তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি জে-৬০০টি থান্ডারবোল্ট (Yıldırım IV) সিরিজের মিসাইল হচ্ছে একটি নতুন প্রজন্মের কনভেনশনাল ওভারহেড সমৃদ্ধ মিডিয়াম রেঞ্জের ব্যালিস্টিক মিসাইল। এটি মুলত ম্যানুফ্যাকচারিং করে তুর্কী ডিফেন্স সিস্টেম ম্যানুফ্যাকচারিং জায়ান্ট রকেট সান কোম্পানি। এটিকে মুলত শত্রু পক্ষের হাই-ভ্যালু টার্গেট যেমন সামরিক স্থাপনা, সি৩আই কমান্ড সেন্টার, লজিস্টিক এন্ড ইনফ্যারাস্টাকচার ফ্যাসালিটি ধ্বংস করার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।
জে-৬০০টি (Yıldırım IV) থান্ডারবোল্ট ব্যলেস্টিক মিসাইলের সর্বোচ্চ রেঞ্জ ২,৫০০ কিলোমিটার। এটি এখনো পর্যন্ত গবেষণা ও উন্নয়নের চূড়ান্ত স্তরে রয়েছে। আসলে ২.১ টন ওজনের এই ব্যালেস্টিক মিসাইলের দৈর্ঘ্য ৬.১ মিটার এবং ডায়ামিটার ৬০ সেন্টিমিটার। এর গতি সুপারসনিক এবং এটি একটি ৪৮০ কেজি ওজনের হাই এক্সপ্লুসিভ কনভেনশনাল ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।
গাইডেন্স সিস্টেম হিসেবে এটিতে ইন্টারনাল এণ্ড অপ্টিক্যাল গাইডেন্স সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। জে-৬০০টি থান্ডারবোল্ড ব্যালেস্টিক মিসাইলের মোট ৪টি সিরিজের ৩টি সর্ট রেঞ্জের (এসআরবিএম) এবং ১টি মিডিয়াম রেঞ্জের (এমআরবিএম) মিসাইল তৈরি করে তুরস্কের রকেটসান কোম্পানি।
তুরস্কের সামরিক বাহিনী ২০০১ সাল থেকে জে-৬০০টি সিরিজের শর্ট রেঞ্জের ব্যালেস্টিক মিসাইল অপারেট করলেও তাদের সর্বশেষ সিরিজের ২,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার জে-৬০০টি (Yıldırım IV) থান্ডারবোল্ট ব্যলেস্টিক মিসাইল এখনো পর্যন্ত কিন্তু সার্ভিসে আসেনি।
প্রতিটি জে-৬০০টি সিরিজের ব্যালেস্টিক মিসাইলের ব্যাটারিতে থাকে ১টি কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল যান, ২টি ফায়ারিং টিম কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল যান, ৬টি এফ-৬০০টি লাউঞ্জার ভিকলস, ৭টি এফ-৬০০টি রিলোড এবং রিসাপ্লাই ভিকলস এবং ১টি মেইন্টেনেন্স ভিকল।
বর্তমানে সার্ভিসে থাকা শর্ট রেঞ্জের জে-৬০০টি এর (ইলড্রিম-১) সিরজের রেঞ্জ ১৫০ কিলোমিটার, (ইলড্রিম-২) সিরিজের রেঞ্জ ৩০০ কিলোমিটার এবং ইলড্রিম-৩ সিরজের রেঞ্জ ৯০০ কিলোমিটার। গ্রীসের সাথে চলমান সামরিক উত্তেজনা ও বিরোধের মুখে তুর্কী সামরিক বাহিনী খুব দ্রুতই তার মিডিয়াম রেঞ্জের জে-৬০০টি ইলড্রিম-৪ সিরিজের ২,৫০০ কিলোমিটার পাল্লার ট্যাকটিক্যাল ব্যালেস্টিক মিসাইল (এমআরবিএম) ২০২২ সালের শেষের দিকে সার্ভিসে আনতে কাজ করে যাচ্ছে।
১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের আগে থেকেই ভারত অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তাদের বিশ্ব মানের অটোমোবাইলস ব্রান্ড এবং গ্রুপ অব কোম্পানি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দেশ ভাগের আগেই ১৯৪৫ সালে ভারতের বিখ্যাত অটোমোবাইলস কোম্পানি বাজাজ অটো লিমিটেড কোম্পানি গঠিত হয়। এই কোম্পানির ২০২২ সালে ৪.৩ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন।
আবার হিরো মোটোক্রোপ লিমিটেড (Hero MotoCorp Limited) বা হিরো হোন্ডা ম্যানুফযাকচারিং কোম্পানি হিরো মটোক্রোপ লিমিটেড ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্টা করা হয় এবং প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে প্রায় ৪.১ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন করে।
ভারতের মাহিন্দ্রা এন্ড মাহিন্দ্রা লিমিটেড ১৯৪৫ সালে গঠিত হয় এবং এই কোম্পানিটি ২০২১ সালে ৯.৭ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন করে এবং এর মোট সম্পদের পরিমাণ ১৬৭ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে ভারতের টাটা গ্রুপের অঙ্গ সংস্থা টাটা মটোরস আজ থেকে ৭৭ বছর আগে ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটি ২০২১ সালে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন করে এবং তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪৫ বিলিয়ন ডলার। যদিও অবশ্য ২০২১ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী মূল কোম্পানি টাটা গ্রুপের মোট মার্কেট ক্যাপিটাল ভেলু ৩১৪ বিলিয়ন ডলার এবং টাটা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২২ অর্থ বছরে মোট ১৪৮ বিলিয়ন ডলারের রেভিনিউ অর্জন করেছে।
প্রথম দিকে ভারতের এই অটোমোবাইলস কোম্পানিগুলো জাপানসহ বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তি নিয়ে এস্যাম্বি করলেও বর্তমানে তারা কিন্তু একেবারে দেশীয় প্রযুক্তিতে শতাধিকের উপর মডেল বা সিরিজের লাক্সজারিয়াস কার, মোটোরসাইকেল, সিএনজি অটোরিক্সা, ট্রাক ম্যানুফযাকচারিং করে এবং সারা বিশ্বে রপ্তানি করে। আর আটোমোবাইলস সেক্টরে ভারতের এই বিশাল অর্জন এমনি এমনি চলে আসেনি। এর পেছনে রয়েছে বেসরকারি খাতের বিপুল বিনিয়োগ, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন।
এদিকে আমাদের দেশের রানার অটোমোবাইলস লিমিটেড ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০২১ সালে এই কোম্পানির নিট রেভিনিউ আনুমানিক ২২০ মিলিয়ন ডলার। এটা অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। তবে বাংলাদেশের বেশকিছু অটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পনি ইলেক্ট্রিক মোটর চালিত ই-বাইক বাজারে আনলেও এর প্রযুক্তি সহ সবকিছুই কিন্তু চীন থেকে নিয়ে এসে এসেম্বল করে থাকে। এতে করে কোম্পানিগুলো কিছুটা মুনাফা অর্জন করলেও কিন্তু মূল লাভের অংশটা শেষমেশ চলে যাচ্ছে চীনের পকেটেই।
