বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকডোনাল ডগলাস ও বোয়িং কর্পোরেশনের তৈরি জয়েন স্টাইক এফ-১৫ ঈগল সিরিজের এডভান্স এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটাকে সারা বিশ্বে মধ্যে সার্ভিসে থাকা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, হাইলি পারফর্মেন্স এবং আনস্টপেবল যুদ্ধবিমান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া এই সিরিজের সবচেয়ে আধুনিক এফ-১৫ইএক্স সিরিজের এডভান্স মাল্টিরোল যুদ্ধবিমানের ম্যাক্সিমাম পেলোড ক্যাপাসিটি ১২ টন। যদিও পুরনো জয়েন্ট স্টাইক এফ-১৫ এর পরীক্ষিত পে-লোড ক্যাপাসিটি বা অস্ত্র বহণ করার ক্ষমতা ১০,৪০০ কেজি বা ১০.৪ টন।
The first F-15EX parks next to a F-15E Strike Eagle on the ramp at Eglin Air Force Base, Fla., after delivery 11 March, 2021. The 40th Flight Test Squadron takes possession of the EX1 in order to complete combined developmental testing of the U.S. Air Forces’ newest fighter. (U.S. Air Force photo by Staff Sgt. Joshua Hoskins)
এফ-১৫ সিরিজের যুদ্ধবিমান প্রথম সার্ভিসে আসে ১৯৭৬ সালে এবং ৪৭ বছরের সার্ভিস লাইফে মোট ১০২টি শত্রু দেশের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার শুট ডাউন করে এক বিরল রেকর্ডের সৃষ্টি করে রেখেছে। অথচ বিশ্বের কোন দেশের যুদ্ধবিমান আজ অব্ধি একটিও এফ-১৫ যুদ্ধবিমান শুট ডাউন করতে পারেনি। যদিও অবশ্য এটি তার সমকক্ষ কোন যুদ্ধবিমানের মোকাবেলা আজ অব্ধি করেছে বলে মনে হয় না। তবে এই সিরিজের যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি কিলিং রেকর্ড গড়ে তুলেছে ইসরাইলের বিমান বাহিনী।
তবে এই যুদ্ধবিমানের নিজস্ব কিলিং রেকর্ড সকলের কাছে অনেক বেশি বলে মনে করা হলেও বাস্তবে এর অতি স্পর্শকাতর কিছু দূর্বলতা ও সমস্যা কিন্তু রয়েই গেছে। যা আমেরিকা কখনোই বিশ্বের সামনে প্রকাশ করে না। আর তা হলো এফ-১৫ যুদ্ধবিমানের নিজস্ব ক্রাস রিপোর্ট। তাছাড়া আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় এ নিয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়ার সম্ভবনা এক রকম নেই বললেই চলে। যদিও এর জাতীয় যুদ্ধবিমানের সিরিজ ভেরিয়েন্টে গড়ে পার আওয়ার ফ্লাইং এন্ড মেইটেনেন্স কস্ট প্রায় ২৯ হাজার ডলারের অধিক হয়ে যেতে পারে।
ইউকীপিডিয়া ও বিভিন্ন সামরিক থিংক ট্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মার্কিন বিমান বাহিনীর মোট ১২৩টি বিভিন্ন সিরিজের এডভান্স এফ-১৫সি/ডি ঈগল যুদ্ধবিমান নন-কমব্যাট মিশনে উড্ডয়নরত অবস্থায় নিজে নিজেই ধ্বংস বা ক্রাস হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য দেশের বিমান বাহিনী যেমন ইসরাইল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরবের বিমান বাহিনীর আরো মোট ৫২টি এই সিরিজের যুদ্ধবিমান নন-কমব্যাট মিশনে ধ্বংস হয়। সে হিসেবে ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মোট ১৭৫টি বিভিন্ন সিরিজের হেভি এফ-১৫ যুদ্ধবিমান ক্রাস বা ধ্বংস হয়ে যায়।
আর চলতি ২০২৩ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে সার্ভিসে থাকা এফ-১৫ যুদ্ধবিমানের ধ্বংসের হিসেবটি বিবেচনায় আনলে ১৯৭৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের মে মাস পর্যন্ত মোট প্রায় ১৮৮টি বিভিন্ন সিরিজের এফ-১৫ যুদ্ধবিমান নন-কমব্যাট মিশনে যুদ্ধ না করে নিজে নিজেই ক্রাস ল্যান্ডিং কিংবা আকাশেই ধ্বংস হয়ে গেছে। যদিও এর মোট সংখ্যা কিন্তু যুক্তিসঙ্গত কারণেই কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। তাই কফিন ফ্লাইং খ্যাত মিগ-২১ এর পরেই কফিন ফ্লাইং ভার্সন ২.০ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে আমেরিকার চতুর্থ প্রজন্মের (৪++ প্রজন্ম) এফ-১৫ সিরিজের হাইলি এডভান্স যুদ্ধবিমান।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, বোয়িং কর্পোরেশনের তৈরি এফ-১৫ যুদ্ধবিমানের কমব্যাট কিলিং রেকর্ড এ পর্যন্ত মোট প্রায় ১০২টি হলেও তা কিন্তু অধিকাংশি একেবারেই নিম্ন মানের দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মের যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে এই রেকর্ড গড়ে তুলেছে। আসলে এফ-১৫ যুদ্ধবিমানের সমকক্ষ যুদ্ধবিমান যেমন এসইউ-৩৫, এসইউ-৩০, রাফায়েল ও ইউরোফাইটার তাইফুনের মতো এডভান্স যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে কখনই কিন্তু আকাশ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়নি কিংবা ব্যবহারের সুযোগ পায়নি এই জয়েন স্টাইক খ্যাত এফ-১৫ ঈগল ফাইটার জেট। তবে লো ক্রাস রিপোর্ট এন্ড লো মেইনটেনেন্স কস্টের বিচারে বিশ্বের মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে নির্ভর যোগ্য এবং আধুনিক মান সম্পন্ন যুদ্ধবিমান হচ্ছে ফ্রান্সের তৈরি রাফায়েল টুইন ইঞ্জিন ফাইটার জেট।
চলতি ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসটি ছিল ইউক্রেনের জন্য এক ভয়াবহ রকমের বিপর্যয়ের সময়। গত এপ্রিল মাস থেকে আজ অব্ধি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী নজিরবিহীনভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা দপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, গত এপ্রিল মাসে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর প্রায় ১৫ হাজারের অধিক সেনা হতাহত হয়েছে। তার পাশাপাশি একই সময়ে ইউক্রেনের ৮টি যুদ্ধবিমান, প্রায় তিন শতাধিক কমব্যাট ড্রোন ও তার পাশাপাশি ৪৩০টি ট্যাংক ও সামরিক যান ধ্বংস করেছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী।
যদিও রাশিয়া কিন্তু যুদ্ধের শুরুর পর থেকে আজ অব্ধি নিজেদের ঠিক কতজন সেনা হতাহত হয়েছে এবং তাদের সামরিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোন ধরনের সঠিক তথ্য উপাত্ত বিশ্ব মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করেনি। পশ্চিমা মিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, যুদ্ধের শুরু থেকে এখনো পর্যন্ত রাশিয়ার প্রায় লক্ষাধিক সেনা হতাহত হয়েছে। এদিকে রাশিয়ার দেয়া তথ্যমতে, গত ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে আর এখন কিনা এই সামরিক আগ্রাসনে প্রথম বারের মতো টিইউ-১৬০ স্ট্যাটিজিক হেভি বোম্বার মোতায়েন করেছে রাশিয়া। মূলত গত ১লা মে খুব সকালে রাশিয়ার বিমান বাহিনীর ৯টি টিইউ-৯৫ বিয়ার এবং ২টি টিইউ-১৬০ হেভি স্ট্যাটিজিক বোম্বার ইউক্রেনে বড় ধরনের মিসাইল হামলায় অংশ নেয়।
