিটার উপরে উড্ডয়ন করতে সক্ষম। এর সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘন্টায় ২৬৭ কিলোমিটা এবং ক্রুইজিং স্পীড ১৬৮ কিলোমিটার/ঘন্টা। এটির সর্বোচ্চ রেঞ্জ ৮৩৪ কিলোমিটার এবং সার্ভিস সিলিং ৩,৪৩৮ মিটার।
বর্তমানে সারা বিশ্বে আমেরিকার নৌবাহিনীসহ সারা বিশ্বের মোট ১৫টি দেশ এই জাতীয় এমএইচ/এসএইচ সিরিজের এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফার এন্ড এন্টি সারফেস হেলিকপ্টার অপারেট করে। তবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৫৩০টি এমএইচ/এসএইচ-৬০ সিরিজের হেলিকপ্টার অপারেট করে মার্কিন নৌবাহিনী। তাছাড়া তুরস্ক ২৪টি, অস্ট্রেলিয়া ২৩টি সৌদি আরব ৯টি এবং ভারত ৬টি এমএইচ-৬০আর ‘রোমিও’ সী-হক সিরিজের হেলিকপ্টার অপারেট করে (মোট ২৪টি অর্ডারকৃত)।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক এবং লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com