এখানে বুঝতে হবে বর্তমানে অটোমোবাইলস সেক্টরে আমাদের দেশীয় প্রযুক্তি বা নিজস্ব ব্রান্ড বলতে আসলে কিছুই নেই। সবই হচ্ছে রেড জায়ান্ট চীনের যাদুর বদৌলতে। এদিকে ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আমাদের দেশের প্রগতি অটোমোবাইলস লিমিটেড জাপানসহ অন্যান্য দেশ থেকে ইমপোর্ট করে আনা গাড়ির যন্ত্রাংশ সংযোজন করত এবং এখনো পর্যন্ত সেই একই কাজ করে যায়। তারা কিন্তু গবেষণা করে আজো নিজস্ব ব্রান্ডের কার বাজারে এনে প্রযুক্তিগত সক্ষমতার পরিচয় জাতির কাছে তুলে ধরতে পারেনি।
তবে খুব ধীরে হলেও আমাদের দেশে নিজস্ব প্রযুক্তি এবং ব্যান্ডের বিশ্ব মানের অটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরিতে দেশীয় এবং বিদেশী প্রতিষ্ঠাগুলো বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন। বিশেষ করে আমাদের দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ থাকায় জাপান এবং মালয়েশিয়ার অটোমোবাইলস কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তাদের ম্যানুফযাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব প্রতিষ্ঠায় প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই আমাদের অবশ্যই এসব বৈদেশিক বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি প্রাপ্তির সুযোগগুলোকে সর্বোচ্চভাবে কাজে লাগাতে হবে এবং পর্যায়ক্রমে অটোমোবাইলস ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরে স্বনির্ভরতা অর্জনের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না।
তবে বর্তমানে বাংলাদেশের পিএইচপি অটোমোবাইলস কোম্পানি লিমিটেড মালেয়শিয়ার সাথে যৌথভাবে লাক্সারী গাড়ি উৎপাদন বা এসেম্বলী প্লান্ট সাফল্যের সাথে চালু করেছে। ২০২২ সাল নাগাদ তাদের স্থাপিত ভারি অটোমোবাইল এসম্বলী প্লান্টে বছরে গড়ে ১,২০০ গাড়ি উৎপাদনের ব্যাপক লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে আমাদের দেশের স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান পিএইচপি গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পিএইচপি অটোমোবাইলস লিমিটেড। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের সোনার বাংলাদেশকে গাড়ি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করতে এক রকম বদ্ধপরিকর হয়েই কাজ করে যাচ্ছে পিএইচপি গ্রুপ।
জাপানের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের তাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এণদ ম্যানুফ্যাকচারিং হাবগুলো চীন থেকে সরিয়ে অন্যান্য বন্ধুভাবাপন্ন দেশগুলোতে নতুন করে স্থাপন করার মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে শুরু করে দিয়েছে। আর এই বৈদেশিক বিনিয়োগের ১০% হলেও বাংলাদেশে নিয়ে আসার বড় ধরণের সুযোগ রয়েছে। তবে এজন্য আমাদের অবশ্যই দক্ষ জনশক্তি এবং ইতিবাচক বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করে আগে থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।
গত ২৮শে জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের বিমান বাহিনীর একটি মিগ-২১ প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান আকাশেই ক্রাস করে। মুলত রাজস্থানের উতরলাই বিমান ঘাঁটি থেকে মিগ-২১ এর দুই আসনের প্রশিক্ষণ বিমানটি উড্ডয়ন করে এবং রাত ৯টা ১০ মিনিটের দিকে বারমারের কাছে বিমানটি ক্রাস করে। এই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা দুইজন পাইলট মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ২৮শে জুলাই পর্যন্ত মোট ২০টি যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য এরিয়াল সিস্টেম ধ্বংস বা ল্যাণ্ডিং ক্রাস করে গ্রাউণ্ডেড হয়ে পড়ে রয়েছে। তাছাড়া ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের সামরিক বাহিনীর সম্মানিত প্রধান বিপনি রাওয়াতসহ ১১ জন উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা হেলিকপ্টার দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলে ভারতের সামরিক বাহিনীর এরিয়াল অপারেটিং সিস্টেম ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে সারা বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে যায়।
এভাবে প্রতিনিয়নত নন কমব্যাট মিশনে ভারতের বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস কিংবা ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিশ্বের উদীয়মান পরাশক্তি রেড জায়ান্ট চীনকে আকাশ পথে দাপটের সাথে আদৌ মোকাবেলা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রবল আশাঙ্খা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সামরিক বিশ্লেষকেরা।
ভারতের সামরিক বাহিনীর সার্বিক এরিয়াল সিস্টেম রিপিয়ার, মেইন্টেনেন্স, সার্ভিসিং এণ্ড ম্যানেজমেন্টের সমন্বয়হীনতা বা দূর্বলতা বারা বার বিশ্বের সামনে ফুটে উঠলেও এ নিয়ে ভারতের সরকারের তরফে বড় ধরণের দৃশ্যমান কোন কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ে না।