সাম্প্রতিকতম সময়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিমান বাহিনীর হেভি বোম্বার বিমান থেকে মোট ১৮টি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল সভিয়েত আমলের কেএইচ-১০১/ কেএইচ-৫৫৫ ক্রুজ মিসাইল ফায়ার করে। তবে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর দেয়া ভাষ্যমতে, তাদের নিজস্ব এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মোট ১৫টি মিসাইল আকাশেই ধ্বংস করেছে এবং মাত্র ৩টি টার্গেটে আঘাত করেছে। এটিই ছিল আসলে রাশিয়ার টিইউ-১৬০ হেভি স্ট্যাটিজিক বোম্বারের সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ।
তবে সবচেয়ে আশাঙ্খাজনক খবর হচ্ছে যে, যুদ্ধের ভয়াবহতা ধীরে ধীরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিণতি বা নিউক্লিয়ার ওয়ারের দিকে যাচ্ছে, তাও বেশ স্পষ্ট করেই মিডিয়ায় জানিয়ে দিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘সার্গেই ল্যাভরভ’। রাশিয়ার সীমানায় সার্বভৌমত্বে আঘাত আসলেই যে কোন দেশের উপর আগাম ঘোষণা না দিয়েই নিউক হামলা করতে মোটেও দ্বিতীয় বার ভাববে না দেশটির সামরিক বাহিনী। এদিকে রাশিয়ার হুমকিকে আমলে নিয়ে আমেরিকা ও তার নেতৃত্বে ন্যাটো জোট নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার যুদ্ধের ঝুঁকি মোকাবেলায় এক রকম নিরবেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে।
আর এই চীরশত্রু দুই শিবিরের পাল্টাপাল্টি ভয়ঙ্কর রণ হুংকার ও যুদ্ধ প্রস্তুতি কিন্তু সারা বিশ্বের অস্তিত্বের জন্য এক চরম হুমকি ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ আলামত হিসেবে মনে করেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সামরিক বিশ্লেষকেরা। আর রাশিয়া কিন্তু এখন এক রকম প্রকাশ্যেই ইউক্রেনকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে হলেও নিজ দখলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছে। যা আসলে স্পর্ষ্টভাবেই অদূর ভবিষ্যতে মানচিত্র থেকে দেশটির চিহ্ন একেবারেই মুছে যাওয়ার মতো ভয়াবহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর তার সাথে অত্র অঞ্চলে মারা যেতে পারে প্রায় কোটির কাছাকাছি হতভাগ্য সাধারন মানুষ। যাদের সাথে কিনা যুদ্ধের কোনই সম্পর্ক নেই এবং তারা এখনো পর্যন্ত হয়ত জানেই না যে, এই দীর্ঘ মেয়াদী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ কেন চলছে।
কিছুদিন থেকে রাশিয়া যে ধরনের কনভেনশনাল ওয়ারহেড দ্বারা মিসাইল ফায়ার করে যাচ্ছে তা আসলে কিন্তু সভিয়েত আমলের তৈরি নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল মিসাইল ওয়েপন্স সিস্টেম। যা দিয়ে যে কোন মুহুর্তেই নিউক্লিয়ার ওয়ার শুরু করে দিতে পারে রাশিয়া। মনে করা হয় রাশিয়ার অস্ত্র ভান্ডারে এখনো পর্যন্ত প্রায় তিন থেকে পাঁচ হাজারের কাছাকাছি বা অধিক সংখ্যক এই জাতীয় ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জের ব্যালেস্টিক এন্ড ক্রুজ মিসাইলের বিশাল ভান্ডার রয়েছে। যদিও ১৯৯১ সালের দিকে ইউক্রেনের অস্ত্র ভান্ডারে প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি একই জাতীয় মিসাইলের বিশাল মজুত ছিল।
নব্বই এর দশকে ভীতিজনক কোল্ড ওয়ার যুগের অবসান ঘটিয়ে ১৯৯১ সালে সভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে মোট ১৫টি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তার মধ্যে সভিয়েত ইউনিয়নের হাতে থাকা প্রায় ১২ হাজারের কাছাকাছি নিউক্লিয়ার অস্ত্রের বেশির ভাগ রাশিয়া ও ইউক্রেনের হাতে থেকে যায়। আর স্বাধীনতা লাভের পর ইউক্রেনের হাতে প্রায় ২ হাজারের কাছাকাছি নিউক্লিয়ার অস্ত্র, ১৭৬টি ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল, ৪৪টি স্ট্যাটিজিক হেভি বোম্বার, আনুমানিক প্রায় দুই থেকে তিন হাজারের কাছাকাছি শর্ট এন্ড ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জের ব্যালেস্টিক এন্ড ক্রুজ মিসাইলের বিশাল মজুত ছিল। তার সাথে শতাধিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, হাজার হাজার ট্যাংক ও আর্টিলারী সিস্টেম থেকে যায় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ইউক্রেনের হাতে।
তবে নিজেকে শান্তিপ্রিয় ও ঝামেলামুক্ত দেশ হিসেবে বিশ্বের সামনে প্রমান করতে গিয়ে ইউক্রেন পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই রাশিয়া, আমেরিকা ও জাতিসংঘের সাথে চুক্তি করে সকল ধরনের নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স, আইসিবিএম ও হেভি বোম্বার ধ্বংস কিংবা রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করে দেয়। তাছাড়া হাজার হাজার অমূল্য ডিফেন্স সিস্টেম খোলা আকাশের নিচে অবহেলায় পড়ে থেকে জং ধরে নষ্ট ও অকেজো হয়ে যায়। এদিকে ইউক্রেনের কাছে থেকে যায় সভিয়েত আমলের (অসমাপ্ত নির্মাণাধীন) ৬০ হাজার টন ওজনের একটি হেভি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার। যা পরবর্তীতে ইউক্রেন ব্লুপ্রিন্ট ও অন্যান্য ডুকুমেন্টসহ একেবারেই পানির দামে (খুব সম্ভবত ৮০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলার) চীনের কাছে বিক্রি করে দেয় ইউক্রেন সরকার।
অথচ এদিকে সুচতুর রাশিয়া কিন্তু শত বাধা ও সমস্যার মধ্যেও তার হাতে থাকা সকল নিউক্লিয়ার ওয়েপন্সসহ ডিফেন্স সিস্টেম অত্যন্ত যত্ন করেই সংরক্ষণ করে রেখেছে এবং বর্তমান যুদ্ধে রাশিয়া যত অস্ত্র ও মিসাইল ব্যবহার করছে তার ৮০% পর্যন্ত কিন্তু সেই আবার কিনা সভিয়েত আমলের তৈরি অস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জাম। যা হোক এটা সত্য যে, অতি উন্নত ও শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে নিজেকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে গিয়ে নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বজায় রাখাকে এক রকম অবজ্ঞা করে ইউক্রেন তার নিজস্ব স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে পরোক্ষভাবে হলেও নিজেই কিন্তু আজ ধ্বংসের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে।
তবে এটা ঠিক যে, প্রযুক্তিগত অক্ষমতা ও কিছু যুক্তিসঙ্গত কারণেই ইউক্রেনের হাতে থাকা নিউক্লিয়ার ওয়েপন্সগুলো ডিকোডিং করে এক্টিভ করার কোন সুযোগ ছিল না। তাছাড়া যুগের পর যুগ এসব অপ্রচলিত ভয়ঙ্কর অস্ত্র সংরক্ষণ করার প্রযুক্তিগত কোন সক্ষমতাও নেই ইউক্রেনের। তাই দেশটির হাতে থাকা প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল ধ্বংস করে দেয়াটা অনেকটাই সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল বলে মনে করা হয়। তবে তাদের হাতে থাকা হাজার হাজার শর্ট এন্ড ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জের ব্যালেস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল একেবারে ধ্বংস কিংবা রাশিয়ার হাতে তুলে দেয়াটা ছিল চরম মাত্রায় একটি ভূল সিদ্ধান্ত। ইউক্রেন সব সময় মনে করে এসেছে যে, রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে তার বন্ধু আমেরিকাও তার ন্যাটো জোট রক্ষা করবে। তবে আমেরিকা কিন্তু ঠিকই এই যুদ্ধকে ঘিরে শত বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বানিজ্য হাতিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনের হাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তুলে দিলেও সরাসরি নিজেদের কখনোই যুদ্ধে জড়াবে বলে মনে হয় না।
