গত ২৮শে জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে ভারতের বিমান বাহিনীর একটি মিগ-২১ প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান আকাশেই ক্রাস করে। মুলত রাজস্থানের উতরলাই বিমান ঘাঁটি থেকে মিগ-২১ এর দুই আসনের প্রশিক্ষণ বিমানটি উড্ডয়ন করে এবং রাত ৯টা ১০ মিনিটের দিকে বারমারের কাছে বিমানটি ক্রাস করে। এই দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা দুইজন পাইলট মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ২৮শে জুলাই পর্যন্ত মোট ২০টি যুদ্ধবিমান, হেলিকপ্টার এবং অন্যান্য এরিয়াল সিস্টেম ধ্বংস বা ল্যাণ্ডিং ক্রাস করে গ্রাউণ্ডেড হয়ে পড়ে রয়েছে। তাছাড়া ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতের সামরিক বাহিনীর সম্মানিত প্রধান বিপনি রাওয়াতসহ ১১ জন উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা হেলিকপ্টার দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করলে ভারতের সামরিক বাহিনীর এরিয়াল অপারেটিং সিস্টেম ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে সারা বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে যায়।
এভাবে প্রতিনিয়নত নন কমব্যাট মিশনে ভারতের বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস কিংবা ক্ষতিগ্রস্থ হতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিশ্বের উদীয়মান পরাশক্তি রেড জায়ান্ট চীনকে আকাশ পথে দাপটের সাথে আদৌ মোকাবেলা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রবল আশাঙ্খা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সামরিক বিশ্লেষকেরা।
ভারতের সামরিক বাহিনীর সার্বিক এরিয়াল সিস্টেম রিপিয়ার, মেইন্টেনেন্স, সার্ভিসিং এণ্ড ম্যানেজমেন্টের সমন্বয়হীনতা বা দূর্বলতা বারা বার বিশ্বের সামনে ফুটে উঠলেও এ নিয়ে ভারতের সরকারের তরফে বড় ধরণের দৃশ্যমান কোন কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ে না।
এক পরিসংখ্যানের হিসেব মতে ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ভারতের তিন বাহিনীর আনুমানিক তিন শতাধিকের উপর জেট ফাইটার, হেলিকপ্টার, পরিবহণ এবং সামরিক প্রশিক্ষণ বিমান আকাশেই ক্রাস বা একেবারে ধ্বংস কিম্বা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দীর্ঘ মেয়াদে গ্রাউণ্ডেড হয়ে পরে রয়েছে। আর শুধুমাত্র ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৫টি এরিয়াল সিস্টেম ক্রাস বা ধ্বংস হয়। যদিও প্রকৃত সংখ্যা কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে।
অবশ্য ২০০০ সাল থেকে আজ অব্ধি ভারতের মোট প্রায় ৮২টি ফ্লাইং কফিন খ্যাত মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান আকাশেই ধ্বংস হয়েছে। আর এভাবে নন কমব্যাট বা প্রশিক্ষণ মিশনে সামরিক বিমান ও হেলিকপ্টার দূর্ঘটনায় শতাধিক উচ্চ মেধাবী পাইলট এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অফিসার ও সেনা মৃত্যুরবরণ করলেও তা বন্ধে কিংবা প্রতিরোধে ভারতের সরকারের তরফে তদন্ত কমিটি গঠন করা ছাড়া আর তেমন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে বলে মনে হয় না।
ভারতের বিমান বাহিনীতে বর্তমানে ফাস্ট স্টাইক ক্যাপাবিলিটির যুদ্ধবিমান হিসেবে এসইউ-৩০ এমকেআই হেভী যুদ্ধবিমান রয়েছে ২৭২টি এবং এডভান্স রাফাল রয়েছে ৩৬টি। তাছাড়া মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ৬৫টি, মিরেজ-২০০০ গ্রাউন্ড এ্যাটাক ফ্যাসালিটির যুদ্ধবিমান ৫১টি, জাগুয়ার ১৩০টি এবং অতি পুরনো মিগ-২১ যুদ্ধবিমান রয়েছে ১২৭টি। অবশ্য ভারতের নৌবাহিনীতে ক্যারিয়ার বেসড মিগ-২৯কে যুদ্ধবিমান রয়েছে মোট ৩৬টি।
এদিকে ভারত তার বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে গেলেও ব্যাপক দূর্নীতি, সমন্বয়হীনতা এবং অর্থ অপচয়ের কবলে বিমান বাহিনীর সার্বিক আধুনিকায়ন এবং শক্তিশালীকরণ অনেকটাই মুখ থুবরে পড়েছে। যদিও ভারতের সরকার ও তার নিয়ন্ত্রিত অধিকাংশ মিডিয়ায় এ নিয়ে টু শব্দটি পর্যন্ত করতে চায় না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আকাশ পথে পাকিস্তান ও চীনের যৌথ সামরিক আগ্রাসন প্রতিহত করাটা বেশ কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
২০১২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত একেবারে ব্রান্ড নিউ ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান, ৩১টি হাল তেজাস, ২২টি এ্যাপাচী এএইচ-৬৪ কমব্যাট হেলিকপ্টার এবং ১২টি পি-৮ আই নেপচুন এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফার বিমান ব্যাতিত এক বিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অত্যাধুনিক আর কোন এরিয়াল সিস্টেম ভারতের বিমান কিংবা নৌ বাহিনীতে সংযোজন করা সম্ভব হয়নি।
ভারতের বিমান ও নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণহীন ও বিপদজনকভাবে বিমান ধ্বংস বা দূর্ঘটনা চলতে থাকলে এবং ঠিক একই সময়ে এর বিপরীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক জেট ফাইটার সার্ভিসে আনা সম্ভব না হলে ২০২৫ সালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হাতে থাকা এয়ার ফ্লীট ৩০ স্কোয়াডন এর নিচে নেমে যাওয়ার প্রবল আশাঙ্খা থেকেই যাচ্ছে। যা অদূর ভবিষ্যতে ভারতের বিশ্ব পরাশক্তি হওয়া তো দূরের কথা আপদকালীন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রেড জায়ান্ট চীনের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যাচ্ছে।
Sherazur Rahman