এক পরিসংখ্যানের হিসেব মতে ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ভারতের তিন বাহিনীর আনুমানিক তিন শতাধিকের উপর জেট ফাইটার, হেলিকপ্টার, পরিবহণ এবং সামরিক প্রশিক্ষণ বিমান আকাশেই ক্রাস বা একেবারে ধ্বংস কিম্বা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দীর্ঘ মেয়াদে গ্রাউণ্ডেড হয়ে পরে রয়েছে। আর শুধুমাত্র ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৫টি এরিয়াল সিস্টেম ক্রাস বা ধ্বংস হয়। যদিও প্রকৃত সংখ্যা কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।
অবশ্য ২০০০ সাল থেকে আজ অব্ধি ভারতের মোট প্রায় ৮২টি ফ্লাইং কফিন খ্যাত মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান আকাশেই ধ্বংস হয়েছে। আর এভাবে নন কমব্যাট বা প্রশিক্ষণ মিশনে সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার দূর্ঘটনায় শতাধিক উচ্চ মেধাবী পাইলট এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অফিসার ও সেনা মৃত্যুরবরণ করলেও তা বন্ধে কিংবা প্রতিরোধে ভারতের সরকারের তরফে তদন্ত কমিটি গঠন করা ছাড়া আর তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে বলে মনে হয় না।
ভারতের বিমান বাহিনীতে বর্তমানে ফাস্ট স্টাইক ক্যাপাবিলিটির যুদ্ধবিমান হিসেবে এসইউ-৩০ এমকেআই হেভী যুদ্ধবিমান রয়েছে ২৭২টি এবং এডভান্স রাফাল রয়েছে ৩৬টি। তাছাড়া মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ৬৫টি, মিরেজ-২০০০ গ্রাউন্ড এ্যাটাক ফ্যাসালিটির যুদ্ধবিমান ৫১টি, জাগুয়ার ১৩০টি এবং অতি পুরনো মিগ-২১ যুদ্ধবিমান রয়েছে ১২৭টি। অবশ্য ভারতের নৌবাহিনীতে ক্যারিয়ার বেসড মিগ-২৯কে যুদ্ধবিমান রয়েছে মোট ৩৬টি।
এদিকে ভারত তার বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে গেলেও ব্যাপক দূর্নীতি, সমন্বয়হীনতা এবং অর্থ অপচয়ের কবলে বিমান বাহিনীর সার্বিক আধুনিকায়ন এবং শক্তিশালীকরণ অনেকটাই মুখ থুবরে পড়েছে। যদিও ভারতের সরকার ও তার নিয়ন্ত্রিত অধিকাংশ মিডিয়ায় এ নিয়ে টু শব্দটি পর্যন্ত করতে চায় না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আকাশ পথে পাকিস্তান ও চীনের যৌথ সামরিক আগ্রাসন প্রতিহত করাটা বেশ কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একেবারে ব্রান্ড নিউ ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান, ৩১টি হাল তেজাস, ২২টি এ্যাপাচী এএইচ-৬৪ কমব্যাট হেলিকপ্টার এবং ১২টি পি-৮ আই নেপচুন এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফার বিমান ব্যাতিত এক বিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অত্যাধুনিক আর কোন এরিয়াল সিস্টেম ভারতের বিমান কিংবা নৌ বাহিনীতে সংযোজন করা সম্ভব হয়নি।
ভারতের বিমান ও নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণহীন ও বিপদজনকভাবে বিমান ধ্বংস বা দূর্ঘটনা চলতে থাকলে এবং ঠিক একই সময়ে এর বিপরীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক জেট ফাইটার সার্ভিসে আনা সম্ভব না হলে ২০২৫ সালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হাতে থাকা এয়ার ফ্লীট ৩০ স্কোয়াডন এর নিচে নেমে যাওয়ার প্রবল আশাঙ্খা থেকেই যাচ্ছে। যা অদূর ভবিষ্যতে ভারতের বিশ্ব পরাশক্তি হওয়া তো দূরের কথা আপদকালীন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রেড জায়ান্ট চীনের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যাচ্ছে। Sherazur Rahman
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফে দাবি করা হয়েছে যে, গত ২৪শে ফেব্রুয়ারী থেকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ২৮শে জুলাই পর্যন্ত ইউক্রেন সামরিক বাহিনীর ২৬০টি যুদ্ধবিমান, ১৪৫ হেলিকপ্টার, ১,৬২৫টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির কমব্যাট এণ্ড ননকমব্যাট ড্রোন, শর্ট এন্ড মিডিয়াম রেঞ্জের ৩৫৯টি এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ধ্বংস করেছে।
তাছাড়া তারা ৪,১৭২টি ট্যাংক, আর্টিলারী সিস্টেম এবং সামরিক যান, ৭৬৪টি (এমএলআরএস) মাল্টিপল রকেট লঞ্চার ধ্বংস করেছে। তাছাড়া হুইটজার, মর্টার এবং বিভিন্ন ধরণের পারসোনাল ভিকলস বা সামরিক যান ধ্বংস করেছে প্রায় ৪,৫১৫টি।
তবে মজার বিষয় হলো যে, রাশিয়া কিন্তু এখনো পর্যন্ত তাদের সামরিক বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে কোন ধরণের তথ্য উপাত্ত মিডিয়ার সামনে উপস্থাপন করেনি। তবে রাশিয়ার তরফে প্রকাশ করা না হলেও রাশিয়া এ পর্যন্ত আনুমানিক ১৩৮টি এ্যাটাক এবং সামরিক পরিবহণ হেলকপ্টার হারিয়েছে বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে। তাছাড়া রাশিয়ার প্রায় অর্ধ শতাধিক যুদ্ধবিমানও কিন্তু ধ্বংস হয়েছে এই অসম যুদ্ধে।
এমনকি তাদের সুপার এডভান্স এসইউ-৩৪ ফুলবাক মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে কমপক্ষে ৮টি। এদিকে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়া তাদের বুড়ো মামা টিইউ-৯৫ বিয়ার বোম্বার ধ্বংস হওয়ার ভয়ে উড্ডয়ন একেবারেই বন্ধ করে রেখেছে।
আবার ইউক্রেন এন্টিশীপ মিসাইল দিয়ে রাশিয়ার নৌবাহিনীর গর্ব মাস্কাভা ব্যাটল ক্রুজার ধ্বংস করে ডুবিয়ে দিলেও তা নিয়ে রাশিয়ার মিডিয়ায় টু শব্দটি পর্যন্ত করা হয়নি। রাশিয়া কিন্তু ইতোমধ্যেই খুব সম্ভবত তিন হাজারের কাছাকাছি ট্যাংক, সামরিক যান, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, ব্যক্তিগত সামরিক যান হারিয়েছে। যার সঠিক তথ্য উপাত্ত জানার বা নিরপেক্ষ সূত্রে প্রমান করার কোন উপায় নেই। আর এখানে যে পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়েছে তা যৌক্তিকভাবে সঠিক নাও হতে পারে।
