Monthly Archive November 27, 2022

BySherazur Rahman

মার্কিন লকহীড মার্টিন কোর্পোরেশনের এমএইচ-৬০আর রোমিও সী-হক হেলিকপ্টারঃ

সারা বিশ্বে সার্ভিসে থাকা এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফার এন্ড এন্টি সারফেস ওয়ারফার হেলিকপ্টার হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লর্কহীড মার্টিন কর্পোরেশনের তৈরি এমএইচ-৬০আর রোমিও সী-হক, ইতালি ও যুক্তরাজ্যের যৌথ তৈরি এডাব্লিউ-১০১, এডাব্লিউ-১৫৯, ফ্রান্স, জার্মান, ইতালি এবং নেদারল্যান্ডেসের যৌথ প্রযুক্তিতে তৈরি এনএইচ-৯০, চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি জেড-১৮এফ সিরিজের এবং রাশিয়ার তৈরি কেমভ কেএ-২৭পিএল হেলিকপ্টারকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। তবে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও সাগরের বুকে কার্যকারিতার বিচারে সবার উপরে উঠে এসেছে আমেরিকার তৈরি এডভান্স এমএইচ-৬০আর ‘রোমিও’ সী-হক হেলিকপ্টারের নাম।

বর্তমানে এমএইচ-৬০আর ‘রোমিও’ সী-হক হেলিকপ্টারটিকে সবচেয়ে কার্যকর এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি এন্টি-সাবমেরিন এন্ড এন্টি-সারফেস হেলিকপ্টার হিসেবে সারা বিশ্বে রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে। সাবমেরিন কিলার খ্যাত এই  এডভান্স সী-বেসড হেলিকপ্টারটিকে মহাসাগরের বুকে লুকিয়ে থাকা শত্রু নৌবাহিনীর সাবমেরিন কিম্বা যুদ্ধজাহাজকে খুঁজে বের করে অত্যন্ত নির্ভূলভাবে ধ্বংস করার উপযোগী মিসাইল ও টর্পেডো সজ্জিত করে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে। এটিকে কার্যত মার্কিন নেভির পূর্বের এমএইচ-৬০বি/এফ সিরিজের হেলকপ্টারের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে সার্ভিসে আনা হয়েছে।

মার্কিন লকহীড মার্টিন কর্পোরেশনের তৈরি এমএইচ-৬০আর রোমিও হেলিকপ্টার হচ্ছে একাধারে সমুদ্র ভিত্তিক এন্টি-সাবমেরিন ওয়ারফার (এএসডব্লিউ), এন্টি-সার্ফ ওয়ারফার (এএসইউডাব্লু) হেলিকপ্টার। এর পাশাপাশি এটি সার্চিং এন্ড রেসকিউ (এসএআর), নৌ যুদ্ধে সরাসরি সহায়তা (এনজিএফএস), মহাসাগরে নজরদারি, যোগাযোগ, রসদ সরবরাহ এবং উদ্ধারকালীন মুহুর্তে দক্ষতার সাথে সৈন্য বা যাত্রী পরিবহণ করতে সক্ষম।

লকহীড মার্টিন এই হেলিকপ্টারটিতে অত্যন্ত শক্তিশালী দুটি জেনারেল ইলেকট্রিক টি-৭০০-জিই -৪০১-সি টার্বোসেফট ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে। যা কিনা সর্বোচ্চ ১,৪২৫ কিলোওয়াট শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। এটি তার নিজস্ব জ্বালানী সংরক্ষণ ট্যাংকে ২,২৩০ লিটার ফুয়েল ধারণ করতে পারে এবং যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ২,৭২১.৫৫ কেজি পর্যন্ত মালামাল (৬,০০০ পাউণ্ড) কার্গো হুকের সাথে উল্লম্বভাবে পরিবহণ করতে সক্ষম।

এই হেলিকপ্টারের ৪টি হার্ড পয়েন্টে লকহীড মার্টিন নির্মিত এজিএম-১৪৪ হেলফায়ার এন্টি সাবমেরিন মিসাইলসহ বিভিন্ন ধরণের অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত করা হয়েছে। এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফারের জন্য তিনটি এমকে-৫০ বা এমকে-৪৬ (একটিভ/প্যাসিভ) লাইট ওয়েট টর্পেডো বহন করে। তাছাড়া নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য এটিতে একটি মাউন্টেড ৭.৬২ এমএম হেভি মেশিনগান সংযোজন করা হয়েছে।

এই হেলিকপ্টারটিতে লকহীড মার্টিন নির্মিত এএন/এএলকিউ-২১০ ইলেকট্রনিক সাপোর্ট ম্যাপিং সিস্টেম (ইএসএম) ইন্সটল করা হয়েছে। তাছাড়া উচ্চ প্রযুক্তির ইলেক্ট্রনিকস ওয়ারফেয়ার সিস্টেম হিসেবে এটিকে এএন/ এএআর-৪৭ মিসাইল ওর্য়ানিং সিস্টেম, লেজার ওর্য়ানিং সিস্টেম, বিএই সিস্টেম, এএন/ এএলকিউ-১৪৪ ইনফ্রারেড জ্যামার এবং এএন/এএলই-৩৯ (চাফ এবং ফ্লেয়ার ডিকয় ডিসপেনসার) সংযোজন করা হয়েছে।

বিশেষ করে এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফায়ারের জন্য এটিতে স্নোবয় লঞ্চার এবং রেইথন এএন/একিউএস-২২ এডভান্স এয়ারব্রোন লো ফিকোয়েন্সী (এএলএফএস) ডীপ সোনার সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে। এর পাশাপাশি এটিতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি রেইথন এএন/এএএস-৪৪ ডিটেক্টিং এন্ড ট্র্যাকিং সিস্টেম ইন্সটল করা হয়েছে।

এমএইচ-৬০আর রোমিও হেলিকপ্টারের মোট ওজন ৬,৮৯৫ কেজি। এটি প্রতি সেকেন্ডে ৮.৩৮ মিটার উপরে উড্ডয়ন করতে সক্ষম। এর সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘন্টায় ২৬৭ কিলোমিটা এবং ক্রুইজিং স্পীড ১৬৮ কিলোমিটার/ঘন্টা। এটির সর্বোচ্চ রেঞ্জ ৮৩৪ কিলোমিটার এবং সার্ভিস সিলিং ৩,৪৩৮ মিটার।