এদিকে ইউক্রেনের দ্বায়িত্বহীনতার জন্য হাজার হাজার ট্যাংক ও আর্টিলারি সিস্টেম খোলা আকাশের নিচে কয়েক যুগ ধরে পড়ে থেকে ও জং ধরে অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া ইউক্রেনের কাছে থাকা সভিয়েত ইউনিয়নের একটি প্রায় ৬০ হাজার টন ওজনের অসমাপ্ত নির্মাণাধীন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার একেবারে পানির দামে চীনের কাছে বিক্রি করে দেয় এবং তাদের ট্যাংক বহরে থাকা ৩২০টি টি-৮০ মেইন ব্যাটল ট্যাংক পাকিস্তানের কাছে বিক্রি করেছিল। এভাবে নিজস্ব নিরাপত্তা বিষয়টিকে গুরুত্বহীন মনে করে হাতে থাকা অমূল্য সামরিক সাজ সরঞ্জাম বিক্রি করে নগত অর্থ আয় করতে থাকে ইউক্রেন সরকার। এখানে মনে রাখতে হবে রাশিয়া বা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি চরম মাত্রায় আগ্রাসী ও সাম্রাজ্যবাদী দেশ হিসেবে বিগত এক শতাব্দী থেকে টিকে রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সম্পর্ক খারপ হলেই দেশটির উপর সামরিক আগ্রাসন চালাতে দ্বিতীয় বার ভাবে না দেশটি। তাছাড়া রাশিয়ার পাশে অবস্থানরত অধিকাংশ ছোট দেশ রাশিয়ার সাথে সমঝোতা করে টিকে রয়েছে ও দেশটিকে জমের মতো ভয় করে। অন্তত অতীত ইতিহাস রাশিয়া সম্পর্কে তাই বলে।
প্রথম দিকে রাশিয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকলেও স্বাধীনতার এক দশক পর থেকে পশ্চিমা বিশ্বের দিকে অতি মাত্রায় ঝুঁকে যাওয়ার জন্য রাশিয়ার সাথে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটতে থাকে ইউক্রেনের। যার ফলস্রুতিতে রাশিয়া ২০১৩-১৪ সালের দিকে সরাসরি সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে নিলেও তাতেও ইউক্রেনের হুশ ফেরে না। রাশিয়ার অদূর ভবিষ্যতে আবারো ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন চালাতে পারে এমন আশাঙ্খা প্রবল হলেও ইউক্রেন কিন্তু তার সামরিক ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সেভাবে আধুনিকায়ন করেনি বয়া তা করার খুব একটা চেষ্টা করেছে বলে মনে হয় না। আর কিছু না হোক ২০১৫ সালের দিক থেকে পর্যায়ক্রমে আমেরিকা থেকে ৫০-৬০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ক্রয় বা সংগ্রহ করার যথেষ্ঠ সুযোগ থাকলেও তা মোটেও কাজে লাগায় নি ইউক্রেন সরকার। অন্তত পক্ষে সভিয়েত আমলের পুরনো হাজারের অধিক শর্ট এন্ড ব্যালেস্টিক মিসাইল সংরক্ষণ ও তার পাশাপাশি প্রায় ৬০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান হাতে থাকলে আজ রাশিয়া কিন্তু কোন ভাবেই এই সামরিক আগ্রাসন চালাতে পারত না। আর এখন কিন্তু এই ইউক্রেন যুদ্ধ সারাবিশ্বকে আস্তে আস্তে ভয়াবহ পরমাণু ও বিশ্বযুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক এবং লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com
বিগত প্রায় ছয় দশক থেকে সারাবিশ্বে বৈদেশিক বাণিজ্যের অন্যতম লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় আমেরিকার মুদ্রা ডলার। ডলার মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই ধীরে ধীরে নিজের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। তবে বৈদেশিক লেনদেনে প্রধান মুদ্রা ডলার হলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন এক বৈশ্বিক অর্থ ব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন ডলারের প্রভাব অনেকটাই হ্রাস পেয়ে তার বিপরীতে চীনের মুদ্রা ইউয়ান ও রাশিয়ার মুদ্রা রুবল শক্তিশালী হতে শুরু করেছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশই নিজেদের মুদ্রায় অন্তর্জাতিক লেনদেন করার বিষয়ে সচেতন হচ্ছে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে চীনের মুদ্রা ইউয়ান অত্যন্ত দ্রুত গতিতে তার শক্তিশালী অবস্থান জানান দিচ্ছে।
আসলে পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতির বিবেচনায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে শুধুমাত্র একটি মাত্র মুদ্রাকে বেছে নেয়ার আর কোন সুযোগ থাকে না। প্রয়োজনে আমেরিকার মুদ্রা ডলারের পাশাপাশি চীনের নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ান, রাশিয়ার মুদ্রা রুবল, জাপানিজ মুদ্রা ইয়েন, ভারতের মুদ্রা রুপি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুদ্রা ইউরোকে সমান গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে প্রচলন করাটা এখন কিনা সময়ের দাবি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক থিংক ট্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, ডলার এখন মোট বৈশ্বিক মুদ্রার রিজার্ভের ৫৮% প্রতিনিধিত্ব করে এবং যা ২০০১ সালে যা ছিল ৭৩%।
এদিকে বৈদেশিক লেনদেনে ডলারের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য দেশের মুদ্রা আন্তর্জাতিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ ও আন্তঃবানিজ্য লেনদেনে নিজস্ব দেশীয় মুদ্রার ব্যবহারে যথেষ্ট সচেতন হচ্ছে বিশ্বের প্রথম সারির অধিকাংশ দেশ। বিশেষ করে সৌদি আরব এবং ব্রাজিলের মতো দেশআ কিন্তু ইতোমধ্যেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ডলারের পাশাপাশি ইউয়ান ও ইউরোতে সংরক্ষণ শুরু করে দিয়েছে এবং আন্তঃবানিজ্য লেনদেনের ক্ষেত্রে দেশগুলোর সেন্ট্রাল ব্যাংক নিজস্ব দেশীয় মুদ্রার বিনিময় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে যাচ্ছে।
বর্তমানে চলমান আমদানি রপ্তানি বানিজ্য ও আন্তর্জাতিক লেনদেনে ডলারের প্রাধান্যকে খারিজ করতে নতুন পদক্ষেপ নিয়েছে চীন ও ব্রাজিল। ডলারের লেনদেন পরিহার করে চীন ও ব্রাজিলের সেন্ট্রাল ব্যাংক নিজস্ব মুদ্রায় আন্তঃবানিজ্য করার জন্য একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছে। যার আওতায় বর্তমানে ব্রাজিলের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রা হিসেবে চীনের মুদ্রা ইউয়ানকে প্রতিস্থাপন করেছে। চলতি ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস শেষে ব্রাজিলের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৯৭.৩ বিলিয়ন ডলার। আর গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাস শেষে ব্রাজিলের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মধ্যে মার্কিন ডলার ছিল ৮০.৪%, চীনের ইউয়ান ছিল ৫.৩৭% এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুদ্রা ইউরো ছিল ৪.৭৪%।