রাশিয়া ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের ২০% ভূমি দখল করে নিলেও ইউক্রেনের মতো একেবারেই দূর্বল সামরিক ক্ষমতার দেশে সামরিক আগ্রাসন চালাতে গিয়ে যেভাবে নিজেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তা কিন্তু একটি নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে রয়ে যাবে।
মনে রাখতে হবে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের হাজার হাজার সেনা ও বেসামরিক নাগরিক মারা গেলেও তার পাশাপাশি যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার নিজের হাজার হাজার সেনা মারা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর এই অতি স্পর্শকাতর বিষয়টি অত্যন্ত কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে রাশিয়ার পুতিন প্রশাসন। Sherazur Rahman
তুরস্ক সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নতুন করে ৪০টি লকহিড মার্টিন নির্মিত সিঙ্গেল ইঞ্জিনের এফ-১৬ ব্লক-৭০/৭২ ভাইপার জেট ফাইটার কেনার প্রবল আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে মার্কিন আইন প্রণেতারা একটি আইন অনুমোদন করেছে, যা ভবিষ্যতে তুরস্কের কাছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এফ-১৬ ফাইটার জেট বিক্রির পরিকল্পনায় বড় ধরণের বাধার সৃষ্টি করতে পারে। তুরস্কের বিরুদ্ধে আনীত নিউ জার্সির আইনপ্রণেতা ফ্রাঙ্ক প্যালোন প্রস্তাবিত সংশোধনীটি কংগ্রেসে ২৪৪-১৭৯ ভোটে পাস হয়। তাছাড়া মার্কিন আইন প্রণেতারা নিশ্চয়তা চান যে তুরস্ককে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দেয়া হলেও তা ভবিষ্যতে মার্কিন শিবিরের বন্ধুভাবাপন্ন দেশ গ্রীসের বিরুদ্ধে কখনো ব্যবহার করা হবে না।
মুলত রাশিয়া থেকে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের তীব্র বিরোধিতা করে মার্কিন প্রশাসন গত ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল এফ-৩৫ জয়েন্ট স্টাইক ফাইটার প্রোগ্রাম থেকে তুরস্ককে চূড়ান্তভাবে বাদ দেয়। ১.৫৩ ট্রিলিয়ন ডলারের এফ-৩৫ স্টিলথ জেট ফাইটারের মাল্টিনেশন জয়েন প্রজেক্টে আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, কানাডা এবং নরওয়ের অংশিদ্বারিত্বের ভিত্তিতে ২০০৬ সালে চুক্তিবদ্ধ হয়। আর তুরস্ক এই প্রজেক্টে অংশগ্রহণ করে ২০০৭ সালের ২৬শে জানুয়ারি। যদিও এই প্রজেক্টে তুরস্ক ১.৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে এবং এখান থেকে ভবিষ্যতে পর্যায়ক্রমে তুরস্কের মোট ১০০টি এফ-৩৫এ সিরিজের এডভান্স স্টেলথ জেট ফাইটার ক্রয়ের কথা ছিল।
এক বিংশ শতাব্দীর ২০২২ সালে এসেও একটি শক্তিশালী সামরিক সক্ষমতা সম্পন্ন দেশ তুরস্কের বিমান বাহিনীকে মাত্র দুই ক্যাটাগরির জেট ফাইটার বা যুদ্ধবিমানের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। বর্তমানে তুরস্কের বিমান বাহিনীতে মোট ২৩৮টি এফ-১৬ সি/ডি সিরিজের ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান অপারেশনাল রয়েছে। সত্তরের দশকের পুরনো এফ-৪ ফ্যান্টম-২ রয়েছে ৪৮টি। এই দুই ক্যাটাগরির যুদ্ধবিমান ব্যাতিত ফাস্ট এ্যাটাক এরিয়াল সিস্টেম হিসেবে তুর্কী বিমান বাহিনীতে আপাতত আর কোন যুদ্ধবিমানই নেই। তাছাড়া ভবিষ্যত প্রজন্মের টিএফ-এক্স সিরিজের এডভান্স জেট ফাইটার সার্ভিসে আনতে তুরস্ককে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়ায় এবং বিশেষ করে আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তার এবং তার পাশাপাশি তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির সামরিক ও প্রতিরক্ষা সাজ সরঞ্জাম তৈরির সক্ষমতার বিষয়টিকে মোটেও সুনজরে দেখছে না মার্কিন প্রশাসন এবং তার মিত্র পশ্চিমা বিশ্ব। তাই অনেকটা ভীত হয়ে হলেও তুরস্কের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করতে উঠে পড়ে লেগেছে তারা। এখানে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের বিষয়টিকে বার বার সামনে আনা হলেও এই চক্রান্তের অংশ হিসেবে আমেরিকা বিগত কয়েক বছর আগে থেকেই কিন্তু তুরস্কে চালু থাকা এফ-১৬ ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টে চুক্তি ভঙ্গ করে হলেও ইঞ্জিন, এভিয়নিক্স, মর্ডানাইজেশন কিটস এবং রাডার সিস্টেমসহ এর মিসাইল ও অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ বা রপ্তানি সীমিত করে দেয়। এতে করে দীর্ঘদিন থেকেই তুরস্কে এফ-১৬ উৎপাদন এবং পুরনো এফ-১৬ আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া এক রকম বন্ধ হয়ে গেছে।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, তুরস্কের বিমান বাহিনীর এখনো পর্যন্ত মূল মেরুদণ্ড হচ্ছে আমেরিকার এফ-১৬ ব্লক-৪০/৫০ ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান। দেশটি কার্যত এফ-১৬ জেট ফাইটার ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ১৯৮৩ সালে। ঠিক সেই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১৩২টি এফ-১৬সি এবং ২৪টি এফ-১৬ডি সিরিজের জেট ফাইটার ক্রয়ের চুক্তি করেছিল তুরস্ক। চুক্তি অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ৮টি এফ-১৬ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি আসার কথা ছিল এবং অবশিষ্ট ১৪৮টি এফ-১৬ জেট ফাইটার আমেরিকার প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং যন্ত্রাংশ সরবরাহের মাধ্যে তুরস্কের মাটিতে তৈরি করা হবে।
