আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রকাশিত বেশকিছু প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২১ সালে চীনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা সম্পন্ন পেশাদার কর্মীর সংখ্যা ২০ কোটির সীমাকে অতিক্রম করেছে। বর্তমানে চীনে প্রযুক্তিগত জ্ঞান সম্পন্ন সুদক্ষ মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬ কোটির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আর চীনের এহেন কল্পনাতীত প্রযুক্তিগত উন্নয়নে দেশটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলো অর্ধ শত বছর থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

চীনে সার্বিকভাবে বিভিন্ন খাতে মোট কর্মরত মানুষের মধ্যে উচ্চ প্রযুক্তিগত দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীর সংখ্যা প্রায় ২৬%। যা কিনা শতকরার হিসেবে বিশ্বের যে কোন দেশের চাইতে অনেক বেশি। ২০২০ সালে জাতীয় পদক পাওয়া প্রথম লাইনের কর্মী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিবিদদের অনুপাত ছিল ৭১.১%।

বর্তমানে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং গবেষণায় বিশ্ব্বে একমাত্র আমেরিকার পর সবচেয়ে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করে চীন। মনে করা হয় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন গড়ে আনুমানিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বিনিয়োগ করেছে নতুন নতুন পন্য বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন, ডিজাইন এবং ডেভলপমেন্টে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। বিশেষ করে চীনের শি জিং পিং সরকারের দীর্ঘ মেয়াদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগের ফলে দেশটি আজ প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সর্বোচ্চ উচ্চশিখরে উঠে এসেছে।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক কিউএস ওয়াল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাংকিং ২০২৩ এর আলোকে বিশ্বের সেরা ১০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আমেরিকা এবং বৃটিশদের ব্যাপক দাপট থাকলেও এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ কোরিয়ার ৬টি, জাপানের ৩টি, সিঙ্গাপুরের ২টি এবং চীনের ৬টি বিশ্ববিদ্যালয় নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে।

মহাকাশ গবেষণায় চীন তার প্রযুক্তিগত উন্নয়নের নতুন নজির সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে বিশ্বের একক কোন দেশ হিসেবে চীন তাদের একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তির তিয়াংগন স্পেস স্টেশন উন্মোচন করে বিশ্বের বুকে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বিগত ৫ দশক থেকে প্রথম চীন ক্লোন কপি এবং অন্য দেশের প্রযুক্তি চুরি করে বা হাতিয়ে নিয়ে নিজেরা কিছু তৈরির চেষ্টা করে গেলেও এখন কিন্তু প্রযুক্তিগত উন্নয়নে চীন শতভাগ স্বনির্ভরতা অর্জন করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

বর্তমানে চীনের গবেষণামুলক মহাকাশ স্টেশনে স্থায়ীভাবে ৩ জন এবং স্বল্প সময়ের জন্য ৬ জন মহাকাশচারী বা ক্রু অবস্থান করতে পারবেন। চলতি ২০২২ সালের শেষের দিকে কাঠামোগতভাবে এটি সম্পূর্ণভাবে গবেষণার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে প্রবলভাবে আশাবাদী চীন।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট নিউজের দেয়া তথ্যমতে, চীনের নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির গবেষক এবং শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে একটি একেবারে নতুন প্রযুক্তির হাইপারসনিক রকেট মিসাইল ডিজাইন ও তৈরি করেছে। ফাইটান-১ নামক এই রকেট সিস্টেমটি গতি ম্যাক ৫.০ এর অধিক গতিতে তার প্রথম টেস্ট ফ্লাইট সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এটি আসলে রকেট এবং স্ক্যামজেট বা এয়ার ব্রিদিং ইঞ্জিন এর সমন্বয়ে ডিজাইন করা নতুন প্রযুক্তির এক হাইপারসনিক রকেট বা মিসাইল সিস্টেম। যাতে জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন ব্যবহার করা হয়েছে।

এদিকে অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিচারে বিশ্বের প্রথম সারির অধিকাংশ দেশকে পিছনে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। চলমান বৈশ্বিক মহামন্দা এবং করোনা অতিমারির মধ্যেও ২০২২ সালের ৭ই জুলাই পিপলস ব্যাংক অব চায়নার প্রকাশিত তথ্যমতে, চলতি ২০২২ সালের ৩০শে জুন চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা হ্রাস পেয়ে ৩.০৭১২৭ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৩০৭১.২৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে এবং সোনার রিজার্ভ ছিল প্রায় ২ হাজার টন। যা কিনা একক কোন দেশ হিসেবে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।

তাছাড়া চীনের বৈদেশিক রপ্তানির পরিমাণ ৩.৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৩,৩৬০ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪১৮ বিলিয়ন ডলার এবং রাশিয়ার মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪১৪ বিলিয়ন ডলার।

২০২১ সালে চীনের জিডিপির আকার ছিল ১৫.৬ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ২০২২ সাল শেষ নাগাদ ১৬.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের সীমাকে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী দেশটি। যদিও ২৩.০ ট্রিলিয়ন ডলারের জিডিপি নিয়ে আমেরিকা বিশ্বের প্রথম স্থানে থাকলেও তাদের শুধু বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ প্রায় ৮.০০ ট্রিলিয়ন ডলারের সীমাকে অতিক্রম করেছে। যা কিনা দেশটিকে একক বৃহত্তম ঋনগ্রস্থ দেশের পরিণত করেছে।

Sherazur Rahman