বর্তমানে সারা বিশ্বে আমেরিকার নৌবাহিনীসহ সারা বিশ্বের মোট ১৫টি দেশ এই জাতীয় এমএইচ/এসএইচ সিরিজের এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফার এন্ড এন্টি সারফেস হেলিকপ্টার অপারেট করে। তবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৫৩০টি এমএইচ/এসএইচ-৬০ সিরিজের হেলিকপ্টার অপারেট করে মার্কিন নৌবাহিনী। তাছাড়া তুরস্ক ২৪টি, অস্ট্রেলিয়া ২৩টি সৌদি আরব ৯টি এবং ভারত ৬টি এমএইচ-৬০আর ‘রোমিও’ সী-হক সিরিজের হেলিকপ্টার অপারেট করে (মোট ২৪টি অর্ডারকৃত)।

সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক এবং লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

BySherazur Rahman

তুরস্কের আপকামিং বায়রাক্তার কিজিলেমা ড্রোন বা আনমেনড কমব্যাট এয়ারক্রাফটঃ

তুরস্কের ড্রোন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ‘বায়কার’ তাদের নতুন প্রজন্মের বায়রাক্তার ‘কিযিল এলমা’ (Kizilelma) ড্রোন বা আনমেনড কমব্যাট এয়ারক্রাফট রানওয়েতে অটোমেটিক ট্যাক্সিং এবং রানিং টেস্ট সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। আর তার সাথে এটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের প্রথম কোন আফটার টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিন চালিত সুপারসনিক গতির আনমেনড কমব্যাট এয়ারক্রাফট সিস্টেম। এটিকে মূলত একেবারে পাইলট বিহীন জেট ফাইটারের মতো কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার বিশেষ উপযোগী করে ডিজাইন করেছে তুর্কী ভিত্তিক ড্রোন এভিয়েশন জায়ান্ট “বায়কার”।

তুরস্কের মিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, নতুন প্রজন্মের বায়রাক্তার ‘কিযিল এলমা’ ড্রোন বা আনমেনড লাইট ফাইটার জেটের প্রথম প্রটোটাইপ কপির ফ্লাইট টেস্ট সম্পন্ন করা হবে আগামী ২০২৩ সালের শুরুর দিকে। যদিও বায়কার তাদের এই নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেছিল আজ থেকে প্রায় এক দশক আগেই। তবে অবশেষে সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে আকাশে উড্ডয়ন করতে যাচ্ছে আগামী ছয় মাসের মধ্যেই। তবে ফুল স্কেলে সার্ভিসে আসতে তুরস্ককে আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।

তুরস্ক আসলে এই নতুন কনসেপ্টের আনমেনড কমব্যাট এরিয়াল সিয়স্টেমটি যতটা সম্ভব আরসিএস কমিয়ে বা স্টেলথ প্রযুক্তি সম্পন্ন করেই সার্ভিসে আনতে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এর গতি ও শক্তি যোগানোর জন্য আপাতত ইউক্রেনের তৈরি AI-322F আফটার টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে। তবে এর বিকল্প হিসেবে অদূর ভবিষ্যতে তুরস্কের ‘তুসাস’ বা TUSAŞ Engine Industries (TEI) এর তৈরি অত্যন্ত শক্তিশালী টিএফ-৬০০০ আফটার টার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে।

এর দৈর্ঘ্য ১৪.৭ মিটার, উইন্সপেন ১০ মিটার এবং উচ্চতা ৩.৩ মিটার। এর ম্যাক্সিমাম টেকঅফ ওয়েট ৬ হাজার কেজি। এর অপারেশনাল কমব্যাট রেঞ্জ হবে ৯৩০ কিলোমিটার। তাছাড়া এর ম্যাক্সিমাম স্পীড ৯০০ কিলোমিটার এবং ক্রুইজ স্পীড ৭৫০ কিলোমিটার পার আওয়ার হবে। এটি ভূমি থেকে ৩৯ হাজারের অধিক ফিট উচ্চতায় উড্ডয়ন করে একাধারে ৫ ঘন্টা কমব্যাট মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। যদিও বিষয়টি কিন্তু এখনো পর্যন্ত বাস্তবে পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব হয়নি।

এভিয়নিক্স সিস্টেম হিসেবে এটিতে তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি অত্যাধুনিক (এইএসএ) রাডারের পাশাপাশি এ্যাসেলসাল কোম্পানিত তৈরি এপারচার টার্গেটিং সিস্টেম, ইলেক্ট্রনিক্স ওয়ারফার পড এবং ন্যাশনাল (এসআইজিআইএনটি) মডিউল ইনস্টল করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনে সার্ভিসে আসার পরবর্তী সময়ে আরো নতুন নতুন বেশকিছু ফিচার ইনস্টল করতে পারে ‘বায়কার’ কোম্পানি।

এক্টিভ ইলেক্ট্রনিক্যালী স্ক্যান্ড এ্যারী (এইএসএ) রাডার সমৃদ্ধ এই আনমেনড কমব্যাট এয়ারক্রাফটের ম্যাক্সিমাম পেলোড ক্যাপাসিটি ১,৫০০ কেজি বা ১.৫ টন। এটি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার ফিট উচ্চতায় একটানা ৬ ঘন্টা পর্যন্ত কমব্যাট মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম হবে বলে জানিয়েছে তুর্কী ‘বায়কার’ কোম্পানি। এর দুটি ইন্টারনাল এবং ৬টি এক্সটার্নাল হাড পয়েন্টে বিভিন্ন সিরিজের মিসাইল, এসওএম মিসাইল, এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইলসহ গাইডেড এন্ড আনগাইডেড বম্বস ইনস্টল করা সম্ভব।