চুক্তি মোতাবেক তুরস্ক এফ-১৬সি ব্লক-৩০ সিরিজের প্রথম ২টি যুদ্ধবিমান গ্রহণ করে ১৯৮৭ সালের মার্চ মাসে এবং এফ-১৬ডি সিরিজের ১টি যুদ্ধবিমান গ্রহণ করে ১৯৮৭ সালের জুলাই মাসে। তাছাড়া তুর্কী এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টিআইএ) ১৯৮৭ সাল থেকে মার্কিন যুক্ত্রাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত সহায়তায় এফ-১৬ জেট ফাইটার এসেমব্লী শুরু করে। এটা আসলে ঠিক নিজে তৈরি করা বুঝায় না বরং সকল যন্ত্রাংশ, ইঞ্জিন এবং ডিভাইসসহ সবকিছু আমেরিকা থেকে নিয়ে এসে তুরস্কে জোড়া লাগিয়ে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সংযোজন করার মতো একটা কাজ ছিল। তবে এর অল্প কিছু দিনের মধ্যে তুরস্ক আমেরিকার সাথে নতুন চুক্তির আলোকে লাইসেন্স নিয়ে তুর্কী এ্যারোস্পেস ইণ্ডাস্ট্রিজ (টিআইএ) এর এয়ারক্রাফট ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাসালিটি প্লান্টে নিজেরাই উৎপাদন শুরু করে দেয়।
১৯৮৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তুরস্ক মোট ২৭০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান তৈরি করে। যার মধ্যে ব্লক-৩০ সি/ডি সিরিজের এফ-১৬ জেট ফাইটার ৪৩টি, ব্লক-৪০ সি/ডি সিরজের এফ-১৬ জেট ফাইটার ১১৭টি এবং ব্লক-৫০ সি/ডি সিরিজের এফ-১৬ জেট ফাইটার ১১০টি। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই তুরস্ককে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকনের হাইলী আপগ্রেড ভার্সন বা ব্লক ৭০/৭২ সিরিজের যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তি সরবরাহ করেনি। অথচ এদিকে কিনা এফ-১৬ এর অত্যাধুনিক ভার্সন ব্লক-৬০ এর ই/এফ সিরিজের যুদ্ধবিমান একাই ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত।
বর্তমানে তুরস্ক এফ-১৬ জেট ফাইটারের প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ, ডিভাইস, মিসাইল, ডাটা লিংক, এয়ারফ্রেম ও সফটওয়্যার নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি করলেও এর ইঞ্জিন, রাডার, এআইএম-৭/৯ এবং এআইএম-১২০সি এয়ার টু এয়ার মিসাইল এবং এভিয়নিক্স সিস্টেম কিন্তু এখনো পর্যন্ত সেই আমেরিকা থেকে আমদানি করে চাহিদা মিটিয়ে থাকে।
তুরস্ক অবশ্য পরবর্তীতে মার্কিন বিমান বাহিনীর জন্য ৪০টি এফ-১৬ জেট ফাইটারের ডানা, ফিউসলেস তৈরির কন্ট্রাক লাভ করে এবং মার্কিন প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মিশরের বিমান বাহিনীর জন্য ৪৬টি ব্লক-৪০ সিরিজের এফ-১৬ সি/ডি সিরিজের যুদ্ধবিমান তৈরি করে দেয়।
বর্তমানে আকাশ যুদ্ধের এক গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বিয়োণ্ড ভিজুয়্যাল রেঞ্জ (বিভিআর) মিসাইল। এটি মুলত আকাশে যুদ্ধবিমানের ১০০ বছরের এয়ার টু এয়ার ডগফাইটের ধারণাটাই বদলে দিয়েছে। তার মানে আকাশে শত্রু পক্ষের যুদ্ধবিমানকে না দেখেই নিদিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে এখন বিভিআর মিসাইল দিয়ে ধ্বংস করা সম্ভব।
আর এয়ার টু এয়ার (বিভিআর) মিসাইলের সবচেয়ে কার্যকর ব্যবহার হতে পারে স্টেলথ যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে। প্রতিটি এয়ার টু এয়ার মিসাইলের একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জ থাকে। যে রেঞ্জে থেকে ফায়ার করলে আকাশে টার্গেট মিস করার কোনো সুযোগ থাকে না, তাকেই কার্যত মিসাইলের No Escape Zone (NEZ) বলে।
৪ ম্যাক গতির মেটওর (বিভিআর) এয়ার টু এয়ার মিসাইলের ম্যাক্সিমাম রেঞ্জ ১১০ কিলোমিটার হলেও এর নো স্কেপ জোন ক্যাপাবিলিট হচ্ছে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার। আধুনিক যুগের যুদ্ধবিমানগুলোতে রাডার লক নোটিফিকেশনের জন্য অত্যাধুনিক আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম এবং ধেয়ে আসা মিসাইল শনাক্তের জন্য মিসাইল ওয়ার্নিং রিসিভার থাকে।
এর ফলে হামলার শিকারের সম্ভাবনা দেখা দিলেই বিমানের পাইলট মিসাইলকে ফাঁকি দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হিসেবে জ্যামার সিস্টেম ব্যবহারের পাশাপাশি নিজস্ব প্রতিরক্ষা হিসেবে চ্যাফ, ফ্লেয়ার এবং ডিকয় ব্যবহার করে থাকেন।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, আকাশে সরাসরি স্টেলথ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা করা হলে ফলাফল কিন্তু হবে একেবারে ভিন্ন। স্টেলথ টেকনোলজির সুবিধা নিয়ে পাইলট তার মিসাইলের নো এস্কেপ জোনের অনেকটা ভেতরে প্রবেশ করে কিংবা যত সম্ভব কাছাকাছি গিয়ে রাডার লক করে (বিভিআর) অথবা অন্যান্য সাধারণ মিসাইল দিয়ে ফায়ার করবে। এতে মিসাইলের হাত থেকে শত্রু বিমানের বাঁচার সম্ভাবনা কিন্তু একেবারে কমে যায়।
তাছাড়া স্টেলথ টেকনোলজির যুদ্ধবিমানের রাডার ক্রস সেকশন (আরসিএস) খুবই কম থাকায় অন্য যুদ্ধবিমানের রাডারে এবং ল্যাড বেসড এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের রাডারে সনাক্ত করার সম্ভবনা খুবই কম থাকায় আকাশ যুদ্ধে এই নতুন প্রযুক্তির এরিয়াল সিস্টেম বড় ধরণের সুবিধা আদায় করে নিবে।