আসলে কিছুটা ধীরে হলেও রেড জায়ান্ট চীনের নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে দিয়েছে। কারো কাছে ভালো লাগুক আর নাই বা লাগুক চীন কিন্তু এক বিংশ শতাব্দীর এক শীর্ষ স্থানীয় ইকোনমিক সুপার পাওয়ার দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০২২ সালে চীনের বৈদেশিক বানিজ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬.৩ ট্রিলিয়ন ডলার এবং দেশটি আসলে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক বানিজ্যের দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। অবশ্য একই সময়ে ভারতের বৈদেশিক বানিজ্যের পরিমাণ ছিল ১.১৭ ট্রিলিয়ন ডলার এবং আমেরিকার বৈদেশিক বানিজ্যের পরিমাণ ছিল ৫.৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার।
বর্তমানে ব্রাজিলের পাশাপাশি রাশিয়া ও সৌদি আরবের মতো দেশ চীনের সাথে আমদানি রপ্তানি বানিজ্যে নিজস্ব দেশীয় মুদ্রায় লেনদেন করতে সম্মত হয়েছে। তাছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ হিসেবে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাংলাদেশ এবং ইসরায়েল পর্যন্ত চীনের মুদ্রা ইউয়ান সংরক্ষণের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে।
এদিকে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নিজস্ব মুদ্রা রুপি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার শক্তিশালী অবস্থান জানান দিচ্ছে। বিশেষ করে বতসোয়ানা, ফিজি, জার্মানি, গায়ানা, ইসরায়েল, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, মরিশাস, মায়ানমার, নিউজিল্যান্ড, ওমান, রাশিয়া, সেশেলস, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, উগান্ডা,ইংল্যান্ডসহ আরও কিছু দেশ আন্তঃবানিজ্য লেনদেনের ক্ষেত্রে রুপিতে বানিজ্য করতে প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বর্তমানে সারা বিশ্বের আন্তর্জাতিক বানিজ্য ও লেনদেনের ক্ষেত্রে যে একটি দেশের কারেন্সির একচ্ছত্র অধিপত্য রয়েছে তা বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরণের বাধা হয়ে থেকেই যাচ্ছে। বিশেষ করে উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বৃটিশ মুদ্রা পাউন্ড সারাবিশ্বে রাজত্ব কায়েম করেছিল। যা বর্তমানে আমেরিকার কারেন্সি ডলার করছে এবং আগামীতে হয়ত অন্য কোন দেশের মুদ্রা একচ্ছত্র রাজত্ব করবে। তাই বিশ্বের দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে একটি দেশের কারেন্সিকে আন্তর্জাতিক লেনদেনের একক আদর্শ হিসেবে না নিয়ে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬টি দেশের শক্তিশালী মুদ্রাকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে অবাধ প্রচলনের বিষয়টিকে নিশ্চিত করা ও আন্তঃবানিজ্য লেনদেনে নিজস্ব দেশীয় মুদ্রার ব্যবহারে সচেতন হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু হয়ে দেখা দিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে রকেট ডিজাইন ও ইঞ্জিনিয়ারিং এ একের পর এক চমক সৃষ্টি করে যাচ্ছে রেড জায়ান্ট চীন। বর্তমানে মহাকাশ ভিত্তিক নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, তৈরি ও গবেষণায় সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রবল প্রতিযোগিতা শুরু করে করেছে দেশটি। যারই ধারাবাহিকতায় এবার চীনের একটি বেসরকারি অ্যারোস্পেস কোম্পানি কয়লা ভিত্তিক তরল জ্বালানী ব্যবহার করে এই প্রথমবারের মতো মহাকাশে নতুন প্রজন্মের রকেট উৎক্ষেপণ করেছে।
যা বিশ্বের প্রথম ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে সারাবিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে চীন। কয়লা ভিত্তিক তরল জ্বালানি নির্ভর রকেটটি অতি সাম্প্রতিক সময়ে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় চিউকুয়ান স্যাটেলাইট লঞ্চড প্যাড থেকে সফলভাবে মহাকাশে পাঠানো হয়।
শুধু কি তাই চাঁদের উল্টো যে পাশে সূর্যের আলো পড়েনা সেখানে ল্যান্ডার নামিয়েছে চীন ও মঙ্গলগ্রহে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা’র পাশাপাশি একেবারে নিজের মতো করে মিশন পরিচালনা করে রাশিয়া, জাপান ও গোটা ইউরোপকে অনেক আগেই ছাপিয়ে গেছে। তাছাড়া বর্তমানে বিশ্বের কোন একক দেশ হিসেবে মহাকাশে নিজস্ব প্রযুক্তির স্পেস স্টেশন স্থাপন করে মহাকাশ ভিত্তিক প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও উন্নয়নের নতুন এক নজির সৃষ্টি করেছে চীন।
এদিকে আমেরিকা ও সভিয়েত ইউনিয়নের পাশাপাশি ১৯৬০ সালের দিকে মহাকাশ জয়ের রকেট প্রজেক্ট নিয়ে চীন সীমিত পরিসরে গবেষণা শুরু করলেও একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তির স্পেস অবজেক্ট বা স্যাটালাইট সার্ভিসে আনতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় । চীন কার্যত ১৯৭৫ সালে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির লিকুইড ফুয়েল চালিত ডিএফ-৫ লং রেঞ্জের হেভী রকেট (আইসিবিএম) সিস্টেম ব্যবহার করে আকাশে স্যাটালাইট প্রেরণ করে মহাকাশ জয়ের শুভ সূচনা করে।
তবে চীন কিন্তু তার অনেক আগেই ২৪শে এপ্রিল ১৯৭০ সালেই লং মার্চ-১ রকেটের সাহায্যে ১৭৩ কেজি ওজনের ডং ফেং হং-১ কমিউনিকেশন স্যাটালাইট প্রথম বার পৃথিবীর লো আর্থ অর্বিটে স্থাপন করে চীনা জাতির এক নতুন ইতিহাস রচনা করেছিল। এখন কিনা সেই চীন বিশ্বের সব দেশকে ছাপিয়ে মহাকাশে একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তির ‘তিয়ানগং’ স্পেস স্টেশন স্থাপন করে সারাবিশ্বকে চমকে দিয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন থেকে অনেকটা ছোট আকারের হলেও ৯৬ হাজার কেজি ওজনের চীনের ‘তিয়ানগং’ স্পেস স্টেশন মহাকাশ গবেষণার জন্য চালু করা হলেও আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে একটি পরিপূর্ণ স্পেস স্টেশন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। আর এবার কিনা রকেট জ্বালানির নতুন এক ‘কয়লা ভিত্তিক তরল জ্বালানি’ কনসেপ্ট বিশ্বের সামনে উন্মোচন করল রেড জায়ান্ট চীন।
তাছাড়া গত বছর চীনের নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির সম্মানিত গবেষক এবং শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে একটি একেবারে নতুন প্রযুক্তির হাইপারসনিক রকেট মিসাইল ডিজাইন ও তৈরি করে মহাকাশে পাঠিয়েছিল। ফাইটান-১ নামক এই রকেট সিস্টেমটি গতি ম্যাক ৫+ এর অধিক গতিতে তার প্রথম টেস্ট ফ্লাইট সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। এটি ছিল আসলে রকেট এবং স্ক্যামজেট বা এয়ার ব্রিদিং ইঞ্জিন এর সমন্বয়ে ডিজাইন করা নতুন প্রযুক্তির এক হাইপারসনিক রকেট বা মিসাইল সিস্টেম। যাতে জ্বালানি হিসেবে সাধারণ কেরোসিন ব্যবহার করা হয়। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো যে, এই রকেট পরীক্ষা করার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন চীনের নর্থওয়েস্টার্ন পলিটেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির উপর নিষেধাজ্ঞা বা অবরোধ আরোপ করে দেয়। যদিও আমেরিকার এই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবে কোন কাজের ছিল না।