তুরস্ক অদূর ভবিষ্যতে গ্রাউন্ড এ্যাটাক, ক্লোজড এয়ার সাপোর্ট, এন্টিশীপ মিসাইল স্টাইক এবং মেরিটাইম কমব্যাট অপারেশন দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার জন্য নতুন প্রজন্মের চালকবিহীন এই এডভান্স লাইট ফাইটার জেটকে বিশেষভাবে ডিজাইন করছে। এটিতে বর্তমানে যে প্রযুক্তি ইনস্টল করা হয়েছে তার শতভাগ কিন্তু তুরস্কের নিজের প্রযুক্তি। যা কিনা অদূর ভবিষ্যতে তুরস্কের বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান স্বল্পতার একটি বিকল্প উন্নত ব্যবস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।

এটিকে কিন্তু তুরস্কের তৈরি টিসিজি ‘আনাদুলু’ এয়ারক্রাফট বা হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার থেকে খুব সহজেই অপারেট করার উপযোগী করতে সম্পূর্ণভাবে অটোনোমাস টেক অফ এন্ড ল্যান্ডিং ক্যাপাবিলিটি নিশ্চিত করে ডিজাইন করা হয়েছে। তুরস্ক আপাতত তার এই নতুন প্রজন্মের বায়রাক্তার ‘কিযিল এলমা’ কমব্যাট ড্রোন বা আনমেনড অটোবনোমাস এন্ড এডভান্স লাইট ফাইটার জেটকে একটি গেম চেঞ্জ্যার ওয়েপন্স হিসেবেই আগামী ২০২৫ সালের অধ্যেই সার্ভিসে আনতে চায়।

সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক এবং লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

BySherazur Rahman

রাশিয়ার সুবিশাল আকারের মিসাইল মজুত এবং ইউক্রেনে ব্যবহার নিয়ে একটি পর্যালোচনাঃ

চলতি ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ই নভেম্বর পর্যন্ত যে কোন কারণেই হোক ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনে রাশিয়া তার বিমান বাহিনীর এয়ার ফ্লীটকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারেনি। তবে তারা কিন্তু ঠিকই ব্যাপক মাত্রায় কনভেনশনাল ওয়ারহেড বেসড ক্রুজ এন্ড ব্যালেস্টিক মিসাইল হামলা করেছে ইউক্রেনের উপর। রাশিয়া যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট প্রায় ৩,৫০০-৩,৬০০টি বিভিন্ন পাল্লার মিসাইল হামলা করেছে ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনা, রসদ এবং অস্ত্র গুদাম ধ্বংস করতে। তবে তার পাশাপাশি রাশিয়া তার মিসাইল শক্তি দিয়ে ভয়াবহ ভাবে ইউক্রেনের জ্বালানী ও খাদ্য মজুত, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বড় বড় বেসামরিক সেতু ও ভবন ধ্বংস ধ্বংস করে দিয়েছে।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, যুদ্ধের শুরু থেকে রাশিয়া তার একেবারে নতুন প্রজন্মের হাইপারসনিক গতির ‘কিনঝাল’ (কেএইচ-৪৭এম২) মিসাইল প্রকাশ্যে এনে সারা বিশ্বকে চমকে দেয়। রাশিয়া খুব সম্ভবত এখনো পর্যন্ত এয়ার লঞ্চড বেসড আনুমানিক ১৬টি ‘কিনঝাল’ (কেএইচ-৪৭এম২) হাইপারসনিক মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইউক্রেনের উপর। আর এখন তাদের ভান্ডারে আনুমানিক আরো হয়ত ৪৫টি ‘কিনঝাল’ মিসাইলের মজুত থাকতে পারে।

রাশিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ট রেঞ্জের একটি মিসাইল হচ্ছে ইস্কেন্দার-এম সিরিজের ৯কে৭২০ মিসাইল। যুদ্ধের শুরুর আগে রাশিয়ার কাছে খুব সম্ভবত ৯০০টি এই জাতীয় নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল ট্যাক্টিক্যাল মিসাইলের বিশাল মজুত ছিল এবং চলতি ২০২২ সালে রাশিয়া নতুন করে আরো ৫০টি ইস্কেন্দার মিসাইল তৈরি করে। তবে ইউক্রেনের একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে রাশিয়া এ পর্যন্ত মোট ৮২৯টি ইস্কেন্দার মিসাইল হামলা চালিয়েছে এবং তাদের হাতে আরো প্রায় ১২০টি বা তার কাছাকাছি এই জাতীয় (৯কে৭২০) সিরিজের মিসাইল মজুত থাকতে পারে। যা কিনা মোট মজুতের মাত্র ১৩%।

রাশিয়ার অস্ত্র ভান্ডারে ১,৫০০ থেকে ২,৫০০ কিলোমিটার রেঞ্জের প্রায় ৬২০টি যুদ্ধজাহাজ এবং সাবমেরিন ভিত্তিক ‘ক্যালিবার’ মিসাইলের বড় আকারের মজুত ছিল। তারা এ পর্যন্ত মোট প্রায় ৩৯৫টি ক্যালিবার ক্রুজ মিসাইল ইউক্রেনের উপর হামলা করেছে এবং তাদের হাতে বর্তমানে প্রায় ২৩০টি এই জাতীয় মিসাইলের মজুত থাকতে পারে।

চলতি নভেম্বরের হিসেব অনুযায়ী রাশিয়ার অস্ত্র ভান্ডারে কেএইচ-১০১ মিসাইল ছিল ২৬৪টি, কেএইচ-৫৫৫ মিসাইল ৪৫০টি, কেএইচ-৩৫ মিসাইল ৮৬০টি, কেএইচ-২২/৩২ ৩৭০টি এবং ৩এম৫৫ সিরিজের মিসাইলের মোট মজুত ছিল প্রায় ৬০০টি। তবে ইউক্রেনের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এ পর্যন্ত কেএইচ-১০১ মিসাইল হামলা চালিয়েছে ১৩২টি এবং বর্তমানে তাদের হাতে মজুত থাকতে পারে প্রায় ১৩২টি কেএইচ-১০১ মিসাইল। তাছাড়া রাশিয়া কিন্তু ইউক্রেনে কেএইচ-৫৫৫ মিসাইল ১৫০টি, কেএইচ-৩৫ মিসাইল ৫০৪টি, কেএইচ-২২/৩২ মিসাইল ২৫০টি এবং ৩এম৫৫ মিসাইল হামলা বা হীট করেছে মোট প্রায় ১২৩টি।

তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মিসাইল ব্যবহার করেছে এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের ৯এম৮৩ এবং ৯এম৮৩এমই ইন্টারসেপ্টর মিসাইল। যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া এ পর্যন্ত মোট প্রায় ১,০২০-১,১০০টি এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মিসাইল ব্যবহার করেছে বা ইউক্রেনের আক্রমনে ধ্বংস হয়েছে। রাশিয়া আকাশে এরিয়াল টার্গেট ধ্বংসের পাশাপাশি ল্যান্ড বেসড টের্গেটেও এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্তেমের ইন্টারসেপ্টর মিসাইল ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে। যদিও অবশ্য যুদ্ধ শুরুর আগে রাশিয়ার ভান্ডারে মোট প্রায় ৮,০০০টি এস-৩০০ মিসাইলের বিশাল মজুত ছিল বলে অনুমান করা হয়। তাছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার বা ধ্বংস হয়েছে মোট প্রায় ১,১০০টি। তাই বর্তমানে রাশিয়ার অস্ত্র ভান্ডারে এখনো পর্যন্ত আনুমানিক ৬,৯০০টি এস-৩০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম মিসাইলের সুবিশাল মজুত থাকতে পারে।

পরিশেষে আজকের লেখায় রাশিয়ার মিসাইল সক্ষমতা ও ইউক্রেন যুদ্ধে এর ব্যবহার নিয়ে যে তথ্য বা পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে হয়েছে, তা অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত কারণে অনেকটাই কম বা বেশি হতে পারে। আর রাশিয়ার তরফে এ নিয়ে সুস্পষ্ট কোন তথ্য বিশ্ব মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়নি। আবার পশ্চিমা মিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনের শুরুর পর থেকে রাশয়া এ পর্যন্ত ইউক্রেনে যত মিসাইল হামলা বা স্টাইক চালিয়েছে তার একটি বড় অংশ বা প্রায় দুই শতাধিক বা তার বেশি সংখ্যক ট্যাকটিক্যাল ইস্কেন্দার-এম মিসাইলসহ অন্যান্য বিভিন্ন টাইপের মিসাইল অবিষ্ফোরিত অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে গিয়ে পড়েছে।

সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক এবং লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

BySherazur Rahman

আকাশ যুদ্ধের রাজা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এ আই এম-১২০ডি৩ সিরিজের এডভান্স এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইলঃ

নরওয়ের সরকার সাম্প্রতিক সময়ে তাদের বিমান বাহিনীর সবচেয়ে এডভান্স যুদ্ধবিমান এফ-৩৫এ সিরিজের স্টেলথ জেট ফাইটারের জন্য নতুন করে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। যা দিয়ে নরওয়ের বিমান বাহিনী এফ-৩৫এ স্টেলথ জেট ফাইটারের প্রধান অস্ত্র হিসেবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এআইএম-১২০ডি৩ সিরিজের এডভান্স এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইল ক্রয় করবে। এ জন্য নরওয়ের বিমান বাহিনীর মার্কিন রেইথন কোম্পানির সাথে চুক্তি সম্পন্ন করেছে। আর এই চুক্তির আওতায় রেইথন কোম্পানি ২০২৮ সালের মধ্যে নরওয়ের কাছে এই মিসাইল সরবরাহ করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রেইথন কোম্পানির তৈরি এআইএম-১২০ডি৩ সিরিজের এডভান্স মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার টু এয়ার মিসাইল (এএমআরএএএম-ডি) হচ্ছে এই সিরিজের সবচেয়ে আধুনিক এবং উচ্চ প্রুযুক্তির এয়ার টু এয়ার মিসাইল সিস্টেম। চলতি ২০২২ সালের ৩০শে জুন মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি এফ-১৫ স্টাইক ঈগল যুদ্ধবিমান থেকে পরীক্ষামুলকভাবে এর রেঞ্জের মধ্যে থাকা একটি এরিয়াল টার্গেটকে ধ্বংস করে দেয়।

৪.০ ম্যাক গতির এআইএম-১২০ডি সিরিজের (এএমআরএএএম) এয়ার টু এয়ার মিসাইলের সর্বোচ্চ রেঞ্জ ১৬০ কিলোমটার। যা কিনা ১৯৯৭ সাল থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪র্থ বৃহৎ মিলিটারি এণ্ড ডিফেন্স ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং জায়ান্ট কর্পোরেশন রেইথন (Raytheon) উৎপাদন করে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কালজয়ী এফ-১৫, এফ-৩৫, এফ-১৬ এবং এফ-১৮ সুপার হরনেট যুদ্ধবিমানের মুল প্রাণ হচ্ছে এআইএম-৯ এবং এআইএম-১২০ এয়ার টু এয়ার মিসাইল।

মার্কি্ন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটল প্রুভ এআইএম-১২০ডি৩ সিরিজের এডভান্স এয়ার টু এয়ার মিসাইলের পার ইউনিট কস্ট সম্পর্কে স্পর্ষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এর পার ইউনিট কস্ট হতে পারে আনুমানিক ২.৫ থেকে ৩.০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

যদিও বর্তমানে সারা বিশ্বের মধ্যে বিয়োণ্ড ভিজুয়্যাল রেঞ্জ (বিভিআর) মিসাইল ডিজাইন ও ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রতিযোগিতায় ফ্রান্সের মিটওর, রাশিয়ার আর-৭৭ এবং চীনের পিএল-১৫ দুনিয়া কাঁপাতে শুরু করে দিয়েছে। রাশিয়ার তৈরি আর-৭৭ এয়ার টু এয়ার মিসাইলের রেঞ্জ ১১০ কিলোমিটার, চীনের পিএল-১৫ এর রেঞ্জ ২০০+ কিলমিটার এবং ফ্রান্সের তৈরি মেটওর এডভান্স এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইলের সর্বোচ্চ রেঞ্জ ২০০ কিলোমিটার।

চীন কিন্তু মিডিয়ায় পিএল-১৫ই সিরিজের এক্সপোর্ট ভার্সনের এয়ার টু এয়ার মিসাইলের রেঞ্জ ১৪৫ কিলোমিটার বলে প্রকাশ করেছে। তবে যে যাই বলুক না কেন, একেবারে বাস্তব যুদ্ধে বিশ্বের বুকে আজ অব্ধি সেরা মিসাইল হিসেবে কিন্তু মার্কিন এআইএম-১২০ডি সিরিজের মিডিয়াম রেঞ্জের এয়ার টু এয়ার মিসাইল কিন্তু নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে।

Sherazur Rahman

BySherazur Rahman

সার্ভিসে আসতে যাচ্ছে তুরস্কের নিজস্ব প্রুযক্তির তৈরি লাইট এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ‘টিসিজি আনাদুলু’!

সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের নৌবাহিনীর একটি এডাব্লিউ১ সুপার কোবরা এবং একটি এসএইচ৭০ হেলিকপ্টার প্রথম বারের মতো তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি লাইট এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার বা ল্যান্ডিং হেলিকপ্টার ডক (এলইএইচডি) টিসিজি আনাদুলু (এল-৪০০) এর উপর সফলতার সাথে ল্যান্ডিং করেছে। এটি একটি পরীক্ষামুলক রুটিন মাফিক কাজ হলেও এই ঘটনাটিকে তুরস্কের জন্য একটি মাইলফলক সাফল্য হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তুরস্ক মুলত তাদের ‘টিসিজি আনাদুলু’ ল্যান্ডিং হেলিকপ্টার ডক (এলইএইচডি) এর সকল ডেভলপমেন্ট কাজ এবং পরীক্ষা ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করেছে। এটিকে চলতি ২০২২ সালের একেবারে শেষের দিকে তুর্কী নৌবাহিনির হাতে চূড়ান্তভাবে তুলে দেয়া হবে। এটিকে অনেকটাই স্টেলথে প্রযুক্তি এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ল্যান্ডিং এন্ড টেকঅফ করার বিষয়টি মাথায় রেখেই বেশ শক্তপোক্ত করে ডিজাইন ও তৈরি করা হয়েছে।

তুরস্কের নৌবাহিনী প্রথম ২০১৫ সালে একটি লাইট এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের জন্য অর্ডার করে। এটি মুলত ডিজাইন ও নির্মান করছে তুরস্ক ভিত্তিক সেদেভ শীপবিল্ডিং কর্পোরেশন। এর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় ২০১৫-১৬ সালে এবং প্রথম লঞ্চড করা হয় ৩০শে এপ্রিল ২০১৯ সালে।

২৭,৪৩৬ টন ওজনের এই লাইট ক্যারিয়ারটিতে প্রথমে এফ-৩৫বি সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটার ও অন্যান্য হেলিকপ্টার ব্যবহারের কথা থাকলেও তুরস্ককে এফ-৩৫ স্টেলথ জেট ফাইটার প্রজেক্ট থেকে বের করে দেওয়ায় তুর্কী নৌবাহিনী কার্যত টিসিজি আনাদলু লাইট ক্যারিয়ারটিতে বায়রাক্তার টিবি-৩ ক্যারিয়ার বেসড কমব্যাট ড্রোন (ইউসিএভি), Bayraktar Kızılelma (ইউএভি) সুপার এডভান্স লাইট ফাইটার জেট এবং অন্যান্য সার্ভেলাইন্স এন্ড রিকর্নিসেন্স ড্রোন এবং এন্টি-সাবমেরিন ওয়ারফার হেলিকপ্টার অপারেট করবে।

২৩২ মিটার দৈর্ঘ্যের এই লাইট এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে ১টি আরএএম, ২টি ফ্যালানেক্স সিআইডাব্লিউএস এবং ৫টি ২৫ এম এম এ্যাসেলসান কোম্পানির তৈরি এসটিওপি আরসিডাব্লিউএস ডিফেন্স সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে।

এই ক্যারিয়ারের ম্যাক্সিমাম রেঞ্জ ৯ হাজার কিলমিটার এবং এটি প্রতি ঘন্টায় ২১ নটিক্যাল মাইল গতিতে সাগরের বুকে ছুটে চলতে সক্ষম। ক্যারিয়ারে একইসাথে ৩০-৫০টি কমব্যাট এন্ড নন-কমব্যাট বহন ও নিয়ন্ত্রন করা যাবে বলে মনে করে তুর্কী নৌবাহিনী। আবার সাথে বেশকিছু সংখ্যক কমব্যাট হেলিকপ্টারের পাশাপাশি এন্টি সাবমেরিন এন্ড এন্টিশীপ হেলিকপ্টারও বহন করবে এটি।

Sherazur Rahman

BySherazur Rahman

পোল্যান্ডে মিসাইল হামলাঃ

গতকাল ১৫ই নভেম্বর মঙ্গলবার সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর রটেছে যে, ইউক্রেনে চলমান রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের মুখেই রাশিয়া এবার সরাসরি পোল্যান্ডের মূল ভূখণ্ডে মিসাইল হামলা চালিয়েছে। এই মিসাইল হামলায় দুইজন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়া। তবে এমন আকাঙ্খাকে সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়ে মার্কিন পেন্টাগনের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে যে, রাশিয়ার থেকে আগত মিসাইল প্রতিহত করতে ইউক্রেন সামরিক বাহিনীর ছোঁড়া মিসাইল আঘাত হেনেছে পোল্যান্ডের একটি গ্রামে।

আসলে পোল্যান্ড ন্যাটো জোটের সদস্য দেশ হওয়ায় রাশিয়ার এই মিসাইল হামলাকে ন্যাটোর উপর রাশিয়ার আঘাত বলে প্রচার করা হচ্ছে। পোল্যান্ড এর বিরুদ্ধে ন্যাটোর কাছে জড়ালো আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। যদিও অবশ্য রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে সাফ জানানো হয়েছে যে, ইউক্রেন -পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী কোন মিসাইল হামলা করেনি এবং পোল্যান্ডে আঘাত হানা মিসাইলের সাথে রাশিয়ার আদৌও কোন সম্পর্ক নেই।