মার্কিন এফ-২২ স্টিলথ জেট ফাইটারের আরসিএস মাত্র ০.০০০১ থেকে ০.০০০২ এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের আরসিএস ০.০০১৫ পার স্কয়ার মিটার। যেখানে ভারতের এসইউ-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমানের (আরসিএস) ১.০ থেকে ৩.৫ এবং এডভান্স রাফাল জেট ফাইটারের আরসিএস ০.৫ থেকে ২.০ পার স্কয়ার মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনে রাশিয়া তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি অত্যাধুনিক ৯ ম্যাক গতি সম্পন্ন এয়ার লঞ্চড বেসড ‘কিনঝান’ হাইপারসনিক ব্যালেস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করে। যার গতি ছিল কিনা অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাক ৯ বা ১১,১৮৩ কিলোমিটার। মুলত হাইপারসনিক গতি সম্পন্ন নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল কেএইচ-৪৭এম২ ‘কিনঝাল’ এয়ার লঞ্চড বেসড ব্যালেস্টিক মিসাইলটিকে সামরিক বিশ্লেষকেরা রাশিয়ার ‘ডুমসডে ওয়েপনস’ বা ‘ধ্বংসের অস্ত্র’ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। আর মনে করা হচ্ছে বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার ‘কিনঝাল’ ব্যালেস্টিক মিসাইল হামলার মাধ্যমে বিশ্ব নতুন এক হাইপারসনিক মিসাইল প্রতিযোগিতার যুগে প্রবেশ করল।
রাশিয়া মুলত চলতি ২০২২ সালের ১৮ই মার্চ প্রথম বারের মতো মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান থেকে ‘কিনঝাল’ হাইপারসনিক মিসাইল ইউক্রেনে নিক্ষেপ করে। তাছাড়া গত ১১ই এপ্রিল টিইউ-২২ বোম্বার এয়ারক্রাফট থেকে আবারো ইউক্রেনের পোর্ট সিটি ওডেসায় ৩টি এই জাতীয় মিসাইল হীট করে রাশিয়ার বিমান বাহিনী। তব বিশ্বের কিছু দেশ হাইপারসনিক প্রযুক্তি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করে গেলেও বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া ব্যাতিত আর কোন দেশই সরাসরি এর ব্যবহার বা প্রয়োগ করতে পারেনি।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, আকাশে উড্ডয়মান উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের গতি মাপার ক্ষেত্রে কিলোমিটার কিংবা মাইল এর বদলে ব্যবহার করা হয় ‘ম্যাক’ নামে একটি বিশেষ পরিমাপক। মুলত ১.০ ম্যাক মানে শব্দের সমান গতি ও দুরুত্ব। ১.০ ম্যাক মানে প্রতি ঘণ্টায় ৭৬৭ মাইল বা ১,২৪২.৫৪ কিলোমিটার গতি। সে হিসেবে বিবেচনা করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকবার্ড বিমানের গতি ছিল প্রতি ঘন্টায় ২,১৯৩ মাইল বা ৩,৫২৯ কিলোমিটার কিংবা ৩.২ ম্যাক গতি।
অবশ্য বিমান কিংবা মিসাইল সিস্টেম বায়ুমন্ডলে যতই উপরে উঠবে, সেক্ষেত্রে তাপমাত্রা ততই কমে যাবে। এজন্য ১৩.৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১,২২৫ কিলোমিটার/ঘন্টা গতিকে আদর্শ মান ১.০ ম্যাক গতি ধরা হয়। যা সকল যুদ্ধবিমান, ড্রোন কিংবা মিসাইলের উপর কমনভাবে প্রযোজ্য। যদি ০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ম্যাক ১.০ গতি অর্জন করতে হলে সেক্ষেত্রে আকাশ যানটিকে ১,১৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় উড়তে হবে। এদিকে শব্দের চেয়ে কমপক্ষে ৫ গুণ বেশি দ্রুত গতি সম্পন্ন মিসাইল কিংবা এরিয়াল সিস্টেমের গতিকে হাইপারসনিক গতি বলা হয়। এক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টায় ৩,৮৩৬ মাইল বা ৬,২১৪.৩২ কিলোমিটারের বেশি দ্রুত গতি অর্জন করলে তাকে সাধারণত হাইপারসনিক গতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
বর্তমানে উচ্চ প্রযুক্তির হাইপারসনিক গতির মিসাইল সিস্টেম ডিজাইন এণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষা রাশিয়া এবং চীন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। তবে অনেকটা দেরিতে হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাইপারসনিক গতির ওয়েপন্স গবেষণায় ব্যাপকভাবে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমেরিকা নতুন প্রজন্মের হাইপারসনিক প্রযুক্তি অর্জনে সাম্প্রতিক সময়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে।
বিশ্বের বুকে মাত্র তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন কার্যকরভাবে হাইপারসনিক প্রযুক্তি ডিজাইন, আয়ত্ত ও ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সেই কাতারে গবেষণার একেবারে প্রাথমিক স্তরে হলেও গোটা ইউরোপকে পেছনে ফেলে এবার চতুর্থ দেশ হিসেবে হাইপারসনিক গতির প্রতিযোগিতায় ভারত তার নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে। ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ এণ্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সফলভাবে তাদের হাইপারসনিক টেকনোলজি ডেমোস্ট্রেটর ভ্যাসেলস (এইচএসটিডিভি) পরীক্ষা সম্পন্ন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়।
চীন ডিজাইন করেছে উচ্চ প্রযুক্তির এয়ার লঞ্চড বেসড (আনুমানিক ১০.০ ম্যাক গতির) সিএইচ-এএস-এক্স-১৩ হাইপারসনিক মিসাইল সিস্টেম। রাশিয়া ‘কিনঝাল’ মিসাইলের পাশাপাশি সাবমেরিন এবং ব্যাটল শীপ থেকে নিক্ষেপ করা যায় এমন অত্যন্ত শক্তিশালী হাইপারসনিক গতির ‘জিরকন/সিরকন’ ক্রুজ মিসাইল তৈরি করেছে। ১,০০০ কিলোমিটার রেঞ্জের স্ক্যামজেট ইঞ্জিন চালিত রাশিয়ার ‘জিরকন/সিরকন’ ক্রুজ মিসাইলের সর্বোচ্চ গতি ৯.০ ম্যাক বা ১১,০২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা হবে।
তবে বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রচার করে যে, তাদের ভবিষ্যতের তৈরি গ্লাইড বডি (সি-এইচজিবি) সিস্টেমের গতি হবে কিনা অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় ১৭.০ ম্যাক বা তার কাছাকাছি। আমেরিকার এই প্রজেক্টে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলেও এটি এখনো পর্যন্ত ডেভলপমেন্টের পর্যায়ে রয়ে গেছে। আমেরিকা অবশ্য চলতি ২০২২ সালেই তাদের তৈরি ম্যাক ৫-৬ গতির এবং ১ হাজার মাইল পাল্লার এজিএম-১৩৮এ এয়ার লঞ্চড র্যাপিড রিসপন্স ওয়েপন্স (এআরআরডাব্লিউ) মিসাইলের বেশকিছু সফল পরীক্ষা সম্পন করেছে। এই জাতীয় হাইপারসনিক মিসাইলের মূল বৈশিষ্ট্য হলো যে, এটিকে বর্তমানে প্রচলিত থাকা কোন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দ্বারা প্রতিহত করার সম্ভবনা বা সুযোগ একেবারে নেই বললেই চলে।
বর্তমানে বিশ্বের বুকে সার্ভিসে থাকা উচ্চ প্রযুক্তির এবং সর্বাধুনিক মিনি এয়ার ক্রাফট ক্যারিয়ার (এম্ফিবিয়াস এসাল্ট শীপ) হিসেবে মার্কিন নেভীর ইউএসএস আমেরিকা (এলএইচএ-৬) এর পাশাপাশি ফ্রান্সের তৈরি মিস্ত্রাল ক্লাস (এম্ফিবিয়াস এসাল্ট শীপ) কে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে বর্তমানে ৩টি অত্যাধুনিক মিস্ত্রাল ক্লাস (এম্ফিবিয়াস এসাল্ট শীপ) বা হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার অপারেশনাল রয়েছে। তবে বর্তমানে ফ্রান্সের বাহিরে একেবারে ব্রাণ্ড নিউ ২টি এই জাতীয় মিনি ক্যারিয়ার ব্যবহার করে যাচ্ছে একমাত্র দেশ মিশর।
মুলত ২০১০ সালে ফ্রান্সের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি ২১,৫০০ টন ওজনের অত্যাধুনিক মিস্ত্রাল ক্লাস (এম্ফিবিয়াস এসাল্ট শীপ) ২টি হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার ক্রয়ের জন্য রাশিয়ার সাথে ফ্রান্সের আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রাথমিকভাবে এই দুটি মিস্ত্রাল ক্লাস হেলিকপ্টার ক্যারিয়ারের মুল্য নির্ধারণ করা হয় ১.৩৭ বিলিয়ন ইউরো এবং এই হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার ক্রয় বাবদ রাশিয়া আগেই ৮৪.০০ কোটি ইউরো ফ্রান্সকে অগ্রিম প্রদান করে দেয়।
আসলে ১০,৮০০ কিলোমিটার রেঞ্জের মিস্ত্রাল ক্লাস এম্ফিবিয়াস এস্যাল্ট শিপের ভিতর ৭০টি সামরিক যান ও হেভী ট্যাংকসহ এর ডেকের উপর ১৬টি হেভী হেলিকপ্টার বা ৩৫টি লাইট হেলিকপ্টার বহণ করার বিশেষ উপযোগী করে ডিজাইন করেছে ফ্রান্স। তার পাশাপাশি বিভিন্ন মেয়াদে এতে প্রায় ১,৫০০ জনের কাছাকাছি অফিসার, ক্রু এবং নাবিক অবস্থান করতে পারেন। এটি মুলত ম্যানুফ্যাকচারিং করে সাউথ কোরিয়ান শিপবিল্ডিং কোম্পানি এসটিএক্স ইউরোপ এবং ফ্রান্সের নেভাল গ্রুপ ডিসিএনএস Direction des Constructions Navales (DCNS)।
তবে ২০১৩-১৪ সালের দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৪ সালের মার্চ মাসে রাশিয়ার উপর বেশকিছু অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে আটকে যায় এই চুক্তি। যার ফলস্রুতিতে ন্যাটোজোট ভুক্ত রাষ্ট্রের চাপে ফ্রান্স রাশিয়ার কাছে অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারবাহী রণতরী সরবরাহ সাময়িকভাবে স্থগিত করে দেয় ফ্রান্সের সরকার। তবে পরবর্তীতে পূর্ব ইউক্রেনে বিদ্রোহীদের সাথে ইউক্রেনের সরকারি সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হলে ফ্রান্স এক রকম বাধ্য হয়েই রাশিয়ার নিকট এই মিনি হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার বিক্রির পরিকল্পনা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে দেয়। তার সাথে আগে থেকে মিস্ত্রাল ক্লাস ক্যারিয়ারের জন্য রাশিয়ার সরবরাহ করা বিশেষ প্রযুক্তি এবং ডিফেন্স সিস্টেম ফেরত পাঠিয়ে দেয় ফ্রান্স।
অন্যদিকে এই বিশেষ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়ার জন্য তৈরিকৃত একেবারে নতুন দুটি মিস্ত্রাল ক্লাস এম্ফিবিয়াস এসাল্ট শিপ ২০১৫ সালে অনেকটাই কম মূল্যে ৯৬০ মিলিয়ন ইউরো বা ১.০৬২ বিলিয়ন ডলার মূল্যে এবং সহজ শর্তে কিনে নেয় মিশর। এতে আবার ব্যাবহার করার জন্য মিশর সেই রাশিয়া থেকেই ক্যারিয়ার বেসড এডভান্স কে-৫২ এ্যাটাক হেলিকপ্টার ক্রয় করে। তাছাড়া মিস্ত্রাল ক্লাস ক্যারিয়ার সরবরাহ নিয়ে রাশিয়ার সাথে বিবাদ এঁরাতে রাশিয়ার আগের অগ্রীম দেয়া ৮৪.০০ কোটি ইউরোসহ ক্ষতিপূরণবাবদ মোট ১.০০ বিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করে ফ্রান্স।
এদিকে ২০১৫ সালের মিশরের আত ফাত্তা আল সিসি সরকার ফরাসী প্রশাসনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় ২টি মিস্ত্রাল ক্লাস হেলকটার ক্যারিয়ার মাত্র ৯৬০ মিলিয়ন ইউরো বা ১.৩২ বিলিয়ন ডলার মূল্যে প্রশিক্ষণ ও লজিস্টিক সাপোর্টসহ নতুন করে ক্রয়ের চুড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন করে নেয়। আর পরিকল্পনা মাফিক গামেল আব্দেল নাসের নামে প্রথম হেলিকপ্টার ক্যারিয়ারটি ২রা জুন ২০১৬ সালে এবং আনোয়ার আল সাদাত নামে দ্বিতীয় ক্যারিয়ারটি ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে মিশরের নৌবাহিনীতে কমিশনিং লাভ করে।
তবে প্রকাশ থাকে যে, এই দুটি মিস্ত্রাল ক্লাস হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার ক্রয়ের সম্পূর্ণ অর্থ কিংবা অংশিক বড় অংশ সৌদি আরবের প্রিন্স ক্রাউন মোহাম্মদ বিন সালমান গোপনে পরিশোধ করেছিলেন বলে খবর রটে যায়। যদিও এ সংক্রান্ত তথ্যের বাস্তব কোন ভিত্তি আছে বলে মনে হয় না।
বর্তমানে সারা বিশ্বে সার্ভিসে থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী ট্যাংকের মধ্যে একেবারে ব্যাটল প্রুভ মেইন ব্যাটল ট্যাংক হিসেবে আমেরিকার তৈরি আব্রামস এম১, যুক্তরাজ্যের চ্যালেঞ্জার এবং রাশিয়ার টি-৯০ ট্যাংকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। তবে বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার বিচারে আমেরিকার আব্রামস এম১ সিরিজের ট্যাংক কিন্তু সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।
সারা বিশ্বে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এম১ আব্রামস এর একাধিক সিরিজের ৮,৮৪৮টি মেইন ব্যাটল ট্যাংক অপারেট করে। তারপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে মিশরের সেনাবাহিনী ১,৩৬০টি এম১ আব্রামস সিরিজের মেইন ব্যাটল ট্যাংক অপারেট করে। এখনে প্রকাশ থাকে যে, মিশর কিন্তু আমেরিকা থেকে লাইসেন্স নিয়ে তার নিজ দেশেই এই ট্যাংক ম্যানুফ্যাকচারিং করে এবং তাদের সবগুলো আব্রামস ট্যাংক এখনো পর্যন্ত সার্ভিসে রয়েছে।
তাছাড়া সৌদি আরবের সেনাবাহিনী বর্তমানে মোট ৫৫৫টি এই জাতীয় ট্যাংকের একেবারে আপগ্রেড ভার্সন আব্রামস-এম১এ২এস সিরিজের মেইন ব্যাটল ট্যাংক অপারেট করছে। সৌদি আরব চলতি ২০২২ সালের শুরুর দিকে একেবারে ব্রান্ড নিউ ১৩৩টি আব্রামস-এম১এ২এস সিরিজের মেইন ব্যাটল ট্যাংক হাতে পেয়েছে এবং আগে থেকে সার্ভিসে থাকা ৪২২টি এম১এ১ আব্রামস মেইন ব্যাটল ট্যাংকগুলোকে বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে নতুন মডেলের এম১এ২এস ক্যাটাগরিতে আপগ্রেড করে নিয়েছে। যদিও ২০১৫ সাল থেকে চলমান ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের ২০টি এই জাতীয় ট্যাংক ধ্বংস হয়ে যায়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ডায়নামিক্স ল্যাণ্ড সিস্টেমের ডিজাইনকৃত বিশ্বের সেরা এম১এ২এস আব্রামস মেইন ব্যাটল ট্যাংকটি লিমা আর্মি ট্যাংক প্লান্টে ম্যানুফ্যাকচারিং করা হয়। এর উৎপাদন শুরু হয় ১৯৭৯ সালে এবং ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ১০,৪০০টি বিভিন্ন সিরিজের এই জাতীয় ট্যাংক তৈরি করেছে আমেরিকা। ৪ জন ক্রু দ্বারা চালিত এই ট্যাংকের দৈর্ঘ্য ৩২.৪ ফুট, প্রস্থ ১২ ফুট এবং উচ্চতা ৮ফুট। ৬৩ টন ওজনের এম১এ২এস আব্রামস মেইন ব্যাটল ট্যাংকের সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ৬৮ কিলোমিটার এবং এর রেঞ্জ ৪২৫ কিলোমিটার।
শক্তি যোগানোর জন্য এটিতে একটি ১,৫০০ হর্স পাওয়ারের হানিওয়েল এটিজি-১৫০০ মাল্টি-ফুয়েল গ্যাস টারবাইন ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এটি একসাথে ১,৯০৯ লিটার জ্বালানী বহন করে এবং গযাস টার্বাইন ইঞ্জিন হওয়ায় এটি ডিজেল, পেট্রোল, গ্যাসোলিন, কেরোসিন, অকটেনসহ রাস্তার যে কোন ধরণের জ্বালানী ব্যবহার করে চলতে পারে।
আমেরিকার তৈরি অত্যন্ত শক্তিশালী এই ট্যাংকের প্রধান অস্ত্র হিসেবে ১২০ এমএম এম২৫৬এ১ স্মুথবোর মেইন গান ব্যবহার করা হয়েছে। যা কিনা অত্যন্ত কার্যকরভাবে ৪ কিলোমিটার দুরুত্ব পর্যন্ত গোলা ফায়ার করতে সক্ষম। তাছাড়া সেকেন্ডারি অস্ত্র হিসেবে একটি ০.৫০ ক্যালিবারের ১২.৭ এমএম এম২এইচবি হেভি মেশিনগান রয়েছে। তাছাড়া জেনারেল পারপজ বা প্রাথমিক অস্ত্র হিসেবে ১টি ৭.৬২ এমএম এম২৪০ কক্সিল লাইট মেশিনগান এবং ১টি মাউণ্টেড ৭.৬২ এমএম মেশিনগান (১০,৪০০ রাউণ্ড বুলেট) ইন্সটল করা হয়েছে।
এই মেইন ব্যাটল ট্যাংকের বডিতে শক্তিশালী কম্পোজিট আর্মোর থাকায় এটিকে সাধারণ মানের কোন আরপিজি-৭ রকেট লাঞ্চার বা এটিজিএম দিয়ে বড় ধরণের ক্ষতি করাটা এক কথায় অসম্ভব। তাছাড়া এটিতে উন্নত এ্যালিসন ডিডিএ এক্স-১১০০-৩বি সিরিজের টান্সমিশন ব্যবহার করা হয়েছে।
বর্তমানে সারা বিশ্বে সার্ভিসে থাকা ৩য় ও ৪র্থ প্রজন্মের মেইন ব্যাটল ট্যাংকের মধ্যে এম১ আব্রামস সিরিজের ট্যাংকের যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা সবচেয়ে বেশি বলেই মনে করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ১৯৮০ সালে এই ট্যাংক সার্ভিসে আনে। ১৯৯১ সালে ইরাকের কুয়েত আগ্রাসন (পার্সিয়ান গলফ ওয়ার), আফগানিস্থান ওয়ার, ইরাক ওয়ার, ইজিপ্টিয়ান সিভিল ওয়ার, ইয়েমেন সিভিল ওয়ারে ব্যবহার করা হয়েছে।
সৌদি আরবের এক ছোট্ট মেয়ে রিতাজ হুসাইন আল-হাজমি (Ritaj Hussain Al-Hazmi) সিরিজ উপন্যাস লিখে গিনিজ ওয়াল্ড রেকর্ডে সবচেয়ে অল্প বয়স্ক উপন্যাসিক হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছেন। গিনিজ ওয়াল্ড রেকর্ডে নাম লেখার সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর ২৯৫ দিন। বর্তমানে তার বয়স ১৪ বছর। তার নিজের লেখা ইংরেজি উপন্যাসগুলো হচ্ছে, ‘ট্রেজার অব দ্যা লস্ট সী’, পোর্টাল অব দ্যা হাইডেন ওয়াল্ড’ এবং ‘বিয়োন্ড দ্যা ফিউচার ওয়াল্ড’। বর্তমানে ১৪ বছরের এই কিশোরী ৬ বছর বয়স থেকে শর্ট নোট, ডায়রী এবং ছোট গল্প লেখার মাধ্যমে লেখালিখির যাত্রা শুরু করেন। ১০ বছর বয়সে তার প্রথম ইংরেজি উপন্যাস ‘ট্রেজার অব দ্যা লস্ট সী’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। তাছাড়া রিতাজের লেখা ‘পোর্টাল অব দ্যা হাইডেন ওয়াল্ড’ প্রকাশিত হয় ২০২০ সালে এবং ‘বিয়োন্ড দ্যা ফিউচার ওয়াল্ড’ প্রকাশিত হয় ২০২১ সালে। সাম্প্রতিক সময়ে সে তার চতুর্থ ইংরেজি উপন্যাস ‘দ্যা প্যাসেজ টু দ্যা আননোন’ লেখা সমাপ্ত করেছেন। বর্তমানে সে ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ‘দ্যা ডে বিফোর ২০৫০’ নামক নতুন উপন্যাস লেখা চালিয়ে যাচ্ছেন।