তুরস্কের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এভিয়নিক্স ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি তার্কিস অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টিএআই) এর সিইও ড. তেমিল জানিয়েছেন যে, পাকিস্তানের সাথে নতুন করে ৩০টি’র অধিক টি-১২৯ (এটিএকে) এডভান্স এ্যাটাক হেলিকপ্টার রপ্তানি চুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শেষ করা হয়েছে। যা আগের আমেরিকার হানিওয়েল টার্বোশ্যাফট ইঞ্জিনের পরিবর্তে নিজস্ব প্রযুক্তির ইঞ্জিন কিংবা অন্য কোন দেশের (ইউক্রেন) তৈরি হেলিকপ্টার ইঞ্জিন ব্যবহার করে পাকিস্তানে রপ্তানি করা হবে কিংবা এর বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানের কাছে নতুন প্রজন্মের এটিএকে-২ হেভি গানশীপ রপ্তানি করা হতে পারে।
যদিও গত ২০২১ সালের শেষের দিকে মার্কিন প্রশাসনের বাধা ও নিষেধাজ্ঞার ফলে পাকিস্তানে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের ৩০টি তুর্কী টি-১২৯ কমব্যাট হেলিকপ্টার রপ্তানির প্রক্রিয়াটি বাতিল হয়ে যায়। আমেরিকা সাফ জানিয়ে দেয় যে, চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অত্যাধুনিক হানিওয়েল টি-৮০০-৪এ টার্বোশেফট ইঞ্জিন সজ্জিত টি-১২৯ কমব্যাট হেলিকপ্টার তাদের অনুমোদন বা লাইসেন্স ছাড়া পাকিস্তানের কাছে সরবরাহ করা যাবে না। আমেরিকার আশাঙ্কা করে যে, পাকিস্তানের কাছে তাদের ইঞ্জিন সজ্জিত টি-১২৯ কমব্যাট হেলিকপ্টার দেয়া হলে তা অদূর ভবিষ্যতে এর প্রযুক্তি চীনের হাতে চলে যেতে পারে। আবার হয়ত ভারতের গোপন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে আমেরিকা এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারে।
তাই তুরস্ক এবার খুব সম্ভবত তার নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি ১,৪০০ হর্স পাওয়ারের টিইআই টিএস-১৪০০ টার্বোশেফট হেলিকপ্টার ইঞ্জিন ইনস্টল করে টি-১২৯ (এটিএকে) কমব্যাট হেলিকপ্টার রপ্তানি চুক্তিটি নতুন করে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে এই হেলিকপ্টারটি তুরস্কের পাশাপাশি ফিলিপাইন্স অপারেট করে। ইউরোপীয় স্টান্ডার্ড এ তৈরিকৃত এই টি-১২৯ (এটিএকে) লাইট কমব্যাট চপারটিকে বর্তমানে সার্ভিসে থাকা বিশ্বের সেরা একটি লাইট এ্যাটাক হেলিকপ্টার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তুরস্কের টার্কিস এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিক (টিএআই) এর নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি টি-১২৯ ট্যাক্টিক্যাল রিকর্নিসেন্স এণ্ড এ্যাটাক হেলিকপ্টারটি ইতালিয়ান আগস্টা-১২৯ এট্যাক হেলিকপ্টার এর উপর ভিত্তি করে ডিজাইন ও তৈরি করা হলেও এটিকে আরো অত্যাধুনিক অস্ত্র, প্রযুক্তি ও নতুন প্রজন্মের এভিয়নিক্স সিস্টেম দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। এটি সর্ব প্রথম আকাশে ওড়ে ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০০৯ সালে এবং তার পাশাপাশি তুরস্কের সামরিক বাহিনীতে প্রথম সার্ভিসে আসে ২০১৪ সালে। টার্কিস অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টিএআই) ২০০৯ সাল থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ৭৬টি টি-১২৯ চপার তৈরি করেছে এবং তুরস্কের সামরিক বাহিনীর হাতে বর্তমানে মোট ৬৫টি এই জাতীয় হাইলী এভভান্স এ্যাটাক চপার তুলে দিয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রেতা দেশ হিসেবে ফিলিপিন্স ৬টি এই জাতীয় এডভান্স এ্যাটাক হেলিকপ্টার অপারেট করে।
দুইজন ক্রু দ্বারা চালিত এই এ্যাটাক হেলিকপ্টারের দৈর্ঘ্য ১৪.৫৪ মিটার এবং উচ্চতা ৩.৪ মিটার। এর ম্যাক্সিমাম টেকঅফ ওয়েট ৫,০৫৬ কেজি এবং ম্যাক্সিমাম স্পীড প্রতি ঘন্টায় ২৮১ কিলোমিটার। এর রেঞ্জ ৫৩৭ কিলোমিটার এবং ফেরিরেঞ্জ ১,০০০ কিলোমিটার। এটি যে কোন প্রতিকূল আবহাওয়ায় ও পরিবেশে আকাশে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ফিট উচ্চতায় উঠতে পারে এবং এটি একটানা ৩ ঘন্টা পর্যন্ত আকাশে কমব্যাট মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম। তাছাড়া আকাশে সাবলীলভাবে উড্ডয়ন করার জন্য এই হেলিকপ্টারে ২টি অত্যন্ত শক্তিশালী হানিওয়েল টি-৮০০-৪এ টার্বোশেফট মাউন্টেন্ড ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে।
এর প্রধান অস্ত্র হিসেবে একটি ২০ এমএম রোটারি ক্যানন ইনস্টলেশন করা হয়েছে। যা কিনা তিনটি ব্যারেলে মোট ৫০০ রাউন্ড গুলি ফায়ার করতে পারে। তাছাড়া এর ৪টি হার্ড পয়েন্টে সর্বোচ্চ ১,২০০ কেজি পর্যন্ত বিভিন্ন ধরণের আনগাইডেড রকেট ও মিসাইল বহণ করতে পারে। এটি ৪টি পডে মোট ৭৬টি আনগাইডেড রকেট বহণ করার পাশাপাশি ৮টি গাইডেড এন্টি ট্যাংক মিসাইল, ১৬টি রকেটসানের তৈরি সিরিট গাইডেড মিসাইল এবং ৮টি সর্ট রেঞ্জের এয়ার টু এয়ার স্টিংগার মিসাইল বহণ করতে পারে। তাছাড়া এটি প্রতি ২৯৪ কেজি ওজনের ২টি ড্রপ ট্যাংক বহণ করে।
এই এ্যাটাক হেলিকপ্টারের এডভান্স এভিয়নিক্স সিস্টেম হিসেবে তার্কিস এ্যাসেলসান কোম্পানির তৈরি এএসইএলএফএলআইআর-৩০০টি ইলেক্ট্রো অপটিক্যাল এফএলআইআর সিস্টেম ইন্সটল করা হয়েছে। তাছাড়া কাউন্টারমেজারস হিসেবে এটিতে কাউন্টারমেজার ডিসপেন্সিং সিস্টেম, একটি মিসাইল ওয়ার্নিং সিস্টেম, একটি লেজার ওয়ার্নিং সিস্টেম, একটি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি জ্যামার, একটি রাডার ওয়ার্নিং রিসিভার (আরডাব্লিউআর), ইনফ্রা-রেড কাউন্টারমেজারসবং একটি সুইট কন্ট্রোল প্রোসেসিং সিস্টেম (এসসিপিএস) ইনস্টল করা হয়েছে। তাছাড়া সর্বোশেষ সংযোজন হিসাবে এতে ১২ কিলোমিটার রেঞ্জের মিলডার মিলিমিটার ওয়েব রাডার ব্যবহার করা হচ্ছে।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman) সহকারী শিক্ষক ও লেখক, গ্রামঃ ছোট চৌগ্রাম, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com
আজ থেকে দুই বছর আগে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর একটি ডিজেল ইলেক্ট্রিক চালিত এ্যাটাক সাবমেরিন কেআরআই নাঙ্গালা ৪০২ বালি দ্বীপের কাছাকাছি সাগরের ৮৫০ মিটার গভীরে ডুবে ধ্বংস হয়ে যায়। আর এই মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় সাবমেরিনে থাকা ৫৩ জন অফিসার এবং ক্রুর সকলেই অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুবরণ করেন। আসলে এতগুলো নিরীহ মানুষের অকাল মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