এদিকে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত বেশকিছু নিউজ এজেন্সির মারফতে প্রকাশ করা হয়েছে যে, পোল্যান্ডে আঘাত করা মিসাইলটি ইউক্রেনের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম থেকে নিক্ষেপ করা মিসাইল হতে পারে। এর আগে বেশকিছু পশ্চিমা নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়ার ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আঘাত হানে পোল্যান্ডের ওই গ্রামে। তবে এমন দাবি শুরুতেই সম্পূর্ণ ‘উস্কানিমূলক’ বলে দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

বর্তমানে পোল্যান্ড হচ্ছে ন্যাটো জোটের অন্যতম সদস্য দেশ। ন্যাটোর আর্টিকেল ৫ অনুসারে একজন ন্যাটো মেম্বারের উপর হামলা মানে সমস্ত ন্যাটো মেম্বারের উপর হামলা হিসাবে বিবেচনা করে ন্যাটো জোট এবং এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় ন্যাটো জোটের সকল দেশ সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। এখানে প্রকাশ থাকে যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও কিন্তু শুরু হয়েছিল জার্মানির হিটলার বাহিনীর পোল্যান্ডে হামলার মাধ্যমে। যা হোক আপাতত বিশ্বযুদ্ধ লাগার মতো কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।

তবে ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়া আনুমানিক মোট ৩,৫০০টি বা তার কাছাকাছি বিভিন্ন পাল্লার ব্যালেস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল এবং কামিকাজে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। তবে এই ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক বা এর কাছাকাছি নিক্ষেপ করা মিসাইল টার্গেটে গিয়ে বিষ্ফোরণ হয়নি কিংবা একেবারে অক্ষত অবস্থায় ইউক্রেনে গিয়ে পড়েছে। যার মধ্যে কিছু সংখ্যক হয়ত মডিফাইড করে কার্যকর অবস্থায় ফিরিয়ে এনেছে ইউক্রেন। পরবর্তীতে অন্য কারো কুপরামর্শে বা অতি উৎসাহী হয়ে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী নিজেই গোপনে পোল্যান্ডে নিক্ষেপ করে বিভিন্নভাবে এই যুদ্ধে ন্যাটোকে সরাসরি জড়াতে যে চাচ্ছে না তাও নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।

Sherazur Rahman

BySherazur Rahman

জ্বালানী তেল রপ্তানির মাধ্যমে শক্তিশালী অবস্থানে সৌদি আরবের জাতীয় অর্থনীতিঃ

সারা বিশ্বের বড় বড় কর্পোরেশন এবং গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজগুলো চলমান বৈশ্বিক মহামন্দার মুখে ব্যাপক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এখন অধিকাংশ কোম্পানি অর্থ বাঁচাতে কর্মী ছাটাই এর মতো কঠিন পথ বেঁছে নিয়েছে। সেখানে কিনা বড় অংকের মুনাফা অর্জন করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আরামকো কোম্পনি। চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে তেল উৎপাদন এবং রপ্তানিকারক কোম্পানি হিসেবে আরামকো নীট মুনাফা হয়েছে ৪২.৪ বিলিয়ন ডলার।

তাছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ৩৯.৫ বিলিয়ন ডলার এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে নীট মুনাফা হয় ৪৮ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে চলিত অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিক শেষে ১২ মাসে মোট ১৫৮ বিলিয়ন ডলারের নীট মুনাফা অর্জন করার বিষয়ে প্রবলভাবে আশাবাদী সৌদি আরামকো কোম্পানি। বর্তমানে সৌদি আরব প্রতিদিন গড়ে ৭৫ লক্ষ ব্যারেল ক্রুড অয়েল উত্তোলন করে সারা বিশ্বে রপ্তানি করে থাকে। দেশটির তেল রপ্তানির আয়ের শতভাগ কিন্তু রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নিয়ন্ত্রিত হয়।

আর সেই সাথে আরামকো কোম্পানি ২.১৭ ট্রিলিয়ন ডলারের মোট মার্কেট ক্যাপিটাল ভ্যালু নিয়ে পৌঁছে গেছে বিশ্বের একেবারে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির তালিকায়। তাছাড়া ২০২১ সালের ৩১শে মার্চের হিসেব অনুযায়ী আরামকো কোম্পানি নীট মুনাফা অর্জন করে ১০৫.৩৭ বিলিয়ন ডলার। নীট আয়ের দিক দিয়ে ৯৪.৬৮ বিলিয়ন ডলার আয় করে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে থাকে মার্কিন টেক জায়ান্ট এ্যাপল এবং ৩৩.৩৭ বিলিয়ন ডলার নীট প্রফিট অর্জন করে তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানে থাকে মার্কিন রিটেইলার কোম্পানি আমাজন।

এদিকে সৌদি আরবের অর্থনীতি গ্যাস ও জ্বালানী তেল রপ্তানি নির্ভর শিল্পের উপর ভিত্তি করে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে উঠে এসেছে। মাত্র ৩ কোটি ৬১ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ সৌদি আরবের অর্থনীতি ঠিক কতটা শক্তিশালী তা জানতে হলে তাদের হাতে মজুত থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং মোট রপ্তানির পরিমাণ সম্পর্কে ধারনা লাভ করতে হবে। চলতি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের হিসেব অনুযায়ী সৌদি আরবের কাছে ৪৫৭.৪৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা এবং আনুমানিক ৪০০ টন সোনার রিজার্ভ রয়েছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। তাছাড়া মার্কিন আপত্তি উপেক্ষা করে নজিরবিহীনভাবে সৌদি আরব বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে ডলারের পাশাপাশী চীনের মুদ্রা ইউয়ান রিজার্ভ করা শুরু করেছে।

২০২১ সালে সারা বিশ্বে মোট তেল ও গ্যাস রপ্তানি করে ২৮৯.৮২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সালে ১৮৪.১৬ বিলিয়ন ডলার। যদিও চলতি ২০২২ সালের জুলাই মাসে ৩৭.৫ বিলিয়ন ডলারের ক্রুড ওয়েল সারা বিশ্ব রপ্তানি করেছিল। তবে দেশটি প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে ক্রুদ ওয়েল সারা বিশ্বে রপ্তানি করলেও তাদের বৈশ্বিক আমদানি কিন্তু মোটেও কম নয়। ২০২১ সালের ১২ মাসে সৌদি আরব ২১৩.০২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সালে ১৮২ বিলিয়ন ডলারের পন্য ও সেবা সারা বিশ্ব থেকে আমদানি করেছিল। দেশটির অর্থনীতি যথেষ্ঠ শক্তিশালী হলেও তার পাশাপাশি বৈদেশিক ঋন ও দেনার পরিমাণ কিন্তু মোটেও কম কিছু নয়। ২০২২ সালের জুন মাসের হিসেব অনুযায়ী সৌদি আরবের মোট বৈদেশিক ঋন অ দেনার স্থিতির পরিমাণ ছিল ২৫৬ বিলিয়ন ডলার। তবে দেশটির অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিচারে তা কিন্তু অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলেই প্রতিয়মান হয়।

সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক এবং লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

BySherazur Rahman

চলমান বৈশ্বিক মহামন্দার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকটে সারা বিশ্বঃ

একটি বিকাশমান উন্নয়নশীল এবং স্বল্প আয়ের দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিচারের ক্ষেত্রে দেশটির শুধুমাত্র জিডিপি, জিডিপির হার এবং মাথাপিছু আয়ের হিসেব নিয়ে সীমাবদ্ধ থাকলে কিন্তু দেশটির প্রকৃত অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে কোন সঠিক ধারণা পাওয়া যাবে না। এক্ষত্রে অবশ্যই সবার আগে একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং বৈদেশিক বানিজ্য (আমদানি-রপ্তানি) এর ভারসাম্য কোন পর্যায়ে রয়েছে তা বিশ্লেষণ করতে হবে। বিশেষ করে একটি উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশের জন্য স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ (ডলার) থাকাটা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্জনকারী দেশ হিসেবে বিগত ১৭ বছর থেকেই প্রথম স্থান ধরে রেখেছে উদীয়মান অর্থনৈতিক ও সামরিক পরাশক্তি রেড জায়ান চীন। মুলত ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন এবং চলমান বৈশ্বিক মহামন্দার মুখে চলতি ২০২২ সালের অক্টোবর মাস শেষে চিনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ অনেকটাই হ্রাস পেয়ে ৩.০৫২ ট্রিলিয়ন ডলার বা বা ৩০৫২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। অথচ গত ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩.২১৮ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ২০২১ সালের আগস্ট মাস শেষে ৩.২৩২ ট্রিলিয়ন ডলারের ফরেন কারেন্সির রিজার্ভ নিয়ে দেশটি সবার উপরে থাকে।

দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ করোনা মহামারির মধ্যেও বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলেও ২০২২ সালে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেকটাই সংকুচিত হয়ে আসে। রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২২ সালের ২৮শে অক্টোবর ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের স্থিতির পরিমাণ ছিল ৫৩১.০৮ বিলিয়ন ডলার। যেখানে গত ২০২১ সালের ২৯শে অক্টোবরে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ ৬৪২.০১৯ বিলিয়ন ডলার এবং গত ২০২০ সালের ৪ই সেপ্টেম্বর ভারতের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের স্থিতির পরিমাণ ছিল ৫৪২.০১৩ বিলিয়ন ডলার। তবে রিজার্ভের পরিমাণ কিছুটা হ্রাস পেলেও সার্বিকভাবে দেশটি অর্থনিতি এখনো পর্যন্ত স্থিতিশীল ও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, গত ৯ই নভেম্বর বুধবার বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৪.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই মজুত থেকে বিভিন্ন ফান্ডে বরাদ্দ দেয়া ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে যা থাকে সেটিই হচ্ছে নেট রিজার্ভের পরিমাণ। ফলে আইএমএফ এর রক্ষণশীল রিজার্ভ নীতি অনুসরণ করে বর্তমানে বাংলাদেশের নেট রিজার্ভের পরিমাণ হয় ২৬.৩ বিলিয়ন ডলার। যদিও গত ২০২১ সালের অক্টোবর মাস শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৪৬.৪৬ বিলিয়ন ডালার ছিল এবং ২০২১ সালের ২৪শে আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলারের রিজার্ভের পরিমাণ ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৪৮.০৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়।

স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২ সালের ৪ই নভেম্বরে পাকিস্তানের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা স্থিতির পরিমাণ মাত্র ৭.৯৫৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। যা গত ২০২১ সালের আগস্ট মাস শেষে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল সর্বোচ্চ ২৭.০৬৮ বিলিয়ন ডলার এবং গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ছিল ২৫.৯৮৩ বিলিয়ন ডলার। তবে প্রকাশ থাকে যে, পাকিস্তানের ডলার রিজার্ভের ৬৫% পর্যন্ত কিন্তু দাঁড়িয়ে আছে বৈদেশিক ঋন ও অনুদানের ওপর নির্ভর করে। অথচ অন্যদিকে দেশটির বৈদেশিক ঋন ও দেনার পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলতি ২০২২ সালের জুন মাসে ১৩০.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। যেখানে কিনা করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালের ৩০শে জুন দেশটির মোট বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ ছিল ১১৩ বিলিয়ন ডলার।

তাছাড়া সারা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্জনকারী দেশ হিসেবে এশিয়ার আরেক ইকনোমিক জায়ান্ট জাপানের নাম সবার উপরে উঠে এসেছে। ২০২২ সালের ৩১অক্টোবরের হিসাব অনুযায়ী জাপানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের স্থিতির পরিমাণ ছিল ১.১৯৫ ট্রিলিয়ন ডলার। তাছাড়া বিশ্বের সর্বোচ্চ তৃতীয় বৈদেশিক মুদ্রা মজুতকারী দেশ হিসেবে ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডের কাছে ২০২২ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বরে ৮৯২.১ বিলিয়ন ডলারের সুবিশাল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকে। তবে ইউকীপিডিয়ায় বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২২৯.১৬ বিলিয়ন ডলার।