আসলে রুটিন মাফিক টর্পেডো মহড়ায় অংশ নিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর কেআরআই নাঙ্গালা-৪০২ এ্যাটাক সাবমেরিনটি। সাবমেরিনটিতে ৭২ ঘণ্টা চলার মতো অক্সিজেন ছিল। তবে সাগরে ৮৫০ মিটার গভীরে তীব্র চাপে সাবমেরিনটি ধ্বংস হয়ে যায়। যেখানে জার্মানির তৈরি সাবমেরিনটিকে সর্বোচ্চ ৫০০ মিটার পানির গভীরের চাপ সহ্য করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছিল।
চলতি ২০২১ সালের ২১শে এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর কমাণ্ড সেন্টারের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সাবমেরিনটি বালি দ্বীপের কাছাকাছি সাগরের বুকে লাইভ টর্পেডো ড্রিল পরিচালনা করেছিল এবং নিখোঁজ হওয়ার আগে একটি সরাসরি টর্পেডো নিক্ষেপ করেছিল সাগরে। এই ঘটনার পর পরই ইন্দোনেশিয়ার এবং অন্যান্য দেশের একাধিক রেসকিউ জাহাজ সাবমেরিনটির সন্ধানে পাঠানো হয়। তবে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর নিজস্ব কোন সাবমেরিন রেসকিউ ভ্যাসেল না থাকায় বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যায় উদ্ধার অভিযান। যদিও কমপক্ষে ৬টি যুদ্ধ জাহাজ, একটি হেলিকপ্টার ও ৪০০ লোক সাবমেরিন উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছিল।
জার্মানীর তৈরি পুরনো টাইপ ২০৯ সাবমেরিনের ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা কেআরআই নাঙ্গালা (৪০২) ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর দুটি কাকড়া শ্রেণির ডিজেল ইলেক্ট্রিক সাবমেরিনের মধ্যে একটি ছিল এটি। ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী ১৯৭৭ সালের সালে এটি অর্ডার করলেও এটি লাউঞ্চ করা হয় ১০ই সেপ্টেম্বর ১৯৮০ সালে। একাধিক সী ট্রায়াল শেষে ১৯৮১ সালের ২১শে অক্টোবর চূড়ান্তভাবে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীতে কমিশনিং লাভ করে।
সে হিসেবে কেআরআই নাঙ্গালা (৪০২) এ্যাটাক সাবমেরিনটি ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীতে প্রায় ৪০ বছর সার্ভিসে ছিল। এটিকে প্রথমে ১৯৮৯ সালে এবং সর্বশেষ ২০১২ সালে বড় ধরণের মেরামত বা মেজর আপগ্রেডিং করা হয়। এতে বেশকিছু নতুন প্রযুক্তি ও ওয়েপন্স সিস্টেম ইনস্টল করে এর সার্ভিস লাইফ টাইম বৃদ্ধি করে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনী ব্যবহার করতে থাকে।
১,৩৯৫ টনের কাকড়া ক্লাসের এ্যাটাক সাবমেরিনটি তৈরি করে জার্মানীর বিখ্যাত হাওয়াল্ডসওয়ার্ক-ডয়চে ওয়ার্ফ্ট কর্পোরেশন। ১৯৮১ সালে সার্ভিসে আসার পর থেকে কেআরআই নাঙ্গালা এ্যাটাক সাবমেরিনটি ভারত মহাসাগর, পূর্ব তিমুর, ও নুনুকান রিজেন্সিতে সফলভাবে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং নেভাল অপারেশনে অংশ নেয়। তাছাড়া সাবমেরিনটি বিগত চল্লিশ বছরে ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর পক্ষে বিভিন্ন ধরণের নৌ মহড়ায় অংশ নেয়। যার মধ্যে সহযোগিতা ভাসমান প্রস্তুতি এবং প্রশিক্ষণ, যৌথ সামুদ্রিক অপারেশন অনুশীলন, এবং ইউএসএস ওকলাহোমা এর সাথে যৌথভাবে পাসিং ড্রীল অন্যতম।
কেআরআই নাঙ্গালা এ্যাটাক সাবমেরিন ১৯৮১ সালে সার্ভিসে আসায় এটি এ পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ বছর সার্ভিস দিয়েছে। অথচ এর সার্ভিস লাইফ টাইম আরো অনেক আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কারণ সাধারণত ডিজেল চালিত একটি এ্যাটাক সাবমেরিনের আদর্শ সার্ভিস লাইফ টাইম ধরা হয় ২৫ বছর এবং ১ থেকে ২ বার মেজর আপগ্রেডিং বা পূর্ণঃ মেরামত করে এর সার্ভিস লাইফ টাইম সর্বোচ্চ মোট ৩০-৩২ বছর পর্যন্ত বর্ধিত করা যেতে পারে। তবে এই সময়ের পর সাবমেরিনটি গভীর সমুদ্রে দীর্ঘ মেয়াদে অপারেশনে ব্যবহার করাটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যেতে পারে।
গতকাল ৩রা মে ওয়াল্ড ইকনোমীক ফোরাম ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের উপর আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স প্রযুক্তি কিভাবে প্রভাব বিস্তার করতে যাচ্ছে তার উপর এক গবেষণামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের প্রতিবেদনের দেয়া তথ্যমতে, আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স প্রযুক্তি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই প্রায় ১৪ মিলিয়ন চাকরি বা কর্মক্ষেত্র বিলুপ্ত করে দিতে পারে।
তাদের গবেষণায় দেখা গেছে যে, অদূর ভবিষ্যতে সেবাখাত, কৃষি ও শিল্প কলকারখানায় নতুন ধারায় উচ্চ প্রযুক্তির আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্সের (এআই) ব্যাপক ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। যা কিনা অদূর ভবিষ্যতে এআই প্রযুক্তি মানব জীবনের কর্মসংস্থানে বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে।
(এআই) এক দিকে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করবে বলে আশা করা হলেও তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ তাদের কাজ হারাতে পারে। ২০২৭ সালের মধ্যেই এই উচ্চ প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার শুরুর ফলে প্রায় ৬৯ মিলিয়ন প্রযুক্তি নির্ভর নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হবে এবং তার পাশাপাশি ঘনশ্রম নির্ভর প্রায় ৮৩ মিলিয়ন চাকুরি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।
বর্তমানে সারাবিশ্বের আনুমানিক ৬৭৩ মিলিয়ন কর্মরত চাকুরি রয়েছে। তাতে মোটের উপর ১৪ মিলিয়ন চাকুরি বিলুপ্তি হয়ে গেলে সারা বিশ্বে প্রায় ২% কর্মী তাদের কাজ হারাবেন। যদিও ভবিষ্যতে যুক্তিসঙ্গত কারণেই এই ধারণাটি বাস্তবে সত্য নাও হতে পারে।
তবে আমার মতে, আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স (এআই) এর সবচেয়ে ভংয়কর ব্যবহার হতে যাচ্ছে হাইটেক বেসড মিলিটারি সাইন্স এন্ড টেকনোলজি ডেভলমেন্টে। ইতোমধ্যেই যার আলামত কিনা এখনই শুরু হয়ে গেছে। অন্যদিকে আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে অটোনোমাস কিলার ড্রোন বা রোবট নিয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিশ্বের প্রথম সারির সকল সুপার পাওয়ার দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ব্যাপক মাত্রায় এক অশুভ প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্সের কাছ থেকে ২.৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ১৮টি হাইলি এডভান্স রাফায়েল (এফ-৪) সিরিজের যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করেছে। তাছাড়া ইন্দোনেশিয়া গত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১.১ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে প্রথম ধাপে ৬টি একই সিরিজের এডভান্স রাফায়েল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের চুক্তি করেছিল। যদিও ইন্দোনেশিয়ার বিমান বাহিনী পর্যায়ক্রমে মোট ৪২টি রাফায়েল টুইন ইঞ্জিন ফাইটার জেট সার্ভিসে আনার পরিকল্পনা করেছে এবং ফ্রান্সের ডেসাল্ট এভিয়েশন কর্পোরেশন খুব সম্ভবত আগামী ২০২৭ সাল থেকে এই যুদ্ধবিমান সরবরাহ শুরু করবে।