চলতি ২০২২ সালের অক্টোবর মাসের হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দিক দিয়ে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা দেশগুলোর মধ্যে যথাক্রমে তাইওয়ানের ৫৪২.৮ বিলিয়ন ডলার, রাশিয়ার ৫৪১.৬ বিলিয়ন ডলার, সৌদি ৪৬২.৯ বিলিয়ন ডলার, হংকং এর ৪১৯.২ বিলিয়ন ডলার, দক্ষিণ কোরিয়ার ৪১৬.৮ বিলিয়ন ডলার সিঙ্গাপুরের ২৮৬.০৭ বিলিয়ন ডলার এবং জার্মানির ২৮১.২৬ বিলিয়ন ডলারের ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ মজুত ছিল। তবে চলমান বৈশ্বিক মহামন্দা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দুই একটি দেশ ব্যাতিত অধিকাংশ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আশাঙ্কাজনক হারে হ্রাস পেয়েছে।

এদিকে ২০২২ সালের আগস্ট মাসের হিসেব অনুযায়ী এরদোয়ানের দেশ তুরস্কের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১০৭ বিলিয়ন ডলার। যেখানে তুর্কী সেন্ট্রাল ব্যাংকে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১২১.৮৪ বিলিয়ন ডলার (বৈদেশিক মুদ্রা ও সোনার রিজার্ভ) এবং ২০২১ সালের আগস্ট মাসের শেষে দেশটির ভান্ডারে কাছে ১১৭.৮ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেখানো হয়। তবে তুরস্কের আনাদুলু নিউজ এজেন্সির দেয়া তথ্যমতে, তুরস্কের সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলিয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে মোট বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ ছিল ৪৪৪.৪ বিলিয়ন ডলার।

তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলংকার অবস্থা একেবারেই তলানিতে নেমে গেছে। দেশটি কার্যত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সংকটের মুখে পাহাড় সমান বৈদেশিক ঋন ও দেনার পরিশোধের সকল ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। চলতি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে শ্রীলংকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল মাত্র ১.৬ বিলিয়ন ডলার এবং গত সেপ্টেম্বর মাসে তা ছিল ১.৭ বিলিয়ন ডলার। অথচ ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল কিনা প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার। আর বর্তমানে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ কিনা প্রায় ৫০.৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গেছে।

সিরাজুর রহমান (Sherazur Rahman), সহকারী শিক্ষক এবং লেখক, সিংড়া, নাটোর, বাংলাদেশ। sherazbd@gmail.com

BySherazur Rahman

নজিরবিহীন ক্ষতির মুখে রাশিয়ার বিমান বাহিনীঃ

গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ পেন্টাগন ঘোষণা দেয় যে, আমেরিকা নতুন করে ইউক্রেনকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার অস্ত্র সহায়তা প্যাকেজের আওতায় সারফেস টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম দিতে যাচ্ছে। মুলত ইউক্রেনের আকাশে রাশিয়ার মিসাইল, ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান কার্যকরভাবে ধ্বংস করার জন্য এই মিসাইল সিস্টেম দিবে আমেরিকা। চলতি ২০২২ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সামরিক আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেনকে রক্ষায় এ পর্যন্ত ১৮.৬ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে আমেরিকা একাই।

এদিকে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর তরফে জানানো হয়েছে যে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত তারা নাকি রাশিয়ার ২৭৭টি যুদ্ধবিমান, ২৫৮টি হেলিকপ্টার এবং ১,৪৫০টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির কমব্যাট ও রিকন ড্রোন ধ্বংস করেছে। যদিও ইউক্রেনের দেয়া এই তথ্যটি মোটেও সঠিক নয়। মুলত পশ্চিমা অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা পেতে ইউক্রেন সরকার কার্যত এই যুদ্ধকে ঘিরে ব্যাপক মাত্রায় প্রোপাগাণ্ডা চালিয়ে যাচ্ছে।

অবশ্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একাধিক গবেষণামুলক প্রতিষ্ঠান ও থিংক ট্যাংকের দেয়া তথ্যমতে, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত ২৫শে অক্টোবর পর্যন্ত রাশিয়ার এ পর্যন্ত মোট ৬৩টি যুদ্ধবিমান, ৫৭টি হেলিকপ্টার এবং ১৪৩টি কমব্যাট ড্রোন ধ্বংস হয়েছে। তাছাড়া খুব সম্ভবত আরও ৫টি যুদ্ধবিমান ও একটি সামরিক পরিবহন বিমান কমব্যাট মিশন পরিচালনা করা অবস্থায় নিজে নিজেই ক্রাস করেছে।

এদিকে ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত প্রায় এক দশকের ভয়াবহ আফগান যুদ্ধে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মোট ২৭৮টি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়েছিল। সেখানে ইউক্রেনে মাত্র ৮ মাসের যুদ্ধে রাশিয়ার প্রায় ১২০টি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস হওয়াকে রাশিয়ার জন্য নজিরবিহীন ক্ষতি হিসেবে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সামরিক বিশেষজ্ঞরা।

চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিমান বাহিনীর সবচেয়ে এডভান্স এসইউ-৩৪ বোম্বার বা গ্রাউন্ড এ্যাটাক ফ্যাসালিটির যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে মোট ১৭টি। তার পাশাপাশি এসইউ-৩০এসএম সিরিজের যুদ্ধবিমান ১২টি এবং এসইউ-৩৫ ফ্ল্যাংকার-এফ সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটার ধ্বংস হয়েছে মাত্র ১টি। তবে একক এরিয়াল সিস্টেম হিসেবে রাশিয়ার বিমান বাহিনীর কেমভ কে-৫২ কমব্যাট হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়েছে প্রায় ২৩টি। তাছাড়া এমআই-২৮ এ্যাটাক হেলিকপ্টার ৮টি এবং এমআই-২৪/৩৫ এ্যাটাক হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়েছে মোট ৯টি। যদিও এই তথ্য উপাত্ত যুক্তিসঙ্গত কারণে বাস্তবে অনেকটাই কম বা বেশি হতে পারে।

আসলে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রায় ৪ হাজারের অধিক যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার, বোম্বার বিমান এবং অন্যান্য এরিয়াল সিস্টেম থাকা সত্ত্বেও রাশিয়া আজ অব্ধি ইউক্রেনের আকাশে বড় ধরণের প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। তাই এ যুদ্ধে আপাতত রাশিয়ার সাফল্য একেবারেই নগন্য বলা চলে।

Sherazur Rahman