বর্তমানে রাফায়েল জেট ফাইটার অপারেট করার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ১০২টি রয়েছ ফ্রান্সের বিমান বাহিনীতে। তাছাড়া ভারত ৩৬টি মিশর ২৪টি, কাতার ২৭টি (আরো ৯টি অর্ডার করা আছে) এবং গ্রীস ১৮টি রাফায়েল জেট ফাইটার অপারেট করে। তবে চলিতি বছরেই সংযুক্ত আরব আমিরাত ৮০টি, মিশর ৩০টি এবং ইন্দোনেশিয়া ৪২টি রাফায়েল জেট ফাইটার ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করেছে।
আসলে ফ্রান্সের ডেসাল্ট এভিয়েশনের তৈরি রাফালে ৪++ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হিসেবে ইউরোফাইটার তাইফুন, রাশিয়ার এসইউ-৩৫ এবং মার্কিন এফ-১৫এক্স এর পাশাপাশি সবার উপরে রয়েছে রাফালের নাম। তাছাড়া ফ্রান্স কিন্তু অনেক আগেই ইউরোফাইটার তাইফুন প্রজেক্ট থেকে বের হয়ে গিয়ে একেবারে নিজস্ব উচ্চ প্রযুক্তির হাইলি এডভান্স রাফায়েল জেট ফাইটার সার্ভিসে আনে।
রাফায়েল সিরিজের যুদ্ধবিমানের প্রধান অস্ত্র হিসেবে ৪ ম্যাক গতির ১১০ কিলোমিটার পাল্লার মেটওর ও মিকা এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইলের পাশাপাশি ম্যাজিক-২ এয়ার টু এয়ার মিসাইল অপারেট করে। এদিকে আকাশ থেকে ভূমিতে হামলা চালানোর উপযোগী এসসিএএলপি-ইজি ও হাম্মার এয়ার টু গ্রাউণ্ড মিসাইল সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। হাম্মার বা Highly Agile Modular Munition Extended Range (HAMMER) হচ্ছে একটি মধ্যম পাল্লার গ্রাউণ্ড এ্যাটাক মিসাইল সিস্টেম। তাছাড়া এয়ার লঞ্চড বেসড এএম-৩৯ এস্কোট এন্টিশীপ মিসাইল এতে ইনস্টল করা হয়। প্রয়োজনে এতে এএসএমপি-এ নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল মিসাইল বহন করতে সক্ষম।
এদিকে ফ্রান্সের ডেসাল্ট এভিয়েশন কর্পোরেশন হাইলি আপগ্রেড করে রাফায়েল সিরিজের ক্যারিয়ার বেসড ভার্সন রাফায়েল-এম যুদ্ধবিমান বিশ্বের সামনে প্রকাশ করেছে। এই সিরিজের মাল্টিরোল যুদ্ধবিমানের ম্যাক্সিমাম পেলোড ক্যাপাসিটি ৯.৫ টন। তাছাড়া বর্ধিত রেঞ্জের এয়ার কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার জন্য এই সিরিজের যুদ্ধবিমানে অতিরিক্ত ৬.৭ টন ওজনের তিনটি ৫২৪ গ্যালন (২ হাজার লিটার) জ্বালানী ট্যাঙ্কও বহন করে। এই জ্বালানি ট্যাঙ্কগুলি আবার অন্যান্য এরিয়াল সিস্টেমে রিফুয়েলিং এ ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি কিন্তু নেভাল স্ট্রাইক মিশনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
ফ্রান্সের রাফাল-এম সিরিজের যুদ্ধবিমানের ১৩টি হার্ডপয়েন্টে মিকা ও স্ক্যাল্প ক্রুজ মিসাইলের পাশাপাশি মেটওর এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইল এবং গ্রাউন্ড এ্যাটাক হ্যাম্মার এয়ার টু গ্রাউন্ড মিসাইল বহন করে। তাছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে জিইউবি-১২/২৪ লেজার-গাইডেড বোম্বস, এএস-৩০এল, মার্ক-৮২ জিইউবি-৪৯ জিপিএস গাইডেড বোম্বস ব্যবহার করে। তাছাড়া মেরিটাইম স্ট্রাইক মিশনের জন্য রাফায়েল-এম যুদ্ধবিমান এয়ার লঞ্চড বেসড এক্সোসেট এএম-৩৯ ব্লক-২ অ্যান্টি-শিপ মিসাইল বহন করতে পারে।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, গত ২০২০ সালের জুলাই কিংবা আগস্ট মাসে লিবিয়ায় থাকা তুরস্কের সামরিক ঘাঁটিতে খুব সম্ভবত ফ্রান্সের তৈরি বেশকিছু রাফাল জেট ফাইটার এয়ার স্টাইক চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে একেবারেই নিরাপদে পালিয়ে যায়। তাছাড়া গত ২০১০ সালের দিকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে লিবিয়ার তৎকালীন গাদ্দাফি সামরিক বাহিনীর এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে বিশ্ব মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল ফ্রান্সের ড্যাসাল্ট রাফায়েল যুদ্ধবিমান। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যৌথভাবে ইরাক এভং সিরিয়ায় অসংখ্য বার কমব্যাট এয়ার মিশনে সফলতার সাথে অংশগ্রহণ করে।
ইন্টারনেটের একাধিক সূত্রে ফ্রান্সের রাফায়েল জেট ফাইটারের পার ইউনিট কস্ট ৮০ থেকে ৯০ মিলিয়ন ডলার দেখানো হলেও বাস্তবে এর দাম কিন্তু ওয়েপন্স, লজিস্টিক সাপোর্ট এন্ড ট্রেনিং প্যাকেজসহ ২০০ মিলিয়ন ডলারের অধিক হয়ে যায়। আবার এর পার আওয়ার ফ্লাইট এন্ড অপারেটিং কস্ট প্রায় ১৮ হাজার ডলার। যেখানে কিনা মার্কিন এফ-৩৫ স্টেলথ জেট ফাইটারের পার আওয়ার অপারেটিং কস্ট প্রায় ৩৬ হাজার ডলার এবং ইউরোপের মাল্টিনেশন প্রজেক্ট ইউরোফাইটার তাইফুন জেট ফাইটারের পার আওয়ার অপারেটিং কস্ট ১৬-১৮ হাজার ডলার দেখানো হয়েছে।
বর্তমান যুগে আধুনিক যুদ্ধবিমানের রাডার ক্রস সেকশন বা (আরসিএস)-কে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে দেখা হয়। যে যুদ্ধবিমানের আরসিএস যতই কম হবে তা শত্রু পক্ষের রাডারে যুদ্ধবিমান সনাক্ত করাটা ততই জটিল ও কঠিন একটি কাজ হবে। তাই আরসিএস সক্ষমতার বিবেচনায়, আমেরিকার চতুর্থ প্রজন্মের এফ-১৬ সিরিজের যুদ্ধবিমানের আরসিএস ৩-৫ স্কোয়ার মিটার। যেখানে ইউরোফাইটার তাইফুনের আরসিএস ০.৫ স্কোয়ার মিটার এবং এডভান্স রাফায়েল জেট ফাইটারের আরসিএস ১.০ স্কোয়ার মিটার দেখানো হয়েছে। আবার মার্কিন বোয়িং কর্পোরেশনের ৪.৫ জেনারেশনের এফ/এ-১৮ সুপার হর্নেট যুদ্ধবিমানের আরসিএস ১ স্কোয়ার মিটার। এদিক থেকেও রাফায়েল জেট ফাইটার কিন্তু অনেকটাই এগিয়ে থাকবে।
এদিকে ফ্রান্সের ড্যাসাল্ট এভিয়েশন কর্পোরেশনের তরফে জানানো হয়েছে যে, রাফায়েল জেট ব্যবহারকারী দেশগুলোকে আগামী ২০৭০ সাল পর্যন্ত রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, সার্ভিসিং এর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট ও স্পেয়ার পার্টস সরবরাহের বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত করা হবে। তাছাড়া আগামী ২০৩৫ থেকে ২০৪০ এর মধ্যেই ৬ষ্ঠ প্রজন্মের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান Future Combat Air System (FACS) উৎপাদনে যেতে এক রকম বদ্ধপরিকর ফ্রান্সের দ্যাসাল্ট এভিয়েশন কর্পোরেশন। সে সময় ফ্রান্স নিজেদের বহর থেকে রাফালে যুদ্ধবিমান অবসরে পাঠানো শুরু করবে। তবে বাকি ক্রেতারা যাতে নিশ্চিন্তে দীর্ঘ মেয়াদে রাফালে উড়িয়ে যেতে পারে সে জন্য আরও ২টি বড় ধরনের আপগ্রেড প্যাকেজ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ফ্রান্স।
সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক ও লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com
বর্তমানে আমেরিকার বাহিরে একমাত্র দেশ হিসেবে ফ্রান্স একটি ‘চালর্স দ্যা গল’ নিউক্লিয়ার পাওয়ারড এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার অপারেট করে। তাছাড়া আমেরিকা ও ফ্রান্স ব্যাতিত বিশ্বের আর কোন দেশে নিউক্লিয়ার পাওয়ারড এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার নেই। মূলত গত ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ফ্রান্স তার নৌবাহিনীর জন্য একটি নতুন প্রজন্মের নিউক্লিয়ার পাওয়ারড এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের (পিএ-এনজি) স্কেল মডেল উন্মোচন করে। যা আগামী ২০৩৮ সালে সার্ভিসে আ্নতে চায় ফ্রান্স এবং এটি ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে বর্তমানে অপারেশনাল থাকা একমাত্র ‘চার্লস দি গল’ নিউক এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের স্থলাভিষিক্ত হবে। এটি মুলত তৈরি করবে ‘ফ্রেঞ্চ নেভাল গ্রুপ’।
ফ্রান্সের নতুন (পিএ-এনজি) সুপার ক্যারিয়ারে ভবিষ্যতে যুদ্ধবিমান হিসেবে রাফাল-এম সিরিজের পরবর্তী এডভান্স ভেরিয়েন্টের যুদ্ধবিমান অপারেট করা হবে। এই নতুন প্রজন্মের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারে আনুমানিক মোট ৩২টি যুদ্ধবিমান, অজানা সংখ্যক হেলিকপ্টার ও (ইউএভি) বহন করার উপযোগী করে তৈরি করতে যাচ্ছে ফ্রান্সের নেভাল শিপ বিল্ডিং কোম্পানি ‘ফ্রেঞ্চ নেভাল গ্রুপ’।
এ ক্যারিয়ার তৈরির কাজ শুরু হবে ২০২৫ সালে এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী এটিকে ফ্রান্সের নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে ২০৩৬-৩৭ সালের দিকে এবং ২০৩৮ সালে নৌবাহিনীতে চূড়ান্তভাবে কমিশনিং করা হবে। আনুমানিক ৭৫ হাজারের আধিক টন ওজনের নতুন প্রজন্মের সুপার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের দৈর্ঘ্য ৩১০ মিটার, প্রস্থ হবে ৮৫ মিটার এবং বিম হবে ৪০ মিটার। তবে এর চূড়ান্ত ডিজাইন নির্ধারণ করা হবে আগামী ২০২৫ সালে। এর আনুমানিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৯ বিলিয়ন ডলার। এর ফ্লাইট ডেক সার্ফেস এরিয়া হবে ১৭ হাজার স্কোয়ার মিটারের অধিক।
ফ্রান্সের এই নেক্সট জেনারেশনের এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারে এরিয়াল সিস্টেম উড্ডয়ন ও অবতরণের জন্য একেবারে নতুন প্রযুক্তির ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিভ এয়ারক্রাফট লঞ্চড সিস্টেম (ইএমএএলএস) এবং এডভান্স এরেস্টিং গিয়ার (এএজি) সিস্টেম ইনস্টল করবে ফ্রান্স। এজন্য গত ২০২২ সালের ১৯শে আগস্ট ফ্রান্স আমেরিকার জেনারেল এ্যাটোমিক কোম্পানির কাছে এই নতুন টেকনোলজি ডেভলপমেন্টের জন্য ৮.৮ মিলিয়ন ডলারের একটি কন্টাক্ট দিয়েছে।
সর্বোচ্চ ২৭-৩০ নটিক্যাল মাইল গতি সম্পন্ন এই ক্যারিয়ারের রেঞ্জ হবে আনলিমিটেড। তবে সার্ভিসে আসার পর এর প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ২৫ বছর। শক্তি উৎপাদনের জন্য এটিতে ব্যবহৃত হবে ২টি ২২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কে-২২ পেসারাইজড ওয়াটার নিউক্লিয়ার রিএক্টর। যা কিনা ৩০ হাজার হর্স পাওয়ার শক্তি উৎপন্ন করবে। এটিতে একসাথে ২ হাজারের উপর নাবিক, ক্রু, ইঞ্জিনিয়ার এবং অফিসার অবস্থান করতে পারবেন।
বর্তমানে ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে অপারেশনাল একমাত্র নিউক্লিয়ার পাওয়ারড এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার থাকা ‘চার্লস দি গল’ সার্ভিসে আসে ২০০১ সালের ১৮ই মে। বর্তমানে বিশ্বের বুকে প্রথম কোন দেশ হিসেবে আমেরিকার নৌবাহিনীতে ১০টি নিমিটজ ক্লাস সুপার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার এবং সদ্য নির্মিত ১৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ১টি জোরাল্ড আর ফোর্ড ক্লাস সুপার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার অপারেশনাল রয়েছে। তাছাড়া আমেরিকার বাহিরে একমাত্র দেশ হিসেবে ফ্রান্স ১টি নিউক্লিয়ার পাওয়ারড এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ব্যবহার করে।
গত ২০২২ সালে জার্মানিকে পেছনে ফেলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কার (ইভি) রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে রেড জায়ান্ট চীন। যদিও এখনো পর্যন্ত বিশ্বের প্রথম স্থানীয় অটোমোবাইলস রপ্তানিকারক দেশে হিসেবে নিজের যোগ্য স্থান দখল করে রেখেছে জাপান। আসলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাড়ি (ইভি) উৎপাদন ও রপ্তানিতে অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে চীন।
২০২০ সালে ভয়াবহ করোনা মহামারির মধ্যেও চীন প্রায় ১ মিলিয়ন ইউনিটের কাছাকাছি গাড়ি (ইভি) সারাবিশ্বে রপ্তানি করে। তাছাড়া ২০২১ সালে ২.৫৩ মিলিয়ন ইউনিট এবং ২০২২ সালে ৩.১১ মিলিয়ন ইউনিট গাড়ি রপ্তানি করেছে দেশটি। এদিকে চলতি ২০২৩ সালের ১২ মাসে মোট আনুমানিক প্রায় ৪ মিলিয়ন ইউনিটের কাছাকাছি গাড়ি (ইভি) রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে চীন।
এদিকে চীনের জেনারেল এডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী চীন চলতি ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি থেকে মার্চ ২০২৩) সারাবিশ্বে ১.০৭ ইউনিট ভেইকলস রপ্তানি করে। যা কিনা গত ২০২২ সালের একই সময়ে তুলনায় ৫৮.৩% বেশি। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে রপ্তানিকৃত গাড়ির আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য ১৪৭.৫ বিলিয়ন ইউয়ান বা ২১.৫ বিলিয়ন ডলার।
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির দেয়া তথ্যমতে, আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি ২০২৩ সালের সারা বছরে ইলেক্ট্রিক ভেইকলস (ইভি) চাহিদা ৩৫% বৃদ্ধি পেয়ে ১৪ মিলিয়ন ইউনিটে পৌঁছে যেতে পারে। তাছাড়া ২০২২ সালে যত গাড়ি বিক্রি হয়েছিল তার ১৪% ছিল ইলেক্ট্রিক কার (ইভি) বা বিদ্যুৎ চালিত হাইব্রিড গাড়ি। যা কিনা ২০২০ সালে ছিল মাত্র ৪% এবং ২০২৩ সালে তা ১৮% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
তবে এখানে প্রকাশ থাকে যে, এই (ইভি) কারগুলো মেইড ইন চায়না হলেও এর একটি বড় অংশের মালিক বা ব্রান্ড হচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার টেসলা বা জার্মানির বিএমডাব্লিউ এর মতো বড় বড় অটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। যারা চীনে ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপন করে কম খরচে ইভি বা হাইব্রিড কার উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করে।
অবশ্য বর্তমানে চীনের কিছু পিউর কোম্পানি যেমন ধরুন বিওয়াইডি, নিও, এমজি এবং এক্স-পেং চীনের নিজস্ব ব্রান্ডের ও দেশীয় ইভি কার ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি বিভিন্ন সিরিজের সাশ্রয়ী দামের ইভি কার উৎপাদন ও নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করে